অনলাইনে প্রকাশিত চিন্তা-ভাবনা সমগ্র
সহজ জীবন - ২
মানুষ (ব্যক্তিগত জীবনে) সবচাইতে বেশী শত্রু তৈরি করে কারো ভালো চাইতে গিয়ে।
তাহলে কি আপনি ভালো চাওয়া বাদ দিবেন?
না, আপনাকে ভালো চাওয়ার সেই পদ্ধতি শিখতে হবে যেটাতে মানুষ আপনাকে শত্রু/ক্ষতিকর না ভাবতে পারে। এই পদ্ধতি শিখতে না পারলে মানুষের ভালো চাওয়া বাদ দেয়াই ভালো। কারণ এই 'ভালো' চাওয়াতে ভালোর চাইতে খারাপ বেশী।
শত্রুমুক্ত সহজ জীবন চাইলে ভালো চাওয়ার বিষয়ে আপনাকে সচেতন হতে হবে।
আমার প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো হসপিটালের ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার বানানোর মাধ্যমে। প্রথম সফটওয়্যারটা বানিয়েছিলাম একটা হাসপাতালে বসে। ওখানে আমার জন্য একটা রুম বরাদ্দ ছিলো। আর যে ডাক্তার আংকেলের হাসপাতালের সফটওয়্যার বানাচ্ছিলাম, তাঁর একটা গবেষণায় সাহায্য করার জন্য একটা এনালাইসিস টুলও বানাচ্ছিলাম যেটার জন্য উনার ব্যাক্তিগত প্রাকটিস চেম্বারে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতে হয়েছে। রোগীর চাপ একটু কমে আসলেই টুলটা ডেভেলপের জন্য উনার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ইনপুট আর দিকনির্দেশনা নিতাম। তো, খোদ ডাক্তারের চেম্বারে দীর্ঘদিন সময় কাটানোর দরুন বাংলাদেশের রোগীদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিলো। এছাড়াও পরবর্তী ৫/৬ বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই হসপিটাল সিস্টেম ডেভেলপ, সাপোর্ট দিতে গিয়ে আরো অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- এই দেশে অল্প কিছু খারাপ ডাক্তারের পাশাপাশি অনেক ভালো ডাক্তার আছে। আর আছে অসংখ্য বিবেকহীন মূর্খ রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজন।
ঢাকার কয়েকটা দামী হাসপাতাল বাদ দিলে, বাংলাদেশের বেশির ভাগ হাসপাতাল/ক্লিনিকের রোগীদের ভেতরে শতকরা ৯০ ভাগ রোগী এবং রোগীর আত্মীয় স্বজনরা ডাক্তারদের সাথে অন্যায় ভাবে খারাপ ব্যবহার করে। আর ডাক্তাররা যে কতটা ধৈর্য নিয়ে রোগী ও রোগীদের আত্মীয় স্বজনদের অত্যাচার/খারাপ ব্যবহার সহ্য করে, বলার মত না। সামান্য ২০০-৫০০ টাকা ভিজিট দিয়ে বেশির ভাগ মানুষই ভাবে ডাক্তার সাহেবকে তিনি কিনে ফেলেছেন। সবচাইতে বিরক্তিকর ব্যপার হচ্ছে ডাক্তারদের উপরে ডাক্তারী। অনেক রোগী দেখেছি, যাদের আসলেই কোন সমস্যা ছিলো না। ডাক্তার তাদেরকে সেটা বললে তারা চেম্বার থেকে অর্ধেক বের হয়েই ডাক্তারকে গালাগালি শুরু করতো আর বলতো- 'এই ডাক্তার ভালা না, অমুক ডাক্তারের কাছে যাইতে হইবো'। এটা নাকি বেশ কমন ঘটনা... তাই ডাক্তাররা বাধ্য হয়েই অনেক রোগীকে ফলস ঔষধ দিয়ে থাকে (যেটা আসলে কোন ঔষধই না)। অনেক ক্ষেত্রে একজন ডাক্তার ভালো মানুষ হওয়ার পরেও খামোখাই নানারকম টেস্ট দিতে বাধ্য হয়, নয়তো রোগীর লোকজন ভাবে এই ডাক্তার কিছু জানে না।
সবচাইতে খারাপ ব্যপার হচ্ছে- ডাক্তারদের সঠিক চিকিৎসার পরেও কোন রোগী মারা যাওয়ার পর আত্মীয় স্বজনদের ভুল চিকিৎসার অপবাদ দেয়া। এই সমস্যাটা ঢাকার অনেক নামীদামী হাসপাতালে অনেক শিক্ষিত ও উচ্চবিত্তদের ভেতরেও দেখেছি। বেশ কয়েকবার আমার সামনেই রোগীর প্রভাবশালী আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতাল ভাংচুর করেছে।
অনেক সময় এরকম হয় যে- রোগীর বাঁচার আশা খুবই ক্ষীণ! স্পেশাল কিছু ট্রিটমেন্ট আছে যেটা দিলে বাঁচতেও পারে, আবার নাও পারে। ডাক্তাররা দ্রুত সেই ট্রিটমেন্ট দিয়ে ফেলেন। এতে কেউ কেউ বেঁচে যায়, অনেকেই মারা যায়। কিন্তু রোগীর আত্মীয় স্বজনদের বেশির ভাগই এই ব্যপারটা বুঝতে চায় না, তারা হাসপাতাল আর ডাক্তারদের দায়ী করে বসে। কয়েকদিন আগে গাজীপুরো এরকম একটা ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডাক্তার আর ওয়ার্ড বয়কে পুলিশ দিয়েই ধরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছে রোগীর প্রভাবশালী আত্মীয়। ওখানে যে ট্রিটমেন্টটা দেয়া হয়েছিলো সেটা নিয়ে বেশ কয়েকজন ডাক্তার বন্ধুর সাথে কথা বললাম। সকলেই বললেন- ট্রিটমেন্ট ভুল ছিলো না।
রোগীর আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতাল ভাংচুর বা অন্য কোন ক্ষতি করলে সেটা হাসপাতাল মালিকরা পুষিয়ে নিতে পারে। কিন্তু যদি সরাসরি এর জন্য ডাক্তারদের এভাবে হয়রানী করা হয় সেটা খুব দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ব্যপার। একই সাথে ভবিষ্যতে রোগীদেরও এর ফল পেতে হবে। কারণ, এরকম ঘটনার ফলে কোন ডাক্তার আর ওধরনের লাইফ সেভিং রিস্ক নিতে যাবে না। ফলশ্রুতিতে, আপনার আমার আত্মীয় স্বজনদের ভেতরে যারা এরকম জীবন-মরনের মাঝখানে পড়ে যাবে, তাদের বেঁচে ফেলার হার শূন্যে নেমে আসবে।
সুতরাং ঐ অন্যায় গ্রেফতারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন বন্ধুগন। ডাক্তারদের প্রতি সহানুভূতি না থাকলেও, নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও করুন।
মুভিটা দেখেছি গতকাল রাতে। একবার একা পুরোটা দেখার পর Farah সহ আরেকবার পুরোটা দেখলাম। ভালো মুভি। মুভিটাতে যে ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা বলা হয়েছে সেরকম কিছু হওয়ার সম্ভবনা খুব একটা আছে বলে মনে হয় না, তবে এতে কোন সন্দেহ নাই যে মানুষ শেষ পর্যন্ত আবার কৃষি কাজেই ফিরে যাবে বা যেতে হবে। কৃষি হচ্ছে আমাদের সভ্যতার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন জিনিষ, যদিও কৃষকদেরকে আমরা সবচাইতে কম মূল্যায়ণ করি।
Interstellar মুভিতে যে খাদ্য সংকটের বিপর্যয় দেখানো হয়েছিলো এই বিপর্যয় পুরো পৃথিবীতে কখনো না আসলেও বাংলাদেশ কিন্তু এরকম একটা বিপর্যয়ের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। দেশের প্রতিটা বাজারে গেলে আপনি প্রচুর খাদ্যদ্রব্য দেখতে পাবেন ঠিকই, কিন্তু এগুলোকে আসলে খাবার বলাটা ঠিক হবে না। কৃষি জমি বিষাক্ত হওয়া থেকে শুরু করে প্রসেসিং এর সময়ে মেশানো ভেজালের পরিমান বাড়তে বাড়তে আমাদের দেশের খাদ্যদ্রব্য এখন আর খাওয়ার উপযোগী নেই। ইদানিং প্রায়ই ভাবছি গ্রামের দিকে প্রচুর জমি কিনে একটা খামার বাড়ি তৈরির কথা। এখন পর্যন্ত উচ্চমূল্যে অর্গানিক ফুড পাওয়া যাওয়াতে উচ্চবিত্তরা কিছুটা নিরাপদে আছে, কিন্তু এটা বেশিদিন থাকবে না। Interstellar মুভিটার মত আমাদের দেশে খাওয়ার উপযোগী শস্য ফুরিয়ে আসছে। এখন হয় এই দেশ থেকে পালাতে হবে নয়তো গ্রামের দিকে গিয়ে খামার বাড়ি তৈরি করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিডনি ড্যামেজ আর ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে হবে।
বিপদটা কিন্তু Interstellar মুভির চাইতেও ভয়াবহ।
বড় একটা প্রজেক্ট শেষ করার পর আমি সাধারণত একটা ব্রেক নেই। ঐ সময়টাতে বই পড়া, নতুন কিছু শেখা আর মুভি দেখার পাশাপাশি একজন বা দুইজন স্টুডেন্ট নেই। মূলত অনলাইন স্টুডেন্ট নেই যাদেরকে স্কাইপ আর টিমভিউয়ার দিয়ে ডেটাবেস, প্রোগ্রামিং বেসিকস, পিএইচপি বা এধরনের কিছু শেখাই। আমার জন্য এটা নিজেকে ইনস্পায়ার করা, শেখার আগ্রহ বাড়ানোর পাশাপাশি চমৎকার কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে, উপরি পাওনা হিসেবে একজন মানুষের উপকারও করা হলো। তো এই স্টুডেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে বেশ কিছু জিনিয়াসের সন্ধান আমি পেয়েছি যারা দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে না জন্মালে অবশ্যই গুগল বা মাইক্রোসফটে কাজ করতো বলে আমি বিশ্বাস করি। তো এরকম এক জিনিয়াস এক সফটওয়্যার কোম্পানীতে জয়েন করেছে যেখানে তার মেধার মূলায়ণ হচ্ছে না ঠিকমত উলটো খামোখা ঝাড়ি খেতে হচ্ছে এবং কোম্পানীর টপ ম্যানেজমেন্টের কাছে তার সম্পর্কে ভুল রিপোর্ট দিয়ে প্রমোশন আটকে রেখেছে। আমার কাছে জানতে চাইলো তার এখন কি করা উচিত। আমি যে পরামর্শটা তাকে দিলাম সেটা সম্ভবত আরো অনেকের কাজে লাগতে পারে ভেবে সবার উপযোগী করে এখানে শেয়ার করলাম-
আপনি যখন কোন কোম্পানিতে কাজ করবেন তখন আপাতদৃষ্টিতে সেই কোম্পানীর জন্য খেটে মরছেন মনে হলেও বাস্তবে আপনি আসলে নিজের স্কিল ও অভিজ্ঞতা বাড়াচ্ছেন। যারা আরেকজনের কোম্পানীর জন্য খেটে কি হবে ভেবে কাজে ফাঁকি দেয় তারা মূলত নিজেকেই ফাঁকি দিলো। কারণ, কোম্পানী আপনাকে মূল্যায়ণ করুক আর না করুক যে কাজ আপনি শিখছেন যে অভিজ্ঞতা আপনি অর্জন করছেন সেটা তো শুধু আপনারই থাকবে। কেউ আপনার কাছ থেকে আপনার স্কিল আর অভিজ্ঞতা চুরি করে নিয়ে যেতে পারবে না।
অনেক কোম্পানী থাকতে পারে যেখানে আপনার যথার্থ মূলায়ণ হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে কোম্পানীটা থেকে যতদিন আপনি শিখতে পারবেন ততদিন সেখানে অবশ্যই থাকবেন। এই শেখার স্কোপ যদি দুই বছরের আগে শেষ হয়ে যায় তবুও আপনি সেখানে থাকবেন। দুই বছরের নিচে কোন কোম্পানীতে কাজ করা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর। হয় প্রথম মাসেই চাকুরি ছেড়ে দিবেন অথবা কমপক্ষে দুই বছর থাকবেন, এটা হচ্ছে আপনার প্রতি আমার উপদেশ। আর কোন কোম্পানীতে যদি দুই বছরের কম সময় চাকুরী করেন সেটা কখনো রিজিউমিতে উল্লেখ করবেন না।
একটা কোম্পানীতে যদি কাজের পরিবেশ অনেক খারাপ থাকে এবং চরম মাত্রায় পলিটিক্স থাকে সেটা আপনার না, ঐ কোম্পানীর দুর্ভাগ্য। আপনার জন্য বরং বিষয়টা বোনাস অভিজ্ঞতা বয়ে আনবে, আপনি শিখে যাবেন কিভাবে নোংরা পলিটিক্স এড়িয়ে কাজ করে যাওয়া যায়, নিজেকে ডেভেলপ করা যায়।
অনেক কোম্পানী আছে যেখানকার ম্যানেজম্যান্ট দুর্বল হওয়ার কারণে কাজের তেমন চাপ থাকে না, দুইদিনের কাজ একসপ্তাহের জন্য এসাইন করা হয়। এরকম পরিবেশের সুযোগ যদি আপনি গ্রহণ করেন তাহলে আপনি যতটা না কোম্পানীকে ঠকালেন তারচাইতে বেশি নিজেকে ঠকালেন। কারণ এর পরে আপনি যে কোম্পানীতে যাবেন সেখানকার পরিবেশ ওরকম ঢিলা নাও হতে পারে। অথবা কখনো আপনি নিজের কোম্পানী শুরু করার পর এই ঢিলামি আপনার ভেতরে থেকে যাবে যা একটা স্টার্টাপের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
মূল কথা হচ্ছে, অনেক উপরে উঠতে চাইলে কাজকে ভালবাসতে হবে। আপনার মূল্যায়ণ করবেন আপনি নিজে, অন্য কেউ আপনাকে কিভাবে দেখছে তাতে কিছু যায় আসে না।
আরেকটা জিনিষ যেটা খুব গুরুত্বপূর্ন- কখনো কোম্পানী সুইচ করার পর আগের কোম্পানীর বদনাম করবেন না। এটা করা মানে আপনার আগের অভিজ্ঞতাটাকেই খাটো করা (এটা সম্প্রতি চাকুরি সুইচ করা এক ছোট ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললাম) :)
LOST আমার প্রিয় একটা টিভি সিরিজ। তবে লস্টের চাইতে বেশি ভালো লেগেছে The Walking Dead । এই দুইটা সিরিজেরই মূল বিষয় হচ্ছে সার্ভাইভাল। বিরুপ পরিবেশে টিকে থাকার গল্প। লস্টে দেখানো হয় বিমান দূর্ঘটনার কারণে নির্জন একটা দ্বীপে গিয়ে পড়ে আর Walking Dead-এ Zombie Apocalypse এর কারণে পৃথিবীর সমস্ত টেকনোলজি ধ্বংস। মানুষ দলবদ্ধ ভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে, ছোট ছোট গোত্রের মত তৈরি হচ্ছে। বিরুপ পরিবেশে টিকে থাকার সেকি প্রচেষ্টা...
ইউটিউবে বেশ কিছু ডকুমেন্টরি দেখেছি, পৃথিবী থেকে মানুষ সব হারিয়ে গেলে কি হবে। বা সমস্ত জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে কি হবে বা ইলেক্ট্রিসিটি আর টেকনোলজি হারিয়ে গেলে কি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে। এধরনের বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর গেমও তৈরি হয়েছে, সেগুলো আবার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সত্যিকার মানুষেরা অনলাইনে কানেক্ট করে খেলে, দল গঠন করে টিকে থাকার চেষ্টা করে। টিকে থাকার এই চেষ্টা বা সার্ভাইভাল বিষয়ক একটা সিমুলেশন গেম খেলেছিলাম- Banished, চমৎকার গেম। সভ্যতার মূল জিনিষটা ধরতে পারবেন গেমটা খেললে।
যাহোক, আসল কথায় আসি। ধরুন আজকের টেকনোলজি যদি কোন কারণে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে কি ঘটতে পারে? যেমন আজকে যে ব্লাকআউট হলো, এটা যদি কন্টিনিউ হতো? ধরুন পৃথিবীর কোন বিপর্যয়ের কারণে মাসের পর মাস ইলেকট্রিসিটি থাকলো না। ইলেক্ট্রিসিটি নেই মানে ধীরে ধীরে বাদবাকী সকল টেকনোলজিও অচল। তারপর? আপনি নিজের বাসায় জমিয়ে রাখা পানি ও খাবার দিয়ে হয়তো মাসখানেক চলতে পারলেন। অথবা ধরে নেয়া যাক আপনার বাসায় অনেক ক্যাশ টাকা রাখেন, সেগুলো দিয়ে ছয়মাসের কেনাকাটা করে ফেললেন। ছয়মাস পর? ছয় মাস পর আপনাকে পাঁচটি মৌলিক চাহিদার প্রধানতমটির (খাদ্যের) সন্ধানে ফিরে যেতে হবে গ্রামে। টিকে থাকার জন্য শুরু করতে হবে জমি চাষ করা, এর বিকল্প আর কিছু নেই।
সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই কৃষিকাজ। অথচ কৃষি সম্পর্কেই আমাদের জ্ঞান সবচাইতে কম। আর কৃষকদেরকেই আমরা সবচাইতে বেশি অবজ্ঞা করি। আহা সভ্যতা, আহা সভ্যরা...
আইটি ক্যারিয়ারের (বিশেষ করে ডেভেলপারদের বেলা) সবচাইতে আকর্ষনীয় কয়েকটা দিক হইতেসে-
১) অসৎ উপার্জন/ধান্ধাবাজী ছাড়াও প্রয়োজনের অধিক আয় করা সম্ভব, উপার্জনে সৎ পথে থাকা অনেক বেশি সহজ এখানে
২) কাজই বিনোদন, আলাদা বিনোদনের প্রয়োজন হয় না (যদি সত্যিকার অর্থে কেউ আইটি ভালোবাসে)
৩) সৃষ্টির আনন্দ আছে। কবি-সাহিত্যিকরাও সৃষ্টির আনন্দ পায় কিন্তু আইটি সৃষ্টির আনন্দ+টাকা পয়সা দুইটাই পায়, এটা অন্য কোন পেশায় এত সহজে হয় না
আইটিতে না আসলে কৃষক হইতাম, আমার ধারণা কৃষকদেরও এই তিনটা বিষয় আছে, যদি কারো চাহিদা আকাশচুম্বী না হয়...
একজন আমাকে বললেন- 'আপনি সাংবাদিক বা লেখক হলে ভালো হতো, আরো বেশি সময় দিতে পারতেন'
আমি হেসে বললাম, 'মোটেও না, বরং তখন আমাকে কলম চালাতে হতো অনেক ভেবে-চিন্তে। অনেক সত্য চেপে যেতে হতো কৌশলে, ক্যরিয়ার সুইসাইডের ভয়ে।'
মিডিয়া যাদের দখলে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে কেউ মিডিয়াতে বেশিদূর যেতে পারে না, এটা একটা নির্মম সত্য। আর ক্যারিয়ারের ঝূঁকি নিয়ে তারা সত্য বলতে যাবেই বা কেন? যাদের জন্য সত্য বলবে তাদের তো মূল্যায়ণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে, মিডিয়ার গুরুত্ব বোঝার মত ঘিলু থাকতে হবে। যারা মিডিয়ার গুরুত্ব বোঝে না তাদের পক্ষে কোন ভালো লেখক সাংবাদিক তাই যেতে চায় না, নীরবে সত্য চেপে যায়।
কিন্তু ব্লগার? তাদের ক্যারিয়ার সুইসাইডের ভয় নাই, তারা চাইলেই সত্য প্রকাশ করে দিতে পারে। এই একটা কারণে ব্লগ নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী, যদিও এখন পর্যন্ত ব্লগারদের ভেতরে বেশির ভাগই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবুও, অনেক অনেক দায়িত্বশীল ব্লগার নিশ্চয় একদিন পাওয়া যাবে।
একটা সত্য কথা কার পক্ষে যাবে বা কার বিপক্ষে যাবে এটা চিন্তা না করে লেখালেখিতে সততা শুধুমাত্র ব্লগারদের পক্ষেই দেখানো সহজ।
একটা পিঁপড়ার গল্প
প্রতিদিন সকাল সকাল ছোট্ট পিঁপড়াটি অফিসে এসেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রচুর কাজ করে সে, সময় কাটে তার চমৎকার সুখে।
অফিসের প্রধান, সিংহ অবাক হয়ে লক্ষ করে কোনো ধরণের সুপারভিশন ছাড়াই পিঁপড়া কাজ করে যাচ্ছে। সুপারভিশন ছাড়াই যদি পিঁপড়া এত কাজ করতে পারে, সিংহ ভাবে, তাহলে একজন সুপারভাইজার থাকলে তো সে আরো বেশি কাজ করতে পারবে।
সিংহ তাই তেলাপোকাকে সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দিল; সুপারভাইজার হিসেবে তেলাপোকার রয়েছে প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে এবং চমৎকার সব রিপোর্ট লেখায় তার বেশ সুনাম।
তেলাপোকার প্রথম পদক্ষেপ হলো অ্যাটেনডেন্স সিস্টেমে একটি ঘড়ির ব্যবস্থা করা। লেখার কাজে তাকে সাহায্য এবং লেখা টাইপ করার জন্য একজন সেক্রেটারিরও প্রয়োজন হলো তার।
তেলাপোকা মাকড়শাকে তার সেক্রেটারি পদে নিয়োগ দিল, যার কাজ হলো সব নথিপত্র ম্যানেজ করা এবং ফোন কল তদারক করা।
তেলাপোকার রিপোর্ট দেখে সিংহ খুব খুশি হলো। সে তেলাপোকাকে নির্দেশ দিল প্রোডাকশন হার এবং ট্রেন্ড অ্যানালাইসিসের গ্রাফ তৈরি করে দিতে যাতে সেগুলি বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থাপন করা যায়।
তেলাপোকা এ কাজের জন্য একটি নতুন কম্পিউটার এবং একটি লেজার প্রিন্টার ক্রয় করল। এবং আই.টি. ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব নেয়ার জন্য মাছিকে নিয়োগ দিল।
পিঁপড়া, একদা যে প্রচুর কাজ করত এবং হাসি খুশি ছিল, এত সব পেপারওয়ার্ক, মিটিং অপছন্দ করা শুরু করল, কারণ এগুলি তার মূল কাজের অধিকাংশ সময় নষ্ট করতে লাগলো।
সিংহ এবার সিদ্ধান্ত নিল পিঁপড়া যে ডিপার্টমেন্টে কাজ করে, তার সামগ্রিক দায়িত্ব নেয়ার জন্য কাউকে নিয়োগ দেয়া দরকার। এ কাজের ভার দেয়া হলো সিকাডা'কে, যার প্রথম কাজ হলো একটি কার্পেট এবং একটি এরগোনমিক চেয়ার কেনা।
সিকাডা'রও দরকার হলো একটি কম্পিউটার, এবং একজন ব্যক্তিগত সেক্রেটারির, যাকে সে তার আগের অফিস থেকে নিয়ে আসলো। সিকাডা বাজেট কন্ট্রোল স্ট্রাটেজিক অপটিমাইজেশন প্ল্যান এর উপর বেশ জোর দিল।
কিন্তু পিঁপড়ার ডিপার্টমেন্ট এখন একটি বিষণ্ণ জায়গায় পরিণত হলো; সেখানে কাজ করে কেউ আর হাসে না, সবারই মন ভার থাকে।
ঠিক সে মুহূর্তে সিকাডা সিংহকে বুঝালো যে একটি ক্লাইমেটিক স্টাডি বেশ জরুরি হয়ে পড়েছে। পিঁপড়ার ডিপার্টমেন্টের পারফরমেন্স পর্যালোচনা করে সিংহ দেখল প্রোডাকশন বেশ কমে গেছে, তাই সে পেঁচার শরণাপন্ন হলো সমাধানের জন্য। পেঁচা বিশ্বখ্যাত, স্বনামধন্য একজন কনসালট্যান্ট।
পেঁচা তিন মাস ধরে কাজ করে বিশাল এক রিপোর্ট তৈরি করল। রিপোর্টটি কয়েকটি বড় বড় খন্ডে বিভক্ত, যার সারমর্ম: পিঁপড়ার ডিপার্টমেন্ট ওভারস্টাফড।
মোটিভেশনের অভাব এবং নেগেটিভ অ্যাটিটিউডের কারণে পিঁপড়াকে ছাটাই করা হলো।
গল্প শেষ।
পুনশ্চঃ কর্পোরেট পিঁপড়া হইয়া যাইতেসে। যেকোনদিন মটিভেশনের অভাব জনিত কারণে ছাঁটাইও হইয়া যাইতে পারি। Corporate kills creativity! I just love my creative life.
কার্টেসীঃ ব্লগার ম্যাভেরিক ( মূল পোস্টের লিংক কমেন্টে)
সহজ জীবন - ১
একটা আইডিয়া নিয়ে কাজ করার পর যখন কাজটা শেষে যখন একটা প্রোডাক্টে পরিণত হয় সেই সৃষ্টির আনন্দ কাউকে বোঝানোর মত না। এই আনন্দটা দশ/বারো বছর আগে ঠিক যেভাবে ফিল করতাম এখনো করি... আইডিয়ার এই আউটপুট হিট হবে নাকি ফ্লপ হবে সেটা বিজনেস ডিপার্টমেন্ট বুঝবে... শিল্পির কাজ শুধু সৃষ্টি করে যাওয়া।
পেটের ধান্ধা কখনো মানুষকে শিল্পি বানায় না, ব্যবসায়ী বানাতে পারে বড়জোর। আর নিজের কাজে আর্টিস্ট হওয়া জীবনের আনন্দ বাড়ায়। জীবনকে সহজ করে।
কাজের ক্ষেত্রে কেউ যদি আপনাকে বলে দেয় কিভাবে কাজ করতে হবে কোন স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেন করতে হবে সেটা আপনার জন্য ভালো কারণ, তাতে কাজের মানের জন্য আপনাকে জবাবদিহী করতে হবে না মান ঠিক করার জন্য মাথাও খাটাতে হবে না। কিন্তু নিজের আইডিয়্যা এই স্টাইলে ইমপ্লিমেন্ট না করাই ভালো, তাতে আপনার আইডিয়্যাটা বা মটিভেশন হারানোর সম্ভবনা থাকে। নিজের আইডিয়্যা নিয়ে কাজ করতে হয় নিজের মত করে, অন্যের দেখানো পথে আর যাই হোক ক্রিয়েটিভিটি দেখানো সম্ভব না।
ক্রিয়েটিভ জীবন আর ব্যবসায়িক/কাজের জীবন দু'টো আলাদা করে ফেলাই ভালো মনে হইতেসে, তাতে অন্যের মনের মত করে কাজ করা যাবে।