চিন্তা ভাবনা

অনলাইনে প্রকাশিত চিন্তা-ভাবনা সমগ্র

চাকরি বাকরি নিয়া ভবিষ্যতেও আরো বহুত গিয়ানজাম বাঁধবো। বিদেশীদের বাইর কইরা দিয়া শুধু আম্রিকানগো চাকরি দিমু বইলা ট্রাম্পের মত লোক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছে। ভাবেন! কিন্তু ট্রাম্প সেইটা পারে নাই। কারণ, বিদেশীদের ছাড়া আসলে আম্রিকা অচল। বিভিন্ন ইন্ড্রাস্ট্রিতে আম্রিকানদের যত এক্সপার্ট দরকার তার সিকিভাগও আমেরিকায় নাই। পুরো বিশ্ব থেকে রিক্রুট করেও বহু কোম্পানী এক্সপার্টের অভাবে ঠিকমত কাজ করতে পারতেছে না। বিশেষ করে আইটি ইন্ড্রাস্ট্রিতে এক্সপার্টের অভাব দিন দিন বাড়তেই আছে। বাংলাদেশে যেসব বিদেশীরা চাকরি পায়, সেগুলো অকুপাই করার জন্য পর্যাপ্ত এক্সপার্ট এই দেশেও তৈরি হইতেছে না। কেন?
আমাজনের এক বিগ ডাটা এক্সপার্ট আমারে অফার দিয়ে বসে আছে, এইখানে বিগ ডাটা আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়া একটা RnD খোলার জন্য। পর্যাপ্ত এক্সপার্টের অভাবে সেইটা এখনো শুরুই করতে পারলাম না। তারপর উনি বললেন পোলাপানরে শিখিয়ে পড়িয়ে তৈরি করার সেটাপ দিতে। সেইটার জন্যও পর্যাপ্ত জনশক্তি দেখি না (মানে যারা আসলেই এধরনের জিনিষ নিয়ে কাজ করতে পারবে ডেসপারেটলি)। তো, এই যখন অবস্থা; তখন ক্যামনে কী?

মরাল অব দ্য প্যানপ্যানানিঃ চাকরি-বাকরি বহুত আছে, যোগ্য লোক নাই।

আমাদের দেশের মানুষের এত অসুখের পেছনে অনেক বড় চারটা কারণ হচ্ছে- ১) খাদ্যাভাস ও খাবারে ভেজাল, ২) ফার্মেসী থেকে নিজে নিজেই ঔষধ কিনে খাওয়া, ৩) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ও ৪) মানসিক দিক থেকে দুর্বল থাকা বা ভুল ধ্যানধারনা পোষণ করা।

নিজে নিজে ঔষধ খাওয়া, খাদ্যাভাস ও মানসিক দিকগুলো নিয়ে ফেসবুক স্টেটাসে বলে শেষ করা যাবে না। এগুলো নিয়ে আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও অত ছোট টপিক না আর এর সাথে অনেক কিছু জড়িত। সেই অনেক কিছুর ভেতরে সামাজিক দিকটা নিয়ে কিছু বলি। খেয়াল করলে দেখবেন, এদেশে উচ্চ বিত্তের লোকেরা যতটা পরিচ্ছন্ন নিম্নবিত্তের লোকেরা ততটা নয়। অথচ ব্যপারটার সাথে বিত্তের তেমন কোন সম্পর্ক নেই। ইউরোপ-আমেরিকায় একদম যাযাবরদের বাদ দিলে নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তের সকলেই পরিচ্ছন্ন থাকছে। ব্যপারটা কালচারাল। সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ন দিক হচ্ছে এই পরিচ্ছন্নতাবোধ (cleanliness)। তবে শুধু একা এই সংস্কৃতি ধারণ করে লাভ নেই। আপনার বাসা পরিষ্কার থাকবে কিনা, তা নির্ভর করছে আপনার বাসার সকলে সাংস্কৃতিক দিক থেকে অতটা উন্নত কিনা। পরিচ্ছন্নতাবোধের গুরুত্ব বোঝে কিনা। যেকোন একজনেরও যদি সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে পরিচ্ছন্ন থাকাটা কঠিন হয়ে যাবে। সমাজেও তাই। আপনার এলাকায় যদি একটা পরিবারও অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে, তাহলে এলাকার রাস্তায় কলার খোসা, চিপসের প্যাকেট, ডাস্টবিনের বাইরে ময়লা দেখা যেতে পারে। গুলশান-বনানীতে জমির দাম ও বাড়ি ভাড়া এত বেশী করে রাখার একটা বড় কারণ নিম্নবিত্তের লোকদের ওখানে ঢুকতে না দেয়া, যাতে ওরা পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে। কিন্তু কেন নিম্নবিত্তের লোকজন এরকম? ব্যপারটা এমন না যে, বিত্ত নেই বলেই প্রতিটি মানুষ সাংস্কৃতিক দিক থেকে পরিচ্ছন্নতাবোধর অভাবে ভুগছে। আমি অনেক নিম্নবিত্তের মানুষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে দেখেছি। মাটির ঘরে বাস করে কিন্তু চারদিক ঝকঝকে-তকতকে। তবুও শেষ পর্যন্ত এরা এই পরিচ্ছন্নতাটা ধরে রাখতে পারে না।
মূলত বিয়ে-শাদীর মাধ্যমে যখন অন্য পরিবার থেকে এমন কেউ ওখানে ঢুকে পড়ে যার এই পরিচ্ছন্নতাবোধ নেই, তখন ধীরে ধীরে এই পরিচ্ছন্ন পরিবারটাও অপরিচ্ছন্ন হতে থাকে। এদেশে বিয়ের আগে কন্যার বাড়িতে গিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে মেয়েকে দেখা হয়। অথচ দেখা উচিত ছিলো তাদের সাংস্কৃতিক দিকগুলো। তবে অনেকেই কন্যা দেখতে গিয়ে বাড়িঘরের পরিচ্ছন্নতা বোঝার চেষ্টা করে থাকে; কিন্তু ভুলভাবে। তারা ওয়াশরুমে ঢুকে কমোড আর বেসিন দেখে। অথচ ওগুলো গেস্ট আসার আগে পরিষ্কার করে ফেলা হয়। দেখা উচিত ফ্লোর শুকনা না ভেজা। ওয়াশরুমে পানি জমিয়ে রাখা আছে কি নেই। দেয়ালে ঝুল দেখা যাচ্ছে কিনা। ওয়াশরুমে দুর্গন্ধ আছে কিনা। এরকম আরো অনেক ব্যপার রয়েছে। বাসার ভেতরেও পরিষ্কার-পরিছন্নতা দেখে লাভ নেই। ওগুলো আপনি আসার আগেই সাজানো গোছানো শেষ। আপনাকে বারান্দা দিয়ে উকি দিয়ে নিচের দিকে দেখতে হবে। যদিও কিচেনের বারান্দা দিয়ে নিচে তাকিয়ে এটা পুরোটা বুঝবেন না। কারণ, কাজের বুয়ারা অনেক সময় ময়লা ফেলে বারান্দা দিয়ে।

আবার আপনার মেয়েকে যেমন ছেলে পক্ষ দেখতে আসছে আপনারো যাওয়া উচিত ছেলের বাড়িতে। গিয়ে তাদের সাংস্কৃতিক দিকগুলো জেনে আসুন। নয়তো আপনার পরিচ্ছন মেয়েটাকে বাকী জীবন অপরিচ্ছন্ন নোংরার মাঝে কাটাতে হবে।

পুনশ্চঃ কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না দয়া করে। এর আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে যে কয়টা স্টেটাস দিয়েছি তাতে অনেকে মন খারাপ করেছেন বলে জেনেছি। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তের লোকজন নিয়ে আমার এলার্জি আছে। ভুল ভেবেছেন তারা।

একটা বিজনেস আইডিয়া দেই। এইযে ভেজালের কারণে লোকজন ফল-মূল কিনে খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, এতে ফল-মূলের চাহিদা মানুষের কাছে অনেক বেড়েছে। কারণ, বছরে একবার হলেও সবাই আম-কলা-তরমুজ খেতে চায়। গ্রাম অঞ্চলের দিকে এমন ধরনের রিসোর্ট ডিজাইন করতে পারেন যেখানে সুদৃশ্য গাছপালার পরিবর্তে শুধুমাত্র ফলের গাছ থাকবে। আমের বাগান, কলার বাগান, লিচুর বাগান। সাথে বিশাল দীঘিতে মাছের চাষ। দেশী মুরগি, টার্কির ফার্ম। অর্গানিক চাল-ডাল-শস্য, শবজি। একটা বিশাল গ্রামের মত হতে পারে বিষয়টা। বিভিন্ন ফল ও শস্যের মৌসমে মানুষ সেখানে বেড়াতে যাবে। রিসোর্টের বাগান থেকে আম-লিচু খাবে। দীঘি থেকে মাছ ধরে খাবে। অর্গানিক খাবার খাবে। যারা আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে সারাবছর অর্গানিক ফুড খেতে পারে না তারা বছরে একবার হলেও খেতে যাবে ওখানে। যখন ফসল বা ফলের মৌসুম থাকলো না, তখন সাধারণ রিসোর্টের মতই চললো সবকিছু। মানুষ কয়েক মাস আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখবে।

রিসোর্টের গেস্টদের খাওয়ানোর পরে যেসব ফল-মূল-ফসল বেঁচে যাবে, সেগুলো বাজারজাত করতে পারবেন। শুধু কষ্ট করে একবার ব্রান্ড ভ্যালু তৈরি করে নিলেই হলো। বিশ্বাস আপনার মূল পুঁজি।

সহজ জীবন - ৭

সুখী হতে হলে জ্ঞানী হতে হয় অথবা কোন জ্ঞানী লোকের শিষ্য/ফলোয়ার হতে হয়।

কারণ, জ্ঞানী লোকদের লোভ-হিংসা-অহংকার কম থাকে। তারা ভুল বোঝে না, সহজে ক্ষমা করতে পারে। নিজের ভুল সহজে বুঝতে পারে ও ক্ষমা চাইতে পারে। ইগো তাদের ড্রাইভ করে না।

#প্যারেন্টিং - ২১

একজন মানুষের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য একদম ছোটবেলা থেকে নির্ভীক পরিবেশ লাগে। সে যেন ভয় পেয়ে চমকে না ওঠে। আমাদের দেশে ব্যপারটা পুরোপুরি উল্টো। এখানে শাসনের নামে বাচ্চাদের উপরে অমানবিক অত্যাচার চলে। এটা প্রথমে শুরু হয় বাবা অথবা মায়ের তরফ থেকে। তারপর আত্মীয় স্বজন হয়ে শিক্ষক পর্যন্ত। বড় হওয়ার পর চলে সামাজিক অত্যাচার। সব মিলিয়ে এদেশটা একজন মানুষের ভালো ও মহৎ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য খুব বেশী অনুপোযোগী।

ভালো মানুষ তৈরি হওয়ার জন্য এই ভূমি খুব বেশী অনুর্বর। এই অনুর্বরতা আপনি ঠেকিয়ে দিতে পারেন একজন ভালো প্যারেন্ট হয়ে। দুই চারটা ফ্যামিলিও যদি ভালো প্যারেন্ট হয়ে ওঠে তাহলে তাদের বংশধরেরা আরো বেশ কিছু ফ্যামিলি ও অনেক ভালোমানুষ রেখে যেতে পারবে। এভাবেই হয়তো একদিন পরিবর্তন হবে।

এখন কথা হচ্ছে, আপনি কিভাবে ভালো প্যারেন্ট হবেন? আমার লেখা পড়ে? নাহ, তার দরকার নাই। আপনি নিজে বইপত্র কিনে পড়ুন। অনলাইনে সার্চ করে জানুন। হিউম্যান সাইকোলজি বোঝার চেষ্টা করুন। ভালো প্যারেন্ট হওয়ার পথে একটু হলেও এগিয়ে যাবেন।

তথ্য-প্রযুক্তিরে পেশা হিসেবে নেয়ার পেছনে আমার ভেতরে দু'টো ব্যপার কাজ করেছে। এক- এখানে দূর্নীতি করা লাগবে না এবং দুই- কম্পিউটার জিনিষটা আমার সেই স্কুল লাইফ থেকেই ভালো লাগে। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির খুব খারাপ একটা দিকও আছে। একসময় এই তথ্য প্রযুক্তির কারণে কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এই ব্যপারটা বোঝার পর থেকে একটা খারাপ লাগা কাজ করতে শুরু করে নিজের ভেতরে। এই খারাপ লাগা থেকে ২০১২ সালে একটা RnD স্টার্টাপ শুরু করি। উদ্দেশ্য ছিলো এমন একটা প্লাটফর্ম বানানো যেটা কোটি কোটি মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করবে। অন্তত কেউ যাতে না খেয়ে না মারা যায়, এটা নিশ্চিত করা। এটা মূলত একটা ইন্ট্রিগ্রেশন প্লাটফর্ম। একদম স্কুলের একজন স্টুডেন্ট থেকে যেকোন বয়সের যেকোন ব্যক্তি যাতে এর সুফল ভোগ করতে পারে, সেটা মাথায় রেখে পুরো গবেষণা ও ডেভেলপমেন্টটা চলেছে। এমনকি, প্রচলিত কোন কোম্পানী বা প্রোডাক্ট যাতে মার না খেয়ে যায়, কারো বাজার যাতে নষ্ট না হয়, সেটাও এখানে যতদূর সম্ভব দেখা হয়েছে। কারো রুজি নষ্ট করা নয় বরং সকলের জন্য বাজার তৈরি করা ও মাস পিপলকে যুক্ত করা হচ্ছে এর মূল উদ্দেশ্য। ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত পাঁচ বছরে এই RnD একটা ম্যাচিউর স্টেজে পৌঁছেছে। ২০১৭ থেকে এর বাস্তবায়ন ও মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পুরো ব্যপারটার ৮০ ভাগও যদি সফলভাবে ইমপ্লিমেন্ট করে যেতে পারি তাহলে কয়েক বিলিয়ন মানুষের রুটি রুজির ব্যবস্থা করে যেতে পারবো আশা করি।

এই প্রকল্পের একটা অংশ হচ্ছে টিকে থাকার জন্য মানুষকে যোগ্য করে তোলার একটা একাডেমিক প্লাটফর্ম। টিউটোরিয়াল বা কোচিং সেন্টার টাইপ কিছু না। গাইডলাইন ও ইস্পায়ার করা টাইপ ব্যপার নিয়ে কাজ হবে ওখানে। এক্ষেত্রে নিজের অভিজ্ঞতা ও রিয়েলাইজেশন আমাকে ব্যপকভাবে অনুপ্রানিত করেছে। আমি ক্যারিয়ার শুরু করেছি একদম কলেজ লাইফ থেকে। কিন্তু এত আগে থেকে ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতন থাকার পরেও এমন অনেক ভুল করেছি যেগুলো না করলে অনেক ভালো হতো। আসলে গাইডলাইনে অভাব ছিলো। মেন্টর ছিলো না। তরুনদের ঠিকভাবে গাইড করা গেলে সোনা ফলানো সম্ভব। বিশেষ করে আমাদের দেশের তরুনদের ব্যাপারে আমার আস্থা আছে। তারা মেধাবী, সুযোগ আর গাইডলাইনের অভাবে সময় নষ্ট করছে। গাইডলাইনের অভাবে অনেক তরুনই ভার্সিটির শেষ বর্ষে যাওয়ার আগে ক্যারিয়ার নিয়ে ওভাবে সচেতন হয় না, কাজ শুরু করে না। অথচ ক্যারিয়ার নিয়ে স্কুল থেকে ভাবা উচিত, কাজ শুরু করা উচিত কলেজ জীবন থেকে। ১৮ বছর হওয়ার পর প্রতিটা মানুষেরই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা জরুরী। এই প্লাটফর্মের একাডেমিক দিকটা সেই ব্যপারগুলো নিয়ে কাজ করবে।

আল্লাহ যদি আর দশ বছরও আমাকে বাঁচিয়ে রাখে, তাহলে এই জিনিষ আমি শতভাগ ইমপ্লিমেন্ট করে যাবো ইনশা'আল্লাহ।

#প্যারেন্টিং - ২০

তাতিয়ানা যখন আরো ছোট ছিলো, তখন খেলা শেষে নিজের খেলনাগুলো গুছিয়ে ঝুড়িতে রেখে দিতো। ইদানিং সে নিজের খেলনাগুলো পুরো রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। কাল রাতে বললাম, চলো আমরা রুম পরিষ্কার করে ফেলি। এরপর সে নিজেই ঠিক করেছে যে খেলনাগুলো শুধু সে গোছাবে, আমাকে হাত দিতে দিবে না। দুজন মিলে সব সাজিয়ে, ঝাড়ু দিয়ে মুছে রুম ঝকঝকা করে ফেললাম। আজকে দেখলাম ব্যাগ থেকে খেলনা বের করে আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখছে। রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখছে না।

আপনার বাচ্চাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে শেখান। ছোটবেলা থেকেই যদি সে অপরিচ্ছন্ন আর নোংরার মাঝে বড় হতে থাকে, তাহলে বড় হয়েও পরিচ্ছন্ন থাকতে পারবে না। এটা তার বাচ্চাদের ভেতরে এবং বন্ধুদের ভেতরেও সংক্রামিত হবে। এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একটা মানুষ আরো নোংরা হতে শেখে। এটা আবার রোগের জীবানুর মত সে ছড়িয়ে বেড়ায়। অন্যদেরও অপরিচ্ছন্ন আর নোংরা করে ফেলে। এভাবে একটা গোটা জাতি অপরিচ্ছন্ন আর নোংরা হয়ে পড়ে।

#প্যারেন্টিং - ১৮

তাতিয়ানা হঠাৎ কোত্থেকে যেন সবকিছু নিজের বলে ঘোষণা করতে শিখে গেছে। যেগুলো তার নিজের সেগুলোকে সব 'আমার' বলতে শুরু করেছে। 'আমার বই', 'আমার খেলনা' ইত্যাদি ইত্যাদি। আগে সে সবকিছু শেয়ার করতো। নিজের জিনিষ অন্যেরা ধরতে পারবে না, এরকম কোন ধারণা ওর ছিলো না। কোথাও বেড়াতে গিয়ে এই ব্যপারটা তার ভেতরে ঢুকে গিয়েছে। ব্যপারটা নোটিশ করলেও কিছু বলিনি। সরাসরি বললে কাজের কাজ কিছু হবে না।

মাঝে মাঝে সে আমার ফোন নেয় খেলতে। ঐদিন রাতে এসে বলছে- 'বাবা, আমার ফোন দাও'। আমি বললাম, 'এটা তোমার ফোন?' সে একটু থমকে গেল। মিনিট খানেক চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবলো। কোন একটা জিনিষ নিজের না হলেও অন্যকে দেয়া যায় কিনা, নিজেরটা অন্যের সাথে শেয়ার করা যায় কিনা.... এসব ভাবছিলো হয়তো। আমি আবার বললাম- 'এটা কার ফোন বলো?' সে এবার হেসে বলে, "বাবার ফোন। আমার বাবার ফোন..."। ফোনের নেটওয়ার্ক অফ করে দিলাম ওর হাতে।

আমার খেলনা, আমার এটা/আমার ওটা... এগুলো বাচ্চাদের ভেতরে ঢুকে গেলে বিপদ আছে। স্বার্থপর হয়ে যাবে। বাচ্চাদের স্বার্থপর বানাবেন না। বাচ্চাদের স্বার্থপর বানানোর ফল সবার আগে আপনি নিজে ভোগ করবেন, তারপর বাকী জীবন সে নিজে ভোগ করবে। দীর্ঘমেয়াদে স্বার্থপররা কখনো জেতে না। খালি হারায়। তারা এটা বুঝতে পারে না।

#প্যারেন্টিং - ১৯

বাংলায় ভালো কিডস কনটেন্ট না থাকাতে তাতিয়ানাকে সব ইংরেজী রাইম আর কার্টুন নামিয়ে দিতে হয়েছে। এতে যেটা হয়েছে, বাংলা থেকে সে ইংরেজী বলতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বাংলা বললে সে খুব একটা জবাব দেয় না, ইংরেজীতে বললে জবাব দেয়। এজন্য প্রথম কিছুদিন ওর সাথে ইংরেজীতেই কথা বলেছি। কিন্তু সম্প্রতি খেয়াল করলাম খেলনাদের সাথে সে ইংরেজীতে কথা বলছে। এরকম চললে কিছুদিন পর বাংলা ভুলে যাবে। সুতরাং ওর সাথে ইংরেজী আলাপ বন্ধ করে দিয়েছি।

ইংরেজী অবশ্যই জরুরী। কিন্তু ভাষা হিসেবে ইংরেজী অনেক সহজ। যেকোন বয়সে যেকেউ কিছুদিন চেষ্টা করলেই ইংরেজীতে ভালো লিখতে ও বলতে পারে। বাংলা অত সহজ না। সুতরাং আপনার বাচ্চাদের ইংরেজী শেখাবেন অবশ্যই কিন্তু বাংলা আগে শেখান। আপনার বাচ্চা যতগুলো ভাষা জানবে তার জন্য তত ভালো। বাংলা ভালো জানাটা বরং অনেক বড় যোগ্যতা, কারণ চাইলেই যেকেউ সহজে এই ভাষা শিখতে পারবে না।

সহজ জীবন - ৬

মানুষের ব্রেইন একটা বিরাট বড় বাগান। নতুন কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন শুরু করলে নতুন একটা গাছ লাগানো হয় সেখানে। তারপর সেই বিষয়ে আপনি যতই জানবেন সেই গাছের ততই ডালপালা আর পাতা গজাতে থাকে। এই বৃক্ষগুলোর আবার যত্ন লাগে। জ্ঞান চর্চা যেটারে বলে। যত্নের অভাবে গাছ শুকিয়ে যায়, মরেও যায়। অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলো এখানে আগাছার মতন।

আপনার বাগানের কয়টা গাছ আছে? কোন গাছটা কত বড়? যত্নের অভাবে কোন গাছটা মারা যাচ্ছে না তো? আগাছা বেড়ে গেলে কিন্তু গাছ মারা যেতে পারে। একদমই গাছ না লাগালে আবার শুকিয়ে মরুভূমিও হয়ে যেতে পারে। বাগানটার যত্ন নিন।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি