চিন্তা ভাবনা

অনলাইনে প্রকাশিত চিন্তা-ভাবনা সমগ্র

একজন ফ্রিল্যান্সারের সুইসাইড নোট দেখলাম। বেশ দুঃখজনক! নোটটা পড়ে মনে হলো কিছু কথা বলা দরকার যেগুলো গত ১০/১২ বছর ধরে বিচ্ছিন্নভাবে বলে আসছি।

ক) ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং ভালো না।

আইটিতে বাংলাদেশের একদম প্রথম দিকের কয়েকজন ফ্রিল্যান্সারের একজন হিসেবে এটা আমার অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান। ফ্রিল্যান্সিং কেন খারাপ, এই ব্যাখ্যা গত দশ/বারো বছর ধরে নানাভাবে বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে আসছি। Freelancer @ Bangladesh গ্রুপে ২০১৪ সালে সম্ভবত শেষবারের মত এবিষয়ে লিখেছিলাম (লিংক কমেন্টে)। তখন ফ্রিল্যান্সিং এর বিরুদ্ধে কিছু লেখা খুব রিস্কি ছিলো, লোকজন ভালোভাবে নিতো না। যাদের জন্য বলা, তারাই ভুল বুঝলে আসলে বলে লাভ নাই তেমন। তাই এসব নিয়ে গত ছয়/সাত বছর আর তেমন কিছু বলা হয়নি।

ফ্রিল্যান্সিং ভালো না, তো কী করবেন? এ বিষয়ে আমার পরামর্শ হচ্ছে-

১) ফ্রিল্যান্সিং একেবারে নিষিদ্ধ বলছি না। ট্রাই করতে পারেন। তবে, ফ্রিল্যান্সিং করার আগে কমপক্ষে ৪/৫ বছরের জব এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে নিলে ভালো। ফ্রিল্যান্সার হওয়ার আগে আমার ছয় বছরের জব এক্সপেরিয়েন্স ছিলো। আবার ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে দেয়ার পরেও নিজের স্টার্টাপের পাশাপাশি টুকটাক ফ্রিল্যান্সিং এখনো করি (বিশেষ করে বিদেশী কাজ)। আপনিও করতে পারেন, সময়-সুযোগ হলে। কিন্তু ফুল টাইম ফ্রিল্যান্সার? কখনোই না!

২) ফ্রিল্যান্সার হওয়ার পেছনে সবচাইতে বড় কারণ সম্ভবত টাকা-পয়সা। ফ্রিল্যান্সিং এ হুট করে অনেক উপার্জন সম্ভব যেটা লোকজনকে আকর্ষণ করে বেশী। অথচ, ক্যারিয়ারের প্রথমে টাকার দিকে তাকাতে হয় না। আমার প্রথম জবের স্যালারি ছিলো মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। এই পাঁচ হাজার টাকার বেতনেও শেষ দুই মাসের বেতন দেয়নি। কিন্তু এটা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। এই জব থেকে আমি যা শিখেছি, তার মূল্য কোটি টাকা। আমি এখনো কৃতজ্ঞ ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রতি, ওখানকার বড় ভাইদের প্রতি, যারা অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন।

৩) ফ্রিল্যান্সিং কিংবা স্টার্টাটাপ, আগে কমপক্ষে পাঁচ বছর জব এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে নেয়া ভালো। তারপর কিছুদিন ফ্রিল্যান্সিং ট্রাই করতে পারেন, কিন্তু ভালো হবে যদি আপনার মত আরো কয়েকজন ফ্রিল্যান্সারকে নিয়ে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে নিতে পারেন। বাসায় বসেই কাজ করেন সমস্যা নাই, কিন্তু সব প্রাতিষ্ঠানিক ফরম্যাটে করুন।

৪) আপনার ক্যারিয়ার যদি হয় সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট লাইনে, তাহলে কনট্রাক্ট ওয়ার্কের পাশাপাশি নিজেদের কিছু প্রোডাক্ট ডেভেলপ করতে থাকুন। আলটিমেটলি প্রোডাক্টই আপনাদের বাঁচিয়ে রাখবে। শুধুমাত্র কনট্রাক্ট ওয়ার্ক দিয়ে খুব বেশীদূর যাওয়া যায় না, টিকে থাকা কঠিন।

৫) আইটিতে আপনার ক্যারিয়ার যদি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বাদে অন্য কিছু হয়, তাহলে খুব বেশীদিন ফ্রিল্যান্সার না থাকাই ভালো। হয় জবে জয়েন করুন অথবা নিজের একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করুন। অথবা, ক্যারিয়ার সুইচ করুন।

৬) সামনে খুব খারাপ সময় আসতেছে। কিন্তু এই খারাপ সময়ের প্রাথমিক দিকে ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা অনেক বাড়ার সম্ভবনা আছে। সাবধান! এটা খুবই সাময়িক একটা অবস্থা। এটা যেন আপনাকে প্রলুব্ধ করতে না পারে। ফ্রিল্যান্সিং আপনার প্রোফাইলে কোন ভ্যালু এড করে না। প্রোফাইলই সবকিছু, টাকা পয়সা না।

খ) যতটা সম্ভব, আপনার পারিবারিক সমস্যা নিজেদের ভেতরে রাখুন।

এই বিষয়টা নিয়ে অল্প কথায় কিছু বলা মুশকিল, পাবলিক ভুল বুঝতে পারে। তাও রিস্ক নিয়ে অল্প কথায় কিছু পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করি-

১) আপনার পারিবারিক সমস্যা যত কম লোকে জানবে, তত ভালো। খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড না হলে এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলা উচিত না।

২) আপনার নিজের পারিবারিক সমস্যায় অন্যের পরামর্শ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। কারণ, তিনি পুরো পরিস্থিতি জানেন না।

৩) আপনার নিজের ফ্যামিলিতে বাইরের লোকের হস্তপক্ষেপ যত কম করতে দিবেন, তত ভালো। হ্যাঁ, এটা খুব কঠিন কাজ। বিশেষ করে ভুল ফ্যামিলিতে বিয়ে করলে এটা সম্ভবই না। তাই, বিয়ের আগেই এই বিষয়টা নিয়ে সতর্ক থাকা ভালো। বিয়ের আগে ছেলে বা মেয়ে দেখার চাইতে তাদের ফ্যামিলি দেখা বেশী গুরুত্বপূর্ন।

৪) কিছু মানুষ আছে, অন্যের ফ্যামিলি ভাঙা যাদের জীবনের আনন্দের অন্যতম উৎস। এদের ব্যপারে খুব সাবধান! এরা আপনার ফ্যামিলিতে অশান্তি লাগিয়ে দিয়ে দূরে বসে মজা দেখতে ভালোবাসে। এদের কথায় ডিভোর্স নেয়ার পর দেখবেন এরা আর আপনার পাশে নাই।

৫) অধিকাংশ মানুষই অন্যের ভালো করতে গিয়ে ক্ষতি করে ফেলে। বিশেষ করে নির্বোধ ও কমবুদ্ধির লোকেরা। এদেরকে আপনার ফ্যামিলিতে একসেস যত কম দিবেন তত ভালো। আপাত দৃষ্টিতে এদেরকে খুব ভালো মানুষ মনে হলেও এরাই সবচাইতে বেশী ক্ষতিকর। নির্বোধ বন্ধুর চাইতে বুদ্ধিমান শত্রু ভালো।

৬) চুপ থাকা শিখেন। একদম চুপ। কথা যত কম বলবেন, তত ভালো।

আজকে এপর্যন্তই থাকুক! বেঁচে থাকলে এসবের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নিয়ে বই লিখবো হয়তো। ভালো থাকুক প্রতিটা মানুষ।

সকালে ঘুমানো আর ব্রেকফাস্ট না করা যে একটা 'বড়লোকি' ব্যপার, এইটা বাঙালির মাথায় কারা ঢুকিয়েছে?

বাংলা সিনেমা?

জম্বি এপোকেলিপস মুভিগুলোতে দলে দলে জম্বি এসে আক্রমণ চালাতে দেখেছিলেন না? পরিস্থিতি কয়েক মাসের ভেতরে স্বাভাবিক না হলে এবং গরীব মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করা না গেলে, জম্বিদের মতই এরা আপনার আমার বাসায় এসে হামলা চালাবে। লাখ লাখ না খেয়ে থাকা লোকের এই এ্যাটাক থামানোর ক্ষমতা পৃথিবীর কোন সেনাবাহিনীর নাই। প্রথমে আক্রান্ত হবে রাজনৈতিক নেতা ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা। সুতরাং... দল-মত নির্বিশেষে আন্তরিকভাবে এই দূর্যোগ মোকাবিলায় অংশ নিন। কোটি কোটি মানুষকে অভুক্ত রেখে নিরাপদে থাকা যায় না।

এদেশে ডাক্তারদেরকে পাবলিক খুব অন্যায়ভাবে ব্লেইম করে। প্রতিষ্ঠানের সমস্যায় ডাক্তারদের শাস্তি দেয়া হয়। এর ফলাফল কী হবে জানেন? এদেশের ভালো ভালো ডাক্তাররা মন খারাপ করে দেশ ছেড়ে চলে যাবে।

করোনাতে পুরো পৃথিবীতেই প্রচুর ডাক্তার মারা যাচ্ছে। এতে প্রায় সকল দেশেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের একটা সংকট তৈরি হচ্ছে। দেশের বড় বড় ডাক্তাররা চাইলেই ভালো স্যালারিতে ওসব দেশে মাইগ্রেট করতে পারবে। আপনার অন্যায় আচরণের ফলে এদেশের ভালো ডাক্তাররা হতাশ হয়ে যদি দেশ ছেড়ে চলে যায়, শেষ পর্যন্ত বিপদে পড়বেন আপনি নিজেই। সুতরাং... সময় থাকতে সাবধান! আপনার নিজের স্বার্থেই!!

ফেসবুক পাজলগুলোর অবস্থা এরকম—

বলেন তো, 8 + 3 = ?

আপনি যদি বলেন, 8+3 = 11 তাহলে বলবে, হয় নাই! এইটা আসলে এইট না, দুইটা শুন্যরে উপরে নিচে জোড়া লাগনো হইছে।
সুতরাং সঠিক উত্তর হবে, 0 + 0 + 3 = 3

লেইম!

বাগান তত্ত্ব - ৯

মানুষরে আমি দেখি একটা বাগানের মতন। মানুষের সকল জ্ঞান, ধ্যান-ধারণা, ট্রেইটগুলো সব গাছের মত। মনে করেন হিংসার গাছ, ভালোবাসার গাছ, বিজ্ঞানের গাছ, সাহিত্যের গাছ। একেকজনের বাগানে একেকটার অবস্থা একেকরকম। অনেকের বাগানে অনেক বিষাক্ত গাছ আছে। হয়তো তার বাগানে একটা দূর্লভ গাছের সন্ধান পেলাম। তখন নাকে রুমাল চেপে ধরে সেইগুলিরে পাশ কাটিয়ে আমি দূর্লভ গাছটার কাছে যাই। কারো কারো বাগান থেকে গাছের বীজ এনে নিজের বাগানে লাগাই। এতে আমার নিজের বাগান সমৃদ্ধ হয়।

মানুষ দুর্বলরে সেইফ ভেবে আক্রমণ করে। অথচ, আঘাত করার জন্য দুর্বলেরা হচ্ছে বেশী বিপদজনক। ছোট ও দুর্বলেরা সাধারণত বেশী প্রতিশোধ পরায়ণ হয়। যেহেতু তারা ছোট এবং তাদের জগৎ ছোট, করার মত তেমন কিছু নাই, তাই প্রতিশোধ নেয়ার ব্যপারটাই তাদের মাথায় ঘুরতে থাকে সারাক্ষন। তাই, দুর্বল ও ছোটদের ব্যপারে সাবধান হে! এরা কখনো ক্ষমা করতে পারে না।

আমার কিছু আম্রিকান ফ্রেন্ড কনভার্সেশন শুরু করে Yo দিয়া। আমিও Yo দিয়াই অদের সাথে কথা শুরু করি। যেইখানে যেমন আরকি। তো, একদিন একজন জিগায়, তুমার দ্যাশেও কি তুমরা Yo কও?

আমি কইলাম— হু... কয় তো! আমরার দ্যাশে গাছ কাটে যারা, তাদেরকে Hey yo বলতে দেখসি।

২০১৯

গত তিন মাসে প্রতিদিন গড়ে ১ ঘন্টারও কম ফেসবুক ব্যবহার করেছি। ডিসেম্বর মাসের গড় হচ্ছে প্রতিদিন ১৫ মিনিট। এটা মনে হয় এই বছরে আমার সেরা অর্জন। জানুয়ারী থেকে সেটা ৫ মিনিটে নামিয়ে আনার চেষ্টা করবো।

এবছরের সবচাইতে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে ভার্সিটিয়ানের মাইলস্টোনগুলো অর্জন না হওয়া। পাঁচটা মাইলস্টোন ছিলো, মাত্র দুইটা এ্যাচিভ হয়েছে।

প্রতি বছর ১০০ বই পড়ার কর্মসূচীও ভয়াবহভাবে ফেইল করেছে। মাত্র ৩১টা বই পড়া হয়েছে এবছর। এই ৩১টা বইয়ের ভেতরে আবার ১০-টাই উপন্যাস। ১০০-তে ৩৩ যদি পাশ মার্ক হয়, তাহলে এটা পুরাই ফেইল মার্ক। এই ৩১টা বইয়ের অধিকাংশও আবার গত তিন মাসে পড়া হলো। ফেসবুকে কম আসার ফল। সুতরাং আগামী বছর আরো বেশী পড়া সম্ভব হবে, আশা করা যায়।

জানুয়ারীর ১ তারিখের আগে থিংকার ক্লাবের সবগুলো ফিচার ডেপ্লয় করার মাইলস্টোনও ফেইল। তবে, আগামী এক সপ্তাহের ভেতরে এটা রিকোভার হয়ে যাবে।

তবে, সব মিলিয়ে ২০১৯ আমার জন্য ভালো ও গুরুত্বপূর্ন একটা বছর ছিলো। ২০২০ আরো বেশী গুরুত্বপূর্ন হবে।

সবাইকে নতুন বছরের অগ্রীম শুভেচ্ছা।

হ্যাপি বাড্ডে ২০২০
দীর্ঘজীবি হও.. ৩৬৬ দিন বাঁইচা থাইকো!

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি