আমার ভার্চুয়াল সেটেলমেন্ট।
ছোটবেলা আমার একটা শহর তৈরির স্বপ্ন ছিলো। ওয়েস্ট্রান বইগুলোতে সেটেলারদের কান্ড-কারখানা দেখে এই স্বপ্ন ঢুকেছিলো মাথায়। বাস্তবে তো এই ধরনের শহর তৈরি সম্ভব না এখন আর, কিন্তু ভার্চুয়ালি সম্ভব। একটা শহরে যা যা থাকে, থিংকার Town Center এর ভেতরে তার সব যোগ করবো ধীরে ধীরে। এর একটা হচ্ছে প্রয়োজনীয় দোকানপাট।
ছয় ধরনের ই-কমার্স থাকবে প্রতিটা টাউনসেন্টারের সাথে। কম্পিউটার, মোবাইল, ইলেক্ট্রনিক্স, বুকস, ফ্যাশন ও গ্রোসারী (বা মুদি দোকান)। টাউন সেন্টার যারা চালাবে, তারা এই দোকান/ই-কমগুলো পরিচালনা করবে।
যে তিনটা কারণে ফেসবুক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ফেসবুকের মত আরেকটা প্লাটফর্ম না হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশী—
১) ফেসবুকের মত প্লাটফর্ম সরকার ও মিডিয়াগুলোর জন্য সমস্যাজনক। ফলে, তারা সর্বশক্তি দিয়ে এধরনের আরেকটা প্লাটফর্মের উত্থান ঠেকাবে। যেভাবে পাবলিকরে প্রাইভেসী জুজু দেখিয়ে ফেসবুকের রেভিনিউর বারোটা বাজাতে সক্ষম হয়েছে, তাতে বুঝা যায় এরা ভবিষ্যতেও সফল হবে। তবে এটা সরকারগুলোর জন্যও ক্ষতির কারণ হবে। পাবলিক ডিপ ওয়েবে চলে যাবে এবং বিচ্ছিন্ন ভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকবে যা তারা একদমই নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না।
২) বিজ্ঞাপণ বেসড রেভিনিউর উপরে ভিত্তি করে কেউ আর মিডিয়া তৈরির চেষ্টা করবে না। অন্তত, এত লার্জ স্কেলে। বিজ্ঞাপণের মার্কেট গুগল আর অ্যাপলের হাতে চলে যাবে পুরোপুরি। আবার ইলন মাস্কও এদিকে হাত দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্যদের আর কোন চান্স নাই।
৩) পৃথিবী আবার সামন্তীয় যুগের দিকে রওনা দিয়েছে। ডিভাইড এন্ড রুল থিওরীর প্রবল জোয়ার আসতেছে আবার। পাবলিকের ভেতরে বিভক্তি চরমে পৌঁছাবে আগামী কয়েক দশকের ভেতরে।
বাংলাদেশের বিখ্যাত এক লেখককের ব্যপারে এক মেয়েকে দেখেছিলাম ভয়ানক সব অভিযোগ করতে। ঐ মেয়ে দাবী করেছিলো ঐ লেখকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিনেন। শুধু চিনেন না, খুব ভালোভাবেই চিনেন। এবং এই লোক কোন লেভেলের খারাপ মানুষ তিনি জানেন.. ইত্যাদি ইত্যাদি। তো, সেই লেখকের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক থাকায় ব্যপারটা নিয়ে জানতে চাইলাম। উনি বললেন, এই মেয়েকে তিনি চিনেন না। তারপর ইনবক্সে সেই মেয়েকে একটা ম্যাসেজ দিতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন মেয়েটা তিন/চার বছর আগে খুব সুন্দর করে "ভাইয়া... আমি আপনার মস্ত ফ্যান..." টাইপ একটা ম্যাসেজ করেছিলো। কিন্তু সেই ম্যাসেজ লেখকের চোখে পড়ে নাই, ফলে জবাব দিতে পারেন নাই। আমরা ধারণা করলাম এই জবাব না দেয়াতেই উনি এত ক্ষ্যাপা। আমার পরিচিত আরেকজন আছে যিনি এই লেখককে দুই চোখে দেখতে পারেন না। দোষ ঐ একটাই, ইনবক্সে ম্যাসেজের রিপ্লাই পাননি।
এই স্টোরি বলার কারণ হচ্ছে আজকে ফেসবুক ইনবক্সে ফিল্টারড ম্যাসেজ চেক করে দেখি অসংখ্য চমৎকার সব ম্যাসেজ। যেহেতু ফিল্টারড ম্যাসেজ দুই/তিন বছর পর পর একবার চেক করা হয়, স্বভাবতই এগুলো চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। ভাবছি, কতজন এনিমি তৈরি হলো এভাবে কে জানে!
সহজ জীবন নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে হবে।
অনলাইন ফ্রেন্ডশীপ নিয়ে কথা হচ্ছিলো একজনের সাথে। উনি জানতে চাইলেন,
: অনলাইনে কি মানুষ ফ্রেন্ড হতে পারে?
- পারে। রেয়ারলি!
: রেয়ারলি কেন?
- অনলাইনে মূলত মানুষ কাছাকাছি আসে নিজেদের দুঃখ শেয়ার করে। অনলাইনে ফ্রেন্ড খোঁজে মূলত ব্যক্তিগত জীবনে আনহ্যাপি পাবলিকেরা। ১৮ বছর ধরে অনলাইনে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয়েছে, এধরনের মানুষেরা কখনো বন্ধু হিসেবে ভালো হয় না।
: কেন?
- কেন, তা তো নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে এটুকু বলা যায় যে- একজন মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী হলে সেটার জন্য তার নিজের দায় আছে কমপক্ষে ৫০ ভাগ। তার মানে, সুখী হওয়ার জন্য যে ট্রেইটগুলো মানুষের থাকা দরকার, সেগুলোর ঘাটতি আছে তার ভেতরে। এখন আপনি নিজেও যদি ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী হয়ে অনলাইনে বন্ধু খুঁজতে আসেন, তাহলে দুইজনের ৫০ ভাগ মিলে শত ভাগ অসুখী হওয়ার চান্স অনেক বেশী! এরকম হলে বন্ধুত্ব টেকে না। আফটার অল, আপনি তো সুখী হওয়ার জন্যই বন্ধু খুঁজতেছেন!