চিন্তা

চিন্তা করার পর আমরা যে সিদ্ধান্তে পৌঁছাই, সেটা কিছু তথ্য মাত্র। দুই পাতা লম্বা একটা ম্যাথ করার পর শেষে এক বা দুই লাইনে ফল লেখার মতই তথ্য। দুই পাতা ভর্তি পুরো ম্যাথটা হচ্ছে 'চিন্তা' বা 'চিন্তা-পদ্ধতি'।

বই পড়ার সাথে যদি চিন্তা না করেন, তাহলে সেটা অংকের ফল মুখস্ত করার মতই একটা ব্যাপার। তখন আপনি কিছু তথ্য গ্রহন করছেন মাত্র। চিন্তা ছাড়া এই তথ্য কোন কাজে আসে না।

চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি হলে অল্প সময়ে অনেক বেশী জানা ও বুঝা সম্ভব হয় এবং এই ক্ষমতা জ্যামেতিক হারে বাড়তে থাকে। তখন আপনি সবকিছু থেকেই শিখতে পারবেন। সবকিছুতেই নিদর্শন খুঁজে পাবেন।

চিন্তাশীল হওয়া এজন্যই এত গুরুত্বপূর্ন।

ভ্রমণের সময় এমনিতেই মাথায় নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনা ঘুরতে থাকে যা ঢাকায় বসে থাকলে আসে না। বিশেষ করে গভীর রাতের ভ্রমণে ভাবনাগুলো আরো গভীরে চলে যায়। তো, ভাবছিলাম জীবন-মৃত্যু নিয়ে। মানুশ কেন বেঁচে থাকতে চায়? এই বিষয়টা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভেবে আমি দু'টো বিষয় পেয়েছি—

১) মানুশ আসলে নিজের জন্য বাঁচে না, সে বেঁচে থাকে অন্যের জন্য। পৃথিবীতে আর কেউ না থাকলে সে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতো না হয়তো।

২) অস্তিত্বহীনতার চিন্তা খুব ভয়াবহ ব্যাপার। বিশেষ করে যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের জন্য মৃত্যুর মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ার যে ভাবনা, এটা থেকে সে পালাতে চায়। এজন্য নিজেকে অমর/স্বরণীয় করে রাখতে চায়। এটা নিজের অস্তিত্বহীনতার চিন্তা থেকে বাঁচার একটা প্রয়াস মাত্র।

অস্তিত্বহীনতার চিন্তা যে কতটা ভয়াবহ, এটা বুঝার জন্য আপনাকে শুধুমাত্র এই ব্যাপারটা ভাবতে হবে—
'আমাকে যদি সৃষ্টি করা না হতো' কিংবা 'আমি যদি জন্ম না নিতাম'
ভেবে দেখেন। দুই দিন সময় দিলাম ????

বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু ভয়াবহ কিছু না। কারণ, মৃত্যুর মাধ্যমে তার অমরত্বের শুরু। তবে, এই লেভেলের ঈমানদার রেয়ার।

আমি নিজে কি মৃত্যুকে ভয় পাই? মোটেও না। বরং মৃত্যুর পরের জগত নিয়ে আমার ভেতরে খুব ছোটবেলা থেকেই অনেক আগ্রহ। অনেক ভেবে দেখলাম, আমি মারা গেলে আমার নিজের তেমন কোন ক্ষতি নেই (কিছু লোকের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া বা পাওয়ার নিশ্চয়তাটা না থাকা বাদে)। আমি মারা গেলে মূলত আমার নিজের জন্য ভালো। খারাপ হচ্ছে আমার ফ্যামিলি ও প্রিয়জনদের জন্য। আরেকটা খারাপ হচ্ছে আমার অসম্পূর্ন প্রজেক্টগুলোর জন্য, যেগুলো একসময় কোটি কোটি লোকের উপকার করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে।

এছাড়া আর কী?

আর তেমন কিছু নেই আসলে। এই জগতে জীবনের আলটিমেট লক্ষ্য হচ্ছে মৃত্যু। ব্যক্তির জন্য মৃত্যু একটা ভালো ব্যাপার।

আমরা যখন পড়ি তখন বই/লেখা থেকে খুবই ধীরগতিতে তথ্য নিতে পারি। এভাবে তথ্য গ্রহণ করার ব্যান্ডউইথ এতই কম যে আমাদের এই ছোট জীবনে খুব বেশী কিছু শেখা সম্ভব না। কিন্তু দেখবেন কিছু লোক ঠিকই এই ছোট জীবনেও বহুকিছু শিখে ফেলছে বা করে ফেলছে। ইলন মাস্কের কথাই ধরুন, মাত্র ৫০ বছরেই কতগুলো ইন্ড্রাস্ট্রিতে মাস্টার হয়ে বসে আছেন।

তারা এটা কিভাবে করে?

সহজভাবে বললে— চিন্তা করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে। কল্পনা (imagination) + চিন্তা (thought) আপনার শেখার গতি বাড়িয়ে দেয়।

চিন্তা আমাদের ব্রেইনে তথ্যকে বিবর্ধিত করে। যখন আপনি চিন্তা করতে শেখেন, তখন দুই লাইন পড়লে ব্রেইনে সেটা গিয়ে কয়েক গুন হয়ে যায়। সাথে ইমাজিনেশনন যোগ হলে আরো কয়েক গুন হয়। যার চিন্তা করার ক্ষমতা যত বেশী, ইমাজিনেশন যত ভালো, তার এই তথ্য বিবর্ধনের হার তত বেশী।

ঢাকার বাইরে অনেক ভালো ভালো লেখক-চিন্তক আছেন; নিভৃতচারী। দেশের সার্বিক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আপনাদের সামনে আসা জরুরী। আপনাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে পারলে এবং লেখালেখি ও প্রকাশনার স্পেস দেয়া গেলে দেশের সার্বিক বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় সেটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই, আপনাদেরকে দেশবাসীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই আমরা। থিংকার নেটওয়ার্ক আপনাদের পরিচিতি ও কর্ম দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে সাহায্য করবে। আর এজন্য আমাদের ৬৪ জেলা ক্যাম্পেইনে শুধুমাত্র আপনাদের জন্যই একটা বিশেষ চা-চক্র ইভেন্ট থাকবে।

ঢাকার বাইরের লেখক-কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও চিন্তকদের ভেতরে যারা এই চা-চক্রে যোগ দিতে চান, কষ্ট করে আমাকে ইনবক্সে টোকা দিন (আমার রেসপন্স করতে দুই/চার ঘন্টা দেরী হলে রাগ করবেন না দয়া করে)।

প্রতি জেলায় থিংকার ক্লাবের শাখা তৈরি এবং বুক পয়েন্ট নেটওয়ার্ক তৈরিতে যারা থাকতে চান, তারাও যোগাযোগ করতে পারেন।

ক্যাম্পেইন শুরু হবে আগামী বছরের প্রথম দিকে। এবছরের বাকীটা সময় আপনাদের সাথে নেটওয়ার্কিং চালিয়ে যেতে চাই। তাতে আপনাদের সুবিধাজনক সময়ে আপনার জেলায় ক্যাম্পেইন প্ল্যান করতে সুবিধা হবে।

ফেসবুকে আমার দুইটা জিউশ ফ্রেন্ড আছে। দুইজনেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। একজনের সাথে পরিচয় হয়েছিলো অনলাইনে গেম খেলতে গিয়ে, আরেকজনের সাথে একটা প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে। এরা যে কোন লেভেলের জিনিয়াস! বন্ধুত্বটা এজন্যই হয়েছে মূলত।

এই দুই জিনিয়াসের সাথে মোটামুটি সব টপিকেই চমৎকার আলোচনা করা যায়। আর এদের পোলাইটনেসও এক্সট্রা অর্ডিনারি লেভেলে। এদের IQ যেমন হাই, EQ-ও তেমন।

তো, এদের একজন গতকাল 'ই-য-রা-ইল একটা টে/রোরিস্ট নেশন' লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিছে। ঐখানে তার অন্য জিউ ফ্রেন্ডরা এসে আর্গুমেন্ট করতেছে। সেই আর্গুমেন্টও দেখার মত। আর্গুমেন্ট আসলে কিভাবে করতে হয়, অন্যের প্রতি কতটা রেসপেক্ট দেখানো সম্ভব একটা তর্কের মাঝে, এগুলো আমি এই ছেলের অতীতের বিভিন্ন আর্গুমেন্টেও দেখেছি। ভালো লাগে দেখতে।

আমার দীর্ঘদিনের একটা পর্যবেক্ষন এরকম— 'যে মানুশ যত বুদ্ধিমান সে অন্যের প্রতি তত সম্মান দেখাতে পারে।' এদেরকে দেখে আমার এই ধারণাটা আরো শক্ত হয়।

যে নিজেরে অলওয়েজ রাইট ও অনেক বড় মনে করে, সে গ্রেটার গুডের জন্য কাজ করছে না। সে নিজের ইগোরে স্যাটিসফাই করতেছে শুধু।

গুগল আর্থে কখনো জুম আউট করতে করতে স্পেসে গিয়ে পৃথিবীকে দেখেছেন? জীবনকেও এভাবে দেখা সম্ভব। জীবনকে যত বেশী জুম আউট করবেন, নিজেকে ততই তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর মনে হতে থাকবে। জীবনের বিশালত্বের সামনে আপনার কাজকর্ম-অস্তিত্ব মাইক্রোস্কোপিক।

যারা সফট পাওয়ারের গুরুত্ব বুঝে না, তাদের সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক আলাপ করে লাভ নাই।

আলাপটা হওয়া উচিত কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো তা আমরা কিভাবে ডিফাইন করবো, সেটা নিয়া। এক্ষেত্রে কখনো ধর্ম আর কখনো বিজ্ঞান দরকার হতে পারে। চুরি করা যে খারাপ, এটা আপনি কোন বিজ্ঞান দিয়া রায় দিবেন? নাই ত! কবিতার কী বিজ্ঞান হে? ফলে, সব জায়গায় বিজ্ঞান ফলাইতে হয় না। তাহলে শিল্প-সাহিত্যও আপনারে বাতিল করতে হবে। এগুলাও তো অবৈজ্ঞানিক (আপনাদের যুক্তি দিয়া দেখতে গেলে)। বিজ্ঞান বনাম ধর্ম, এই তর্কে যায় আধাশিক্ষিতরা, যারা না জানে বিজ্ঞান না জানে ধর্ম।

আর বিজ্ঞানের সাথে মুসলিমদের কনফ্লিক্ট ছিলো না আগে। খ্রিস্টানদের ছিলো। মধ্যযুগ পর্যন্ত মুসলিমরাই জ্ঞান বিজ্ঞানরে এগিয়ে নিয়ে গেছে। বিজ্ঞানের সাথে মুসলিমদের দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিলো অটোমানদের পতনের পর থেকে শুরু। এখন এই দূরত্ব কমে আসতে শুরু করেছে আবার। এটা কেটে যাবে।

ইন্টেলেক্ট আর ইনটুইশন এক হয় যখন, তখন কী হতে পারে তার একটা বাস্তব প্রমাণ স্টিভ জবস। স্টিভ জবস নিজে বলে গেছেন, পশ্চিমারা শুধুমাত্র ইন্টেলেক্ট দিয়ে চলে আর দক্ষিন এশিয়ার লোকজন ইনটুইশন দিয়ে। অ্যাপলের প্রোডাক্টগুলো ডিজাইন করার সময় তিনি শুধুমাত্র ইন্টেলেক্টের উপরে ভরসা করেন নাই, ইনটুইশন ব্যবহার করেছেন। মাইক্রোসফট ও গুগলের সাথে অ্যাপলের প্রোডাক্টের পার্থক্যের জায়গাটা তৈরি করেছে এই বিষয়টা।

বাংলাদেশীদের নিয়ে আমি এত আশাবাদী হওয়ার কারণও এটা। গড় বাংলাদেশীদের ব্রেইন অনেক ভালো এবং ইনটুইশন ও অসাধারণ কিন্তু ইন্টেলেকচ্যুয়ালি পিছিয়ে আছে। এই জায়গাটা নিয়ে আমি কাজ করতে চাই। এটা নিয়ে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি