The Post Corona Era
২০২০ এর মাঝামাঝি কিংবা ২০২১ সাল থেকে আমরা এই নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের কারণে গত বিশ বছর ধরে পৃথিবী অনেক দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছিলো। পোস্ট করোনা এরা যুক্ত করেছে নতুন আরেকটা ডাইমেনশন। অতীতের হিসাব-নিকাশ এমনিতেই অচল হয়ে পড়েছিলো এখন পুরোপুরি বদলে যাবে।
করোনা পরবর্তী যুগের হিসাব নিকাশ যারা বুঝবে না তারা ক্যারিয়ার, ব্যবসা-বানিজ্য, রাজনীতি; কোনটাতেই ভালো করতে পারবে না।
ভবিষ্যতে স্মুথ জীবন চাইলে কোন কৃষকরে বিয়ে করেন যার অনেক জমি আছে। এবং কৃষি বিষয়ে ডিগ্রী না থাকুক, সেল্ফ স্টাডি যেন থাকে।
ইভ্যালি বন্ধ হবে না বা পালিয়ে যাবে না। ওরা যে বিজনেস মডেল ফলো করতেছে, এটা প্রফিটেবল। অনেকে পিরামিড স্কিমের সাথে গুলিয়ে ফেলতেছেন। ফলে ভাবতেছেন যে পালিয়ে যাবে। তবে, মিডিয়া যদি পেছনে লাগে তাহলে ওরা এই দুই/তিন বছর সময়টা পাবে না। ঐদিকটা তারা ভালোই ম্যানেজ করতে পারতেছে বইলা মনে হইতেছে (এখন পর্যন্ত)। প্রথম আলোর রিপোর্টটা ওদের মার্কেটিং এর কাজে লাগছে (আমি শিওর না এর জন্য প্রথম আলোরে ওরা পে করছে কিনা)।
ইভ্যালি যদি দুই/তিনশ কোটি টাকা হাতে নিয়ে নামতে পারতো তাহলে সকল অর্ডার ৪৫ দিনের ভেতরেই ডেলিভারি দিতে পারতো। ঐ পরিমান টাকা তারা পাবলিকের টাকা খাটিয়ে সহজেই তৈরি করে নিতে পারবে (কয়েক বছর লাগবে হয়তো), অথবা বড় কোন ইনভেস্টর চলে আসবে।
কাজটা ওরা ঠিক করতেছে না বেঠিক, এই আলাপে আজকে যাবো না।
মানুষের একদম কোর চাহিদা মূলত তিনটা। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান। এর ভেতরে বাসস্থান আর যথেষ্ঠ বস্ত্র ছাড়াও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু খাবার ছাড়া সম্ভব না। ধরেন, পৃথিবীতে যদি খুব বড় ধরনের কেওয়াস লেগে যায়, তখন শুধুমাত্র কৃষি নির্ভর দেশগুলো সার্ভাইব করবে, বাকীরা.. যারা খাদ্য আমদানী করে টিকে থাকে, তারা সার্ভাইব করবে না। আবার, যাদের খাবার উৎপাদন যন্ত্র ও প্রযুক্তি নির্ভর, তাদের পক্ষেও কঠিন হবে (যেমন ইউরোপ-আমেরিকা)। শুধু কৃষি নির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সম্ভবত পৃথিবীতে এক নাম্বার। মানে, এখানকার মাটি কোনরকম সার-যন্ত্র ছাড়াই এমনি ফসল ফলানোর উপযোগী। যেটা এক্সট্রিম সিচ্যুয়েশনের জন্য জরুরী। মানে, আপনার সার নাই, যন্ত্র নাই, প্রযুক্তি নাই... বীজ মাটিতে ফেলে দিলেন আর ফসল হলো, খেয়ে বেঁচে রইলেন। এই সুবিধাটার জন্য পৃথিবীর সবচাইতে খারাপ সময়েও আমরা টিকে থাকবো।
আধিপত্যবাদী সম্রাজ্য টেকে না বেশীদিন। নিজেদের সেরা ভাবা আর অন্যদের তুচ্ছ ভাবা এমন একটা অযোগ্যতা, যেটা শেষ পর্যন্ত নিজের ধ্বংসের কারণ হয়। এই কারণে রোমানরা হারাইয়া গেছে, আর কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারে নাই এবং পারবেও না (গ্রীক আর ইটালিয়ানদের এ্যাটিটিউড খেয়াল করলে আপনি এইটা বুঝতে পারবেন)। পারস্য সম্রাজ্য হারিয়ে গেছে, আর কখনো ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবে না। অটোমানদের পতন হইছে (যখনই তারা অংহকারী হয়ে উঠছে, তার পর থেকে তাদের পতন শুরু)। জার্মানরা এত যোগ্য হওয়ার পরেও পারে নাই। ফরাসীরা পারে নাই, তাদের চাইতে একটু কম নাক উঁচা বৃটিশরা পারছে। আরবরা পারে নাই, কোনদিন পারার সম্ভবনাও নাই। তারপর এই রোগ দেখা গেল ট্রাম্প আর মোদীর ভেতরে। তার জন্য আম্রিকা আর ভারতরে বড় মূল্য দিতে হচ্ছে।
চাইনিজদেরও এই রোগ আছে, ফলে ওরাও বড় কিংবা দীর্ঘ মেয়াদী সম্রাজ্য তৈরি করতে পারবে না।
দু'টো বড় বিপদ আমাদের দিকে এগিয়ে আসতেছে—
১) আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স আর টোটাল অটোমেশনের ফলে স্বস্তা গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। পশ্চিমারা তখন নিজেরাই গার্মেন্টস সেটাপ করে ফেলবে। চীন এর ভেতরে এই দিকে জোরেশোরে আগাচ্ছে। গার্মেন্টস আমাদের অর্থনীতির অনেক বড় জায়গাজুড়ে আছে। এই জায়গাটা হারালে আমাদের অবস্থা ভেনিজুয়েলার মত হয়ে যাবে।
২) আমাদেরকে মাঝারি উন্নত দেশ ঘোষণা দিয়ে গরীব দেশ হিসেবে যেসব বানিজ্যিক সুবিধা আমরা পেতাম, সেগুলো সব বন্ধ করে দেয়া হবে। আমরা যদি সত্যিই উন্নত হয়ে যেতাম, তাহলে সমস্যা ছিলো না। সমস্যা হলো, আমরা উন্নয়নটা হচ্ছে একটা বাবল। এটা যেকোনদিন বার্স্ট করবে। তারপর পরিস্থিতি কোথায় যাবে, কল্পনা করাও কষ্টকর!
ব্যাংকিং সেক্টর ও অন্যসব সেক্টরের আলাপ বাদই দিলাম। তো, এসব বিপদের মুখে আমাদের প্রস্তুতি কী?
আগামী এক দশকের ভেতরে 'ক্যারিয়ার' হবে সবচাইতে আলোচিত টপিক। গত বই মেলায় যে এতগুলো মোটিভেশনাল বই টপ সেলার হলো, এটাও তার নমুনা।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ও অটোমেশনের যুগের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে এমন সব পেশা থেকে দূরে থাকা উচিত যেখানে স্কিল ও ব্রেইনের ব্যবহার নেই। এমন কোন জব থেকে দূরে থাকুন যেখানে আপনার স্কিল ডেভেলপ কিংবা যোগ্যতা বাড়ার কোন সুযোগ নেই।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিনে টেকনোলজি নির্ভর জবগুলোর সাসটেইনেবিলিটি খুব লো হবে। ভালো কোন ক্যারিয়ার কনসাল্টেন্টের সাহায্য নিন যিনি আধুনিক প্রযুক্তি ও এর বিপদগুলো সম্পর্কে সচেতন।
যদিও এই যাত্রা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাওয়ার সম্ভবনা নাই বললেই চলে, তবুও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কখনো না কখনো অবশ্যই লাগবে। যতদিন এই ঝুঁকির ভেতরে আমরা আছি, ততদিন দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকা ভালো। দুর্যোগ মোকাবিলার ভালো উপায় হচ্ছে সবচাইতে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা। সুতরাং ধরে নেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগবে, আজ না হোক কাল। তারপর কী হবে?
পৃথিবী এখন এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে পৃথিবীর বর্তমান সকল টেকনোলজি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা সবচাইতে বেশী। কেউ যুদ্ধ জেতার জন্য পৃথিবী ধ্বংস না করলেও হেরে যাওয়ার মূহুর্তে 'আমিও নাই তুমিও নাই কেমন মজা হবে' টাইপ আনন্দ নেয়ার জন্য এই কাজটা করবে। এটাকে বলে consolation যার ভালো কোন বাংলা প্রতিশব্দ নাই।
তো তারপর কি হবে বলেন তো? জীবিকার তাগিদে পৃথিবীর মানুষকে আবার কৃষিতে ফিরে যেতে হবে। চিকিৎসার জন্য ভেষজে (যদিও এখনি মানুষ ভেষজের পথে রওনা দিয়েছে)।
আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন বাধ্যতামূলক কৃষিবিজ্ঞান ছিলো। এখন আছে কিনা জানি না, তবে থাকা জরুরী। সাথে আউট বই হিসেবে আরো কিছু কৃষি বিষয়ক বই সবার পড়া উচিত, সম্ভব হলে প্রাকটিক্যালি কিছুদিন কৃষি কাজও করা উচিত। আর প্রতিটা ফ্যামিলিতে কমপক্ষে একজনের ভেষজ নিয়ে পড়াশোনা থাকা উচিত, প্রাকটিক্যাল সহ।
এই ব্যপারটা পারিবারিক ঐতিহ্যে পরিনত করুন। আপনার না হোক, পরবর্তী প্রজন্মের অনেক কাজে আসবে।
আরেকটা ব্যপার, এরকম কোন ব্যপার ঘটে গেলে বাংলাদেশের মত পলিবিধৌত ভূমিগুলো হবে স্বর্ণের খনির মত। সুতরাং দেশ থেকে পলায়নরত বন্ধুগন, দেশে কিছু জায়গা জমি কিনে রাইখেন।
মুভিটা দেখেছি গতকাল রাতে। একবার একা পুরোটা দেখার পর Farah সহ আরেকবার পুরোটা দেখলাম। ভালো মুভি। মুভিটাতে যে ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা বলা হয়েছে সেরকম কিছু হওয়ার সম্ভবনা খুব একটা আছে বলে মনে হয় না, তবে এতে কোন সন্দেহ নাই যে মানুষ শেষ পর্যন্ত আবার কৃষি কাজেই ফিরে যাবে বা যেতে হবে। কৃষি হচ্ছে আমাদের সভ্যতার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন জিনিষ, যদিও কৃষকদেরকে আমরা সবচাইতে কম মূল্যায়ণ করি।
Interstellar মুভিতে যে খাদ্য সংকটের বিপর্যয় দেখানো হয়েছিলো এই বিপর্যয় পুরো পৃথিবীতে কখনো না আসলেও বাংলাদেশ কিন্তু এরকম একটা বিপর্যয়ের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। দেশের প্রতিটা বাজারে গেলে আপনি প্রচুর খাদ্যদ্রব্য দেখতে পাবেন ঠিকই, কিন্তু এগুলোকে আসলে খাবার বলাটা ঠিক হবে না। কৃষি জমি বিষাক্ত হওয়া থেকে শুরু করে প্রসেসিং এর সময়ে মেশানো ভেজালের পরিমান বাড়তে বাড়তে আমাদের দেশের খাদ্যদ্রব্য এখন আর খাওয়ার উপযোগী নেই। ইদানিং প্রায়ই ভাবছি গ্রামের দিকে প্রচুর জমি কিনে একটা খামার বাড়ি তৈরির কথা। এখন পর্যন্ত উচ্চমূল্যে অর্গানিক ফুড পাওয়া যাওয়াতে উচ্চবিত্তরা কিছুটা নিরাপদে আছে, কিন্তু এটা বেশিদিন থাকবে না। Interstellar মুভিটার মত আমাদের দেশে খাওয়ার উপযোগী শস্য ফুরিয়ে আসছে। এখন হয় এই দেশ থেকে পালাতে হবে নয়তো গ্রামের দিকে গিয়ে খামার বাড়ি তৈরি করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিডনি ড্যামেজ আর ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে হবে।
বিপদটা কিন্তু Interstellar মুভির চাইতেও ভয়াবহ।