১৯৭২ সালে MIT-র একটা গবেষণার ফল থেকে বলা হয়েছিলো যে ২০৪০ সাল নাগাদ বড় ধরনের সামাজিক বিপর্যয় হবে (সোসাইটি কলাপস)। ১৯৭২ সালে অনেকগুলো প্যারামিটারের অভাব ছিলো MIT-র সেই গবেষণায়, যেগুলো এড করে ২০২১ সালে একটা ফলো-আপ রিসার্চ করে ডাচ ইকোনমিস্ট Gaya Herrington, যেটার ফলাফল দেখা যাচ্ছে এই গ্রাফে। এক কথায়, ২০৪০ (দুই হাজার চল্লিশ) এর অনেক আগেই সব কলাপস করবে যদি এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে থাকে।
গ্রাফটায় খেয়াল করেন, কিভাবে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল আউটপুট কমতে শুরু করেছে। এটা হবে মূলত যথেষ্ঠ ইয়ং পিপলের অভাবে। চীন-জাপান, ইউরোপের বার্থ রেট নেগেটিভ। ফলে একটা সময় পরে এসব এলাকা বুড়ো-বুড়িদের অঞ্চলে পরিনত হবে। বয়স্কদের তো প্রোডাক্টিভিটি নাই। যথেষ্ঠ পরিমানে ইয়ং না থাকার ফলে ওসব দেশগুলো খুব দ্রুত কলাপস করবে।
অন্যদিকে, আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ও মুসলিম দেশগুলোতে জনসংখ্যা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাবে। আরেকটা প্রেডিকশনে দেখেছিলাম আমাদের ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জনবহুল সিটি হতে যাচ্ছে (লিংক দিলাম কমেন্টে)।
আমাদের এই জনসংখ্যার সবচাইতে ভালো দিক হচ্ছে ইয়ং পপুলেশন। ফলে, আমরা যদি নিজেদের যথেষ্ঠ যোগ্য করে তুলতে পারি, পৃথিবীর নেতৃত্ব এমনিতেই আমাদের হাতে চলে আসবে। উৎপাদন সব আমরাই করবো। এমনকি চীনও এই দিকে ফেইল করবে, তরুন জনগোষ্ঠীর অভাবে। সুতরাং সেভাবেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সামনে আছে শুভ দিন (আমাদের জন্য আরকি)।
পরিস্থিতি কত দ্রুত খারাপ দিকে যাচ্ছে, ব্যবসায়ীরা সবচাইতে ভালো টের পাচ্ছে। বাংলাদেশ কিন্তু প্রডিউস করে না খুব বেশী জিনিষ। ব্যবসাগুলো দাঁড়িয়ে আছে মূলত ইমপোর্টের উপরে। আর ইমপোর্ট বিষয়ক কোন সিদ্ধান্তের ফল সাথে সাথে টের পাওয়া যায় না। কমপক্ষে পাঁচ/ছয় মাস লাগে বুঝতে।
আজকে ইমপোর্টে রেস্ট্রিকশন দেয়া মানে পাঁচ/ছয় মাস পরে ঐ ইমপোর্টের সাথে রিলেটেড ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া। ফ্যাক্টরিগুলোর উৎপাদনে প্রভাব পড়ে এতে। রিটেইল মার্কেটেও পন্যের অভাবে ব্যবসা সীমিত হয়ে আসে। ফলে, ব্যবসায়ীরা নিজেদের বাঁচাতে লোক ছাঁটাই করতে বাধ্য হবে। লোক ছাঁটাই হওয়া মানে লোকজনের ক্রয়ক্ষমতাও কমে যাওয়া। ক্রয়ক্ষমতা কমা মানে ব্যবসা কমে যাওয়া। ব্যবসা কমে যাওয়া মানে আরো লোক ছাঁটাই হওয়া। এভাবে পরিস্থিতি খুব দ্রুত খারাপের দিকে যায়।
ফুড, আইটি, চিকিৎসা আর এডুকেশন। এই চারটা ইন্ড্রাস্ট্রির লোকজন কোনভাবে টিকে যাবে, বাকী সবাইকে ভুগতে হবে। সে আপনি এখন যত ভালো অবস্থাতেই থাকেন না কেন।
যে অবস্থার দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ, বহু লোক ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হবে।
গত ১৫ বছরে মিছিলে গুলি করে মানুষ মারার বিষয়ে আমজনতা ও “বুদ্ধিজীবি” মহলের তেমন কোন আপত্তি যে দেখা যায় নাই, এটা সকল রাজনৈতিক দলের জন্যই বিপদজনক।
সামনে খারাপ সময় আসতেছে বলে নাকি শুধু ভয় দেখাই। এবার কিছু আশার আলোও দেখাই—
১) কিছু জায়গা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সে দিয়ে কাজ হবে না, এসবে হিউম্যান লাগবেই। এদেশের মানুশের গড় আইকিউ অনেক ভালো। শুধুমাত্র বাজে একটা শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের পুরো ইয়ুথটা ধ্বংস করে দেয় বলে এরা ভালো করতে পারে না। যদি শিক্ষা ব্যবস্থার এই ধ্বংস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন, সেল্ফ লার্নিং এ ফোকাস করতে পারেন, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনেক সুযোগও তৈরি হবে। আর যেহেতু ভবিষ্যতে রিমোট জব অনেক বাড়বে, তাই বাংলাদেশে বসেই আপনি সেসব জব করতে পারবেন।
২) ভবিষ্যতে ফিকশানের চাহিদা অনেক বাড়বে। খুব খারাপ সময় আসলে পাবলিক এন্টারটেইনমেন্টের পেছনে যেহেতু অনেক খরচ করতে পারবে না সেহেতু তারা ফিকশান থেকে এই চাহিদা মেটাবে। ফলে, যাদের কল্পনা-শক্তি ভালো, তারা লেখালেখিতে মনোযোগ দিতে পারেন।
৩) নন-ফিকশানের চাহিদাও অনেক বাড়বে। বিশেষ করে স্কিল ডেভেলপ বিষয়ক কনটেন্টের। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশীরা এক্ষেত্রে অনেক ভালো করতে পারবে। এদেশের লোকজনের বুদ্ধিমত্তা তুলনামূলকভাবে অন্যসব দেশ থেকে ভালো। ছোটবেলা থেকে একটু সিরিয়াস হতে হবে এসবে অংশ নেয়ার জন্য।
৪) কৃষিতে আমাদের ভবিষ্যত ভালো। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন বিষয়ক শিক্ষার বিষয়ে একটু সিরিয়াস হলে অনেকেই ভবিষ্যত পৃথিবীর চাহিদা মেটানোর উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারবেন নিজেকে/নিজেদের।
৫) আমাদের এখানে পারিবারিক বন্ধন এমনিতেই অনেক ভালো। কিছু আধা-শিক্ষিত লোকজন বাদে সকলেরই ফ্যামিলি ভ্যালু মোটামুটি ভালো। এটায় আরো ফোকাস করা গেলে এই বন্ধন আরো উন্নত করা সম্ভব। এটা আমাদেরকে অনেক বিপর্যয় থেকেই রক্ষা করবে।
এই পাঁচটা বিষয় নিয়ে একটু ভাবেন, কাজ করেন। আর শেখার চেষ্টা করেন। মুখস্ত-বিদ্যা থেকে বের হয়ে আসেন। আমরা টিকে যাবো এভাবেই।
তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ানোর ফলে বড় ধরনের যেসব বিপদ আসতে যাচ্ছে তার ভেতরে একটা হচ্ছে কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়া। ফসল ফলিয়ে যদি লাভ করতে না পারে, যদি নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে আমাদের খাদ্য উৎপাদন করতে হয় তাদেরকে, সেটা তারা কেন করবে? এখন যদি কৃষকরা উৎপাদনে না যায়, সেটার ফল আপনি দেখতে পাবেন আরো ৬ মাস থেকে এক বছর পরে।
এভাবে চলতে থাকলে দেশে বড় ধরনের দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে যাতে কোটি কোটি মানুশ মারা যেতে পারে।
ভবিষ্যতে চাষের জমি যেমন গোল্ড মাইনের মত মূল্যবান হয়ে উঠবে তেমনি পরিষ্কার পানযোগ্য পানি হবে (বর্তমানের) তেলের খনির চাইতেও গুরুত্বপূর্ন। আর বাংলাদেশ এই দু'টোরই বেস্ট সোর্স। একসময় আমরা পানযোগ্য পরিষ্কার পানি রপ্তানি করে পেট্রোডলারের মতই আয় করতে পারবো।
বাড়ি-গাড়ি না কিনে কৃষি জমি কিনেন। ভবিষ্যতে গোল্ড মাইনের চাইতেও দামী হবে কৃষি জমি।
জনগনরে বিভক্ত রাখা হচ্ছে ক্ষমতাশীনদের একটা গুরুত্বপূর্ন এজেন্ডা। কারণ, পাবলিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলে পৃথিবীর কোন সেনাবাহিনী বা কোন বাহিনীর পক্ষেই সেটার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নাই। তাই কখনো ধর্ম, কখনো জাতীয়তাবাদ, কখনো এটা-সেটা যা যা আছে, সবকিছু ব্যবহার করে শাসক-গোষ্ঠী জনগনরে বিভক্ত করতে থাকে। হাজার হাজার বছর ধরে তাই হয়ে এসেছে।
তারপর... তারপর যখন তারা বিপদে পড়ে, তখন জনগনরে এক হতে বলে। ঐক্যবদ্ধ হতে বলে। কারণ, নিজেদের স্বেচ্ছাচারীতার জন্য তাদের নিজেদের রাজত্বই তখন ধ্বংসের মুখে।
পৃৃথিবীর জনগন অবশ্য এক হয় একসময়। এসব অ্যাম্পায়ারদের বিরুদ্ধে। ইতিহাসে ঘুরে ঘুরে এরকম অনেকবার ঘটেছে। সব ভেঙ্গেচুরে আবার নতুন করে তৈরি করেছে পাবলিক। আমরা সম্ভবত সেরকম একটা সময়ের সাক্ষী হতে যাচ্ছি আবারো। আগামী পঞ্চাশ-ষাট বছরের ভেতরে সব ভেঙেচুরে নতুন করে দাঁড়াবে আবার।
Winter is coming!