পরিকল্পনা

তিন দিনে ৬৫৮১ টা পোস্টের ভেতরে ৫৩০ টা পোস্ট শর্ট করলাম। নিজের পুরানো পোস্ট পড়তে ভালোই লাগে। তবে একইসাথে কয়েকটা বিষয় খেয়াল করলাম—

১) লেখালেখির ক্ষেত্রে ফেসবুক প্রচুর ডিসট্রাক্ট করে। তবে ফেসবুকের কারণেই এত বিচিত্র সব বিষয়ে লেখালেখি হয়।
২) ফেসবুকের লেখাগুলোর অধিকাংশই ছোট হওয়াতে ভবিষ্যতে কনটেক্সট না জানা থাকায় অর্থহীন গার্বেজে রুপান্তরিত হবে। তাই এখন থেকে আমার সাইটে প্রতিটা লেখার সাথে কনটেক্সট যুক্ত করে রাখবো।

এটা খুবই ভালো ব্যাপার যে ফেসবুক বন্ধ হয়ে গেলেও লেখাগুলো হারাবে না। কিন্তু মন্তব্যগুলো তো হারিয়ে যাবে। সাইটে মন্তব্যের অপশন যোগ করছি তাই। সেই সাথে প্রতিটা লেখার সাথে রিলেটেড থট, নিউজ লিংক ও অন্য সব ধরনের লিংক যোগ করে রাখবো। ভবিষ্যতে এগুলো বেশ কাজে দিবে।

Thinkr CMS দিয়ে যারা নিজের সাইট বানাবেন, তারাও এই অপশনগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। আগামী মাসের শেষের দিকে Thinkr CMS পাবলিকের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। চেষ্টা করবো যতটা সম্ভব কম প্রাইসে দিতে।

ক্যারিয়ার ও জীবনের কয়েকটা মেজর সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে।

১) বর্তমানে হাতে থাকা দু'টো ক্লায়েন্টের কাজ আগামী অক্টোবর নাগাদ শেষ হবে। এরপর আর নতুন কোন ক্লায়েন্ট নেব না আমরা।
২) ২০২৩-২৪ সাল কাটাবো বাংলাদেশের জেলায় জেলায় ঘুরে। সপ্তাহে একটা জেলায় গেলে দেড় বছরের ভেতরে পুরো বাংলাদেশ কাভার করা সম্ভব।
৩) নভেম্বর-ডিসেম্বর ফ্যামিলির সাথে ঘুরতে বের হবো। ফলে, আমার যাযাবর জীবনের শুরু হতে যাচ্ছে আগামী নভেম্বর থেকে।

এই ঘুরাঘুরির সময়টা কাজের পাশাপাশি বইগুলো লিখে শেষ করবো সব। সেই সাথে একটা ইউটিউব চ্যানেল শুরু করবো বাংলাদেশের উপরে। ৬৪ জেলায় ঘুরতে ঘুরতে জেলাগুলোর উপরে প্রামান্যচিত্র তৈরি করবো।

দেখা যাক কী হয়। আল্লাহ ভরসা!

Thinkr Note (আমাদের ড্যুয়াল স্ক্রিন ট্যাব) এর দাম ২০০ ডলারের উপরে চলে যাচ্ছে দেখে কম দামের ভেতরে একটা ই-রিডার এর ডিজাইন করার চেষ্টা করছি। সবচে কমদামি কিন্ডেলের দাম তো ১২-১৫ হাজার। এর অর্ধেক দামে যদি এটা আনা সম্ভব হয়, তাহলে অনেকের হাতেই ই-রিডার পৌঁছে দেয়া যায়।

৭ ইঞ্চি x ৩ ইঞ্চি সাইজের এই ই-রিডারে এমন দুটো অতিরিক্ত সুবিধা থাকবে যা কিন্ডলে নেই—
১) পোর্টেবিলিটি (কিন্ডলের অর্ধেক ওজন ও সহজে বহনযোগ্য)
২) রেগুলার বুক সাইজে বই পড়ার সুবিধা (ল্যান্ডস্কেপ)

ল্যান্ডস্কেপ মুডে ২.৫ ইঞ্চিতে পৃষ্ঠার পুরোটা একসাথে দেখা যাবে না; যা হয়তো কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করবে, তবে এতে পড়ায় ফোকাস বাড়বে। আরেকটা সুবিধা হলো খুব ছোট আর হালকা হওয়াতে এক হাতে ধরেই ঘন্টার পর ঘন্টা বই পড়া যাবে। পেপার জিসপ্লের কারণে এক চার্জে এক সপ্তাহ ব্যবহার করা যাবে কমপক্ষে।

একজন নিয়মিত পাঠক হিসেবে আমি এরকম কিছু পছন্দ করবো সন্দেহ নাই, কিন্তু অন্যরা কিভাবে নিবে সেটাই দেখার বিষয়।

প্যারেন্টিং - ৫১
চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে কার্যকরী কিছু লিখতে চাচ্ছি, তাই এত সময় লাগছে প্যারেন্টিং বইটা লিখতে। তাছাড়া এই টপিকের প্রায় সব গবেষণা ও বই লেখা হয়েছে পশ্চিমাদের প্রেক্ষাপটে। আমাদের সাথে ওদের বাস্তবতার অনেক অমিল আছে। তাই, একই ধরনের প্যারেন্টিং আমাদের এখানে কম ইফেক্টিভ হবে।

প্যারেন্টিং নিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত যে কয়টা বই পড়লাম, সব কয়টাই দেখলাম ইংরেজী বইগুলোর কপি-পেস্ট। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট মিসিং ওখানে। চতুর্থ-শিল্প বিপ্লবের বাস্তবতাও উপেক্ষিত। এরকম কপি-পেস্ট টাইপ কিছু লিখতে চাচ্ছি না। ফলে একটু অপেক্ষা করতে হবে আপনাদের।

সবচাইতে কম খরচে ব্যালেন্স ডায়েট নিশ্চিত করার জন্য একটা লিস্ট বানানোর কথা ভাবছি অনেকদিন ধরেই। এটা এসময় খুব কাজে দিতো পাবলিকের। নিউট্রিশন বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে আসেন প্লীজ!

অ্যাবিউস না করলে ফেসবুকের Crisis Response টুলটা বেশ কাজের একটা জিনিষ। বন্যাদূর্গত এলাকার আওতায় আমার ফ্রেন্ড লিস্টের ৯৮ জন আছে দেখলাম, তার ভেতরে ১৪জন নিজেকে সেফ মার্ক করেছে। এই ১৪ জনের মাঝে আমার পরিচিত কয়েকজন আছে। তারা নিরাপদ আছে জেনে ভালো লাগছে।

এর সাথে আরেকটা ছোট ফিচার যদি ফেসবুক যোগ করতো, এরকম যে— কারো কোন সাহায্য দরকার, সে ওখানে সেটা ফ্ল্যাগ করে দিলো। যেমন, কারো একটা নৌকা দরকার। এই Crisis Response টুল থেকেই যদি সেটা জানা যেত তাহলে হয়তো ফেসবুকে থাকা পরিচিত কাছের কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে যেতে পারতো।

আমি ভাবতেছি এরকম একটা Crisis Response টুল মডিউল হিসেবে যোগ করবো থিংকার ক্লাবে। যারা Thinkr CP ব্যবহার করে নিজেদের ক্লাব/সংগঠন ম্যানেজ করবেন, তারা এই মডিউলটা ফ্রি পাবেন। ফলে, নিজেদের ক্লাবের সদস্যদের কেউ এধরনের দুর্যোগে একে-অপরকে হেল্প করতে পারবে।

পুনশ্চঃ এরকম বিপদে পড়ে হেল্প চাওয়ার একটা প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করছে এরকম কয়েকজন আমার অফিসে এসেছিলো দুই বছর আগে। তারা সম্ভবত আর আগাতে পারে নাই। আসলে, শুধুমাত্র এরকম একটা হেল্প চাওয়ার প্লাটফর্ম দাঁড় করানো কঠিন, যেহেতু এটা থেকে রেভিনিউ জেনারেট পসিবল না (কিংবা উচিতও না)। কিন্তু যারা বিভিন্ন সংগঠন চালায়, তারা নিজেদের সংগঠনের অংশ হিসেবে এটা চালু করতে পারেন। তাতে তাদের সংগঠনের সদস্যদের মাঝে একটা নিরাপত্তাবোধ তৈরি হবে। যে— 'আমি বিপদে পড়লে তো আমার সংগঠনের অন্য সদস্যরা এগিয়ে আসবেন।'

অনেকেই আমাকে বলে— ভাই আপনি আমেরিকা চলে যাচ্ছেন না কেন?

আমেরিকা বা দেশের বাইরে যাওয়াটা এদেশের পাবলিকের কাছে একটা স্বপ্নের মতন ব্যাপার। কিন্তু, বাস্তবতা সেরকম নয়। ধরেন, আমি যদি আমেরিকা চলে যেতাম, তাহলে ভার্সিটিয়ানের মত প্রজেক্ট আমার করা হতো না। জীবন নিয়েই দৌড়ের উপরে থাকতাম।

আপনি ভাবছেন— ভালো জব করে প্রচুর উপার্জন করলে সম্ভব হতো? নাহ! আমার ভাই ঘন্টায় ২৫০ ডলার ইনকাম করে। ব্যস্ততার কারণে উনার পক্ষেও ভার্সিটিয়ানের মত প্রজেক্ট দাঁড় করানো সম্ভব না। উনি আমার প্ল্যান শুনে হাসতো, বলতো এত বিশাল জিনিষ না বানিয়ে ছোটখাটো কিছু বানাতে। দেশেও সফল অনেকে আমাকে একই উপদেশ দিয়েছে। ছোটখাটো কিছু তো ক্লায়েন্টদের জন্য সবসময়ই বানাচ্ছি। বড় কিছু বানানো তো একটা স্বপ্নের ব্যাপার। স্বপ্নের সাথে তো আর কম্প্রোমাইজ চলে না।

কয়েক বছর আগে পরিচিত এক ভাই আমেরিকা চলে গেলেন। উনারও এধরনের প্রজেক্ট করার স্বপ্ন ছিলো। ভাবছিলেন আমেরিকা গেলে অনেক সুযোগ পাবেন। হয়েছে উলটা। এখন আমাকে বলে— 'ভাই, সময়ই নাই আর। কোনকিছু করার সময় নাই। আমার সব স্বপ্ন শেষ।'

দেশে ফিরে আসতে বললে বলে— "এটা সম্ভব না। বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে যাওয়াটা হচ্ছে ওয়ান ওয়ে টিকেট। যাওয়া যায়, ফেরা যায় না।"

হ্যাঁ, চলে গেলে অনেক ভালো থাকবো হয়তো। কিন্তু ভার্সিটিয়ানের স্বপ্নটা আর বাস্তবে আসবে না। তাছাড়া, দেশে বসেই তো আমি আমেরিকার অফিস চালাচ্ছি। আমাকে যেতে হবে কেন? রিমোট রিক্রুটমেন্ট, রিমোট অফিস ম্যানেজমেন্ট, রিমোট প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট আমাদের অন্যতম কয়েকটা প্রোডাক্ট। আমাকেই যদি আমেরিকার অফিস আমেরিকায় গিয়ে চালাতে হয়, তাহলে এসব বানাচ্ছি কেন?

এমন না যে আমেরিকা বা দেশের বাইরে যাবো না। ভার্সিটিয়ানের জন্য আমাকে আমেরিকা ও ইউরোপ ঘুরতে হবে। যখন সময় আসবে যাবো।

জীবিকা টেনশন দূর করে দিতে পারলে প্রচুর ভালো লেখক-চিন্তক আমরা তৈরি করতে পারবো। অনলাইনে কত ধরনের আয়ের উপায় আছে। ইংরেজীতে দক্ষতার অভাবে এদেশের লোকজন সেগুলোর খোঁজ পায় না কিংবা পেলেও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে না।

ভালো করে ইংরেজী শিখেন। নয়তো আমরা আপনাদের সেসব পথ দেখিয়ে দিলেও আসলে লাভ হবে না তেমন।

কলেজ লাইফে থাকতে একটা হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বানিয়েছিলাম। ডিস্ট্রিবিউটেড এপ্লিকেশন ছিলো। ঐসময় এধরনের এপ্লিকেশন এদেশে নতুন জিনিস ছিলো ফলে দক্ষ লোকজন পাওয়া যেত না সাপোর্টের জন্য। কম্পিউটার কেনা, নেটওয়ার্কিং করে দেয়া, ক্লায়েন্ট-সার্ভার সেটাপ করা থেকে শুরু করে ট্রেইনিং পর্যন্ত আমাকেই করতে হতো। এই সুবাদে অনেকগুলো জেলায় ভ্রমণ করা হয়েছে, থাকা হয়েছে দিনের পর দিন। ভালোই লাগতো। এইসব কাজ এবং ভ্রমণ মিলে ৪১টা জেলায় যাওয়া হয়েছে। আর ২৩টা জেলার জন্য ৬৪ জেলা কভার করা হয়নি।

থিংকার পয়েন্ট তৈরির জন্য ৬৪ জেলায় ক্যাম্পেইনের যে পরিকল্পনা নিয়েছি, বেঁচে থাকলে এবার হয়ে যাবে ইনশা'আল্লাহ। এই ৬৪ জেলা ক্যাম্পেইন আগামী বছর শুরু করার প্ল্যান। আপাতত আনঅফিশিয়ালি কয়েকটা জেলায় ঘুরে আসবো ভাবছি। আজকে থেকে শুরু করলাম।

এটা পুরোপুরি আন-অফিশিয়াল ট্যুর। দু'টো উদ্দেশ্যে এই ভ্রমণ শুরু করেছি।
- প্রি-ক্যাম্পেইন একটিভিটিস এবং
- এলাকা বদল করলে প্রোডাক্টিভিটি কেমন বাড়ে, সেটা দেখা।

যদি ঢাকার বাইরে এভাবে ঘুড়ে বেড়ানোতে কোন সমস্যা না হয় এবং প্রোডাক্টিভিটি বাড়ে, তাহলে ঢাকায় আর স্থায়ী অফিস নেব না। আম্রিকান অফিসরে বলবো বাংলাদেশের দুই বছরের অফিস ভাড়া ও ইন্টেরিয়র করার টাকা একবারে পাঠিয়ে দিতে। সেই টাকা দিয়ে একটা RV কিনে ভ্রাম্যমাণ ট্রেলার অফিস বানাবো। অফিস ঘুড়ে বেড়াবে বাংলাদেশময়, সাথে আমরাও।

ঢাকার বাইরে অনেক ভালো ভালো লেখক-চিন্তক আছেন; নিভৃতচারী। দেশের সার্বিক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আপনাদের সামনে আসা জরুরী। আপনাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে পারলে এবং লেখালেখি ও প্রকাশনার স্পেস দেয়া গেলে দেশের সার্বিক বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় সেটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই, আপনাদেরকে দেশবাসীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই আমরা। থিংকার নেটওয়ার্ক আপনাদের পরিচিতি ও কর্ম দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে সাহায্য করবে। আর এজন্য আমাদের ৬৪ জেলা ক্যাম্পেইনে শুধুমাত্র আপনাদের জন্যই একটা বিশেষ চা-চক্র ইভেন্ট থাকবে।

ঢাকার বাইরের লেখক-কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও চিন্তকদের ভেতরে যারা এই চা-চক্রে যোগ দিতে চান, কষ্ট করে আমাকে ইনবক্সে টোকা দিন (আমার রেসপন্স করতে দুই/চার ঘন্টা দেরী হলে রাগ করবেন না দয়া করে)।

প্রতি জেলায় থিংকার ক্লাবের শাখা তৈরি এবং বুক পয়েন্ট নেটওয়ার্ক তৈরিতে যারা থাকতে চান, তারাও যোগাযোগ করতে পারেন।

ক্যাম্পেইন শুরু হবে আগামী বছরের প্রথম দিকে। এবছরের বাকীটা সময় আপনাদের সাথে নেটওয়ার্কিং চালিয়ে যেতে চাই। তাতে আপনাদের সুবিধাজনক সময়ে আপনার জেলায় ক্যাম্পেইন প্ল্যান করতে সুবিধা হবে।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি