যে জিনিষ মার্ক জাকার্বার্গ প্রথম থেকেই জানে সেটা গুগলের বুঝতে ১৬ বছর লাগছে। ১৬ বছর পর তারা রিয়েলাইজ করেছে যে ইউটিউব থেকে ডিসলাইক সরানো উচিত। যেহেতু পুরোপুরি সরাতে পারবে না, তাই কাউন্ট শো করা অফ করে দিচ্ছে।
আমি সবসময় বলি, ফেসবুকের জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে সবচাইতে বড় রিজনের একটা হচ্ছে ডিসলাইক বাটন না থাকা। মিলিয়ন মিলিয়ন পাবলিকের দাবীর মুখেও জাকারবার্গ ডিসলাইক এড করে নাই ফেসবুকে।
তো, যারা এটা নিয়া আমার সাথে এতদিন তর্ক করে আসলেন তারা এবার গুগলরে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তারা কেন ডিসলাইক রিমুভ করতেছে।
জীবন থেকে আমার সবচাইতে বড় শিক্ষাটা হচ্ছে- মানুশের সাথে ভালো ও ফেয়ার থাকা সবচাইতে ভালো পলিসি। হেল্প করা, গোচরে বা অগোচরে। এটা তারা নোটিশ না করলেও আপনি নিজে থেকে করতে থাকবেন। কোনধরনের ফলাফল আশা না করেই।
মজার বিষয় হলো, এগুলো সবসময় রিটার্ন করে। আপনার পথ তাদের সাথে একদিন ক্রস করবেই। আর মানুশ ভুলে না।
তবে, উলটোটাও ঘটে। যখন আপনি কারো জীবন পরিবর্তন করে দেয়ার মত ফেভার করবেন, তারা আপনার থেকে দূরে সরে যাবে। এমনকি আপনার ক্ষতি করারও চেষ্টা করবে। আমাদের নিজেদের ফ্যামিলিতেই দেখেছি এটা। যারা আমাদের বাসায় থেকে পড়াশোনা করে বড় হয়েছে, এরা পরবর্তীতে দূরে সরে গেছে। কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে আমাদের বিরুদ্ধে অন্যদের কাছে উলটা পালটা বলেছে। এটা তারা করে হীনমন্যতা থেকে, আই গেস! কারো জন্য খুব বেশী করলে তারা নিজেদেরকে আপনার থেকে ছোট ভাবতে থাকে। এর ফলে এরা আপনাকে সবসময় ছোট করার একটা দুর্বল চেষ্টা করে যেতে থাকে। সেল্ফ ডিফেন্স টাইপ ব্যাপার আরকি।
কিন্তু, নিজেদের ভেতর থেকে তারা জানে আপনি তাদের জন্য করেছিলেন। যতই আপনার পেছনে লেগে থাকুক, মানুশের সহজাত প্রভৃতি তাদেরকে এটা কখনো ভুলতে দিবে না। একদিন না একদিন তারা নিজেদের ভুল বুঝবেই। সুতরাং তাদের ব্যাপারে চিল!
তো, মূল কথা হচ্ছে- বি ফেয়ার, বি হেল্পফুল। ইটস এমাজিং!
অতৃপ্তি মানুশের মানুশের চিন্তা-ভাবনারে আটকে দেয়। এই যেমন, যার টাকা পয়সার অভাব তার সবকিছু টাকা-পয়সা উপার্জন কেন্দ্রিক হয়ে যায়। সে আটকে যায়, সবকিছুর ভেতরেই একটা ফাইন্যান্সিয়াল বেনিফিট খুঁজতে শুরু করে। চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান তার ভেতরে এইটা তৈরি করে। এইভাবে অতৃপ্তি মানুশের উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আর এই বাঁধাটা তৈরি হয় তার মনের ভেতরে। অতৃপ্তি তারে বেঁধে রাখে। পরের লাইন চিন্তা করতে দেয় না।
এই অতৃপ্তির সাথে ডিল করতে হয় মনের ভেতরে। নিজের সাথে। মানসিক শান্তিই আসলে সবকিছুর আউটকাম। একটা দামী ফোন কিনতে পারছেন না বলে যে অতৃপ্তিতে ভুগছেন সেটা নিজের সাথে আলোচনায় বসলেই দূর করা সম্ভব। দামী পোষাক পড়তেই হবে বা দামী রেস্টুরেন্টে খেতে যেতেই হবে, এমন তো না।
আরো কিছু টাকার মালিক হতে পারলে খুব ভালো থাকতেন, এরকম না ভেবে যেটুকু আছে সেটুকুতে কিভাবে ভালো থাকতে হয় খুঁজে বের করেন। মানসিক শান্তি অর্জিত হবে। আর মনে শান্তি থাকলে দেখবেন উন্নতিও হইতেছে। তবে, এই উন্নতি হওয়ারে টার্গেট করা যাবে না। ন্যাচারালি হতে দেন।
আবার, উন্নতি বলতে কী বুঝেন সেটা নিয়াও একটু ভাবেন। উন্নতি মানে বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়া বুঝা মানে হচ্ছে আপনি আটকে গেছেন। উন্নতির বহু ডাইমেনশন আছে। এই মাল্টি ডাইমেনশনে ঢুকতে হলে অতৃপ্তিরে ডিল করতে হবে আগে।
বাগান তত্ত্ব - ৭
একটা আমগাছরে তাল গাছ কইতেছে— তোমার তো ফলনের ঠিক নাই মিঞা! ডালপালা কাইটা ফেলো, সোজা হও! আমার মত তাল দিতে পারবা।
মানুষ নিজের গুরুত্ব বুঝতে পারে না বলেই বিভিন্ন বিষয় ও বস্তু নিয়ে অহংকার করে। লোক দেখানে কাজকর্ম করে।
বাগান তত্ত্ব - ৯
মানুষরে আমি দেখি একটা বাগানের মতন। মানুষের সকল জ্ঞান, ধ্যান-ধারণা, ট্রেইটগুলো সব গাছের মত। মনে করেন হিংসার গাছ, ভালোবাসার গাছ, বিজ্ঞানের গাছ, সাহিত্যের গাছ। একেকজনের বাগানে একেকটার অবস্থা একেকরকম। অনেকের বাগানে অনেক বিষাক্ত গাছ আছে। হয়তো তার বাগানে একটা দূর্লভ গাছের সন্ধান পেলাম। তখন নাকে রুমাল চেপে ধরে সেইগুলিরে পাশ কাটিয়ে আমি দূর্লভ গাছটার কাছে যাই। কারো কারো বাগান থেকে গাছের বীজ এনে নিজের বাগানে লাগাই। এতে আমার নিজের বাগান সমৃদ্ধ হয়।
বর্তমান সভ্যতায় চালাক-চতুর হওয়াটা পজেটিভ ব্যপার হিসেবে দেখা হলেও এটা আসলে নেগেটিভ ট্রেইট। দিন শেষে চালাক-চতুররা লাভবান হয় না। তাদের সবচাইতে বড় লস হচ্ছে তাদের কোন কাছের মানুষ থাকে না। সত্যিকার বন্ধু থাকে না।
চালাক আর বুদ্ধিমান হওয়ার ভেতরে পার্থক্য আছে।
Be intelligent, not clever!
মানুষের জীবন মাল্টি ডাইমেনশনাল। প্রতিটা ডাইমেনশনের আলাদা ওয়ালেট আছে, সেখানে আলাদা আলাদা কারেন্সী জমা হয়। টাকা-পয়সার ওয়ালেট, ইনফ্লুয়েন্সের ওয়ালেট, বন্ধুত্বের ওয়ালেট, বিশ্বাসের ওয়ালেট, ভালোবাসার ওয়ালেট। প্রতিটা ওয়ালেটের কারেন্সীর মূল্য আলাদা, বিনিময় হার আলাদা। কিছু কিছু কারেন্সীর সরাসরি বিনিময় হার নেই, এগুলো প্যাসিভ। এই যেমন- ইনফ্লুয়েন্স, বন্ধুত্ব, ও ভালোবাসা। কিন্তু মানুষের কাছে সবচাইতে ভিজিবল কারেন্সী হচ্ছে টাকা-পয়সা। ফলে, টাকা-পয়সার ওয়ালেট ভারী করার জন্য সে বাদবাকী ওয়ালেট খালি করে ফেলতে দ্বিধা করে না। অথচ, শুধু টাকার বিনিময়ে বাকী কারেন্সীগুলো পাওয়া যায় না।
বাগান তত্ত্ব - ৮
একটা নতুন ধারণা একটা বীজের মত। সেই বীজ থেকে চিন্তার গাছ তৈরি হয়। গাছটায় আপনি যত পানি (মনোযোগ) ঢালবেন, সে ততই ডালপালা মেলে বড় হতে থাকে। এই গাছে একসময় ফুল ও ফল হয়, সেই ফলে নতুন চিন্তার বীজ তৈরি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। নির্ভর করতেছে আপনার বাগানে আরো কত ধরনের গাছ আছে তার উপরে। মনে করেন আপনার বাগানে দশ রকমের চিন্তার বীজ থেকে দশ রকমের গাছ হইছে। দশ রকমের গাছে দশ ধরনের ফুল ফুটল। দশ ধরনের ফুল একে অপরের সাথে পরাগয়ান ঘটাইলে যেকোন গাছে নতুন ধরনের কোন বীজ তৈরি হইতেও পারে। সেই বীজ থেকে আবার ধরেন নতুন একটা গাছ হইলো। এইভাবে আপনার চিন্তার বাগান গড়ে ওঠে।
আপনি কত ধরনের চিন্তার সাথে পরিচিত এবং সেগুলো থেকে কত গাছ হইলো এই সেইসব গাছে কতটুকু পানি ঢাললেন, তার উপরে আপনার বাগানের বৈচিত্রতা নির্ভর করতেছে। সব বীজের গাছই যে ফুল-ফল দেয়া পর্যন্ত সার্ভাইভ করতে পারবে, এমনও না। দেখা গেল কোন একটা গাছে আপনি পানি ঢালা বন্ধ করে দিলেন, সেটা মইরা গেল। কিংবা.. সে ফুল ও ফল দেয়ার মত পুষ্টি পাইলো না। তাহলে সেই চিন্তা থেকে হওয়া গাছের ফুল হলো না, অন্য গাছের ফুলে সেটার প্রভাবও পড়লো না।
আবার ধরেন, আপনার বাগানে একটা বিষাক্ত গাছ আছে। সেটাতে আপনি বেশী বেশী পানি ঢালতেছেন। সেইখানে বিষাক্ত বিষাক্ত সব ফুল ফুটতেছে। আপনার বাদবাকী সুন্দর গাছগুলোর ফুলের সাথে সেই বিষাক্ত গাছের ফুলের পরাগয়ান ঘটতে পারে। তা থেকে যে বীজ উৎপাদন হবে, সেখানে সেটা কিছুটা বিষাক্ত তো হবেই। ঐদিকে বিষাক্ত গাছটায় যেহেতু বেশী পানি ঢালতেছেন সেহেতু সেইটার বীজ বেশী ছড়াইতেছে। এইভাবে আপনার বাগান ধীরে ধীরে একটা বিষাক্ত গাছের বাগানে পরিনত হইতেছে। আপনি এইসব বিষাক্ত বীজ অন্যের সাথে শেয়ার করতেছেন। তাদের সুন্দর বাগানে আপনার বাগান থিকা একটা বিষাক্ত গাছ গিয়া পড়লো। কেউ কেউ হয়তো সেই বীজের গাছে পানি কম দিলো, তাতে সে বাঁইচা গেল আপনার বিষাক্ততা থিকা।
কিন্তু যাদের এই বিষ ভালো লাগবো, তারা সেই বীজের গাছে বেশী বেশী পানি দিয়া নিজের বাগানরে বিষাক্ত করে ফেললো। তার বাগান থিকা সেও বীজ অন্যরে দিতেছে। এইভাবে হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষের বাগান বিষাক্ত হইলো। বিষাক্তদের পরিমান একদিন এমনভাবে বেড়ে গেল যে, সুন্দর চিন্তার বাগানের মালিক একেবারে হাতে গোনা হয়ে রইলো। এই হাতে গোনা কয়েকটা সুন্দর বাগান থেকেও এসময় অনেক বাগান হয় আবার। কারণ, বিষাক্তরা তো একসময় নিজের বিষে নিজেই মইরা যায়, বাকী বিষাক্তদেরও মাইরা ফেলে। তখন টিকে থাকে শুধুমাত্র কিছু সুন্দর বাগানের মালিকেরা। তবে, এইটা খুব দীর্ঘমেয়াদী ঘটনা। ততদিনে কতজন সাফার করে ফেললো।
সহজ জীবন - ৩ - // সার্কেল থিওরী //
আপনি প্রথমে একটা বৃত্ত আঁকবেন। বৃত্তের কেন্দ্রে আপনি আর আপনার অনেক কাছের মানুষজন থাকবে সেই বৃত্তের ভেতরে। তারপর আপনি সেই বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু ধরে আরো বড় একটা বৃত্ত আঁকবেন। সেখানে থাকবে আপনার আরেকটু কম কাছের লোকজন। এভাবে বৃত্ত এঁকে যাবেন, একের পর এক। তারপর, ঠিক করুন কাকে কোথায় রাখবেন। আপনার কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ পরিধিরও বাইরে থাকবে আপনার অপরিচিত লোকজন। (ছবি দেয়া হলো- প্রথম মন্তব্যে)
এবার, যারা আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে বা যারা আপনার সম্পর্কের মূল্যায়ণ করতে পারে না তাদেরকে ধীরে ধীরে বাইরের দিকে পাঠিয়ে দিন। মানুষ সাধারণত কাছের মানুষের ব্যপারে হতাশ হয় এবং সেই হতাশা থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়। ভুল মানুষকে কাছের মানুষ ভাবার ফলেই যত অশান্তির সৃষ্টি। সুতরাং যার অবস্থান যেখানে থাকা উচিত তাকে সেখানে পাঠিয়ে দিন, দেখবেন তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতে বা তাদের ভুল আচরণকে সহজভাবে নিতে কষ্ট হচ্ছে না।
কেউ আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে আপনি কিছু হারাচ্ছেন না, সে আপনাকে হারাচ্ছে। এটাই তার জন্য যথেষ্ঠ সাজা। আপনার এতে আপসেট হওয়া বা পাল্টা খারাপ ব্যবহার করার দরকার নাই। এতে আপনি যেমন নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে পারলেন তেমনি যে আজকে ভুল আচরণ করছে তার ভুল বোঝারও অবকাশ দেয়া হয়।
~
ত্রিভুজ আলম
উত্তরা, ঢাকা