প্যারেন্টিং বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা ও টিপস
                                  তাতিয়ানার আজকে ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হয়েছে। আগামী বছর থেকে সে ক্লাশ ওয়ানের ছাত্রী হবে। আমি ঠিক করেছি তাতিয়ানাকে এখন থেকেই স্বনির্ভরতা ও বাস্তব জ্ঞান অর্জনের শিক্ষা দেব। বাসার ভেতরে ওকে একটা স্মল বিজনেস খুলে দেব। সেখানে আমি এক হাজার + ফারাহ এক হাজার = দুই হাজার টাকা ইনভেস্ট হবে। তাতিয়ানা ওয়ার্কিং পার্টনার হিসেবে কাজ করবে। তিনজনের ৩০% করে শেয়ার, কোম্পানীর শেয়ার ১০%।
দুই হাজার টাকা ক্যাপিটাল দিয়ে তাতিয়ানা একটা বক্স, চা, কফি, শ্যাম্পু মিনি প্যাক ও এটা সেটা কিনবে, যেগুলো আমাদের প্রায়ই কিনতে হয়। বাইরে থেকে এসব জিনিষ আমরা আর না কিনে ২০% বেশী প্রাইসে ওর কাছ থেকে কিনবো। যতদিন পর্যন্ত % হিসাব ও করতে পারবে না, ততদিন আমরা প্রাইসট্যাগ লিখে দেব। কিন্তু, কোন জিনিষ কত টাকায় কিনলো এবং কতটাকায় বিক্রি করলো, এই হিসাব এখন থেকেই ওর নিজের করতে হবে। যোগ-বিয়োগ করে বের করবে, কত টাকা প্রফিট হলো। এতে যোগ-বিয়োগের বাস্তব প্রয়োগ সম্পর্কে ওর ধারণা পরিষ্কার হবে।  তারপর প্রতি মাসের  প্রফিটকে তিন ভাগ করে তিন পার্টনারের মাঝে বন্টন করবে। ভাগ করার ব্যপারটা কিভাবে কাজে আসে, এটা ওর কাছে পরিষ্কার হবে তাতে।
প্রতি মাসে ওর নিজের ভাগের টাকাগুলো জমিয়ে রাখবে অথবা রি-ইনভেস্ট করবে। টাকার পরিমান যথেষ্ঠ হলে একটা ব্লেন্ডার ও আনুসাঙ্গিক জিনিষপত্র কিনে জ্যুস কর্ণার খুলতে বলবো। এই জ্যুস কর্ণার যেহেতু  পুরোপুরি ওর নিজের প্রফিটের টাকায় গড়া, তাই এর পুরো মালিকানা ওর নিজের হবে। ফলে, জ্যুস কর্নার থেকে যা যা বিক্রি করবে তার পুরো প্রফিট ওর নিজের হবে। এতে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে ওর ধারণা তৈরি হবে। সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের জ্যুস, লাচ্ছি, স্যান্ডউইচ বানানো শিখবে। এই ব্যবসা থেকে টাকা জমাতে থাকবে আরো বড় কোন বিজনেস করার জন্য।
নিজের ছোট খাবারের দোকান চালানোর জন্য সেলফ সোর্সিং শেখাবো। বারান্দায় দুই/তিনটা টবে আলু গাছ লাগিয়ে সেই গাছের আলু ভেজে বিক্রি করে দেখবে, কেমন প্রফিট হয়। বাজার থেকে আলু কেনার খরচ বেঁচে যাওয়াতে কিভাবে প্রফিট বেড়ে গেল, সেটা ও নিজেই বুঝতে পারবে। এতে রিটেইলের পাশাপাশি প্রোডাকশন ব্যপারটা বুঝতে পারবে, সেই সাথে আলু চাষ করতে গিয়ে কৃষি বিজ্ঞানের হাতে-খড়ি হবে।
আরেকটু বড় হওয়ার পর তার এই আলু ক্ষেতের কষ্টিং ক্যালকুলেট করতে বলবো। আমাদের বাসার প্রতি স্কয়ার ফিটের ভাড়া + আলুর বীজ + সার (যদি লাগে) + ডেইলি বা উইকলি লেবার ক্যালকুলেট করে ও প্রোডাকশন কষ্ট বের করবে। বাজারে আলুর কেজি এবং বারান্দার ছোট আলুক্ষেতে উৎপাদিত আলুর কেজি তুলনা করে ও বুঝতে পারবে এভাবে আলু চাষ করাটা লাভজনক কিনা। ফিজিবিলিটি স্টাডির হাতে-খড়ি হবে তাতে।
আরেকটু বড় হলে ওকে ওয়েব ডিজাইন এবং প্রোগ্রামিং শেখাবো। ও নিজের শেখা জ্ঞান ব্যবহার করে নিজের ই-কমার্স সাইট তৈরি করবে। সেই সাইট থেকে  শুধুমাত্র আমরাই না, আমাদের ফ্যামিলির সবাই এবং ওর বন্ধু-বান্ধবরা কিনতে পারবে। বিজনেস স্কেল বাড়বে সাথে টেকনোলজি কিভাবে বিজনেসে হেল্প করছে, বুঝতে পারবে। তখন কফি, চকলেট, জ্যুস, স্যান্ডুইচের পাশাপাশি জামা-কাপড়, জুতাও এবং আরো অনেক কিছু বিক্রি করতে পারবে। এগুলোর মার্কেটিং করতে হবে কিভাবে শেখাবো। তাতে মার্কেটিং এর হাতে-খড়ি হবে। আবার— ভেন্ডর, কাস্টমার, ইনভেন্টরি, রেভিনিউ, প্রফিট, লস ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবে।
যেহেতু ই-কমার্সের প্রোডাক্ট ডেলিভারীর ব্যপার আছে, তাই থার্ড পার্টি কোন সার্ভিস ব্যবহার করা শেখাবো। রিয়েল লাইফ বিজনেস ও ইন্টিগ্রেশনের ব্যপারে ধারণা তৈরি হবে তাতে। ব্যবসা আরেকটু বড় হলে বেতন দিয়ে দুই/চারজন লোক নেয়ার প্রসেসে কিভাবে আগাতে হয়, দেখিয়ে দেব। এটা ওর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও টীম ওয়ার্কের ধারণা পরিষ্কার করবে।
বছরের পর বছর ধরে এরকম টুকিটাকি অনেক ব্যপারের সাথে পরিচিত হতে থাকবে যা পড়ালেখার বিষয়গুলোর উপযোগীতা ওর কাছে পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। ক্লাশ টেন পার হওয়ার আগেই ওর ব্যবসা এমন একটা লেভেলে চলে যাবে যে—  বাসা থেকে ওকে আর হাত খরচ নিতে হবে না। স্কুল-কলেজে যা পড়াচ্ছে, এগুলো ওর কাছে মিনিংফুল হবে। পড়ালেখা করে, অনলাইন রিসার্চ করে নিজের ব্যবসা নিজেই বড় করতে থাকবে এবং নিজেকে সমৃদ্ধ করতে থাকবে।                                
                                  #প্যারেন্টিং - ২৫
বাংলাদেশে বাচ্চাদের মানুষ করা খুব কঠিন কাজ। আপনি নিজের বাসায় তাদের সব ট্রেইন করবেন কিন্তু স্কুলে গিয়ে অন্যদের কাছ থেকে (অন্য বাচ্চা, এমনকি শিক্ষকদের কাছ থেকেও) খারাপ জিনিষ শিখে আসবে। উত্তরা থাকার সুবাদে পাশের বাসার ভাবি/আন্টি নামক বিভীষিকা থেকে সে বেঁচে আছে। এখানকার পরিবেশও ভালো। কিন্তু  আত্মীয় স্বজনদের (বিশেষ করে দুর-সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনদের) ব্যাড ইফেক্ট থেকে রক্ষা করা খুব কঠিন কাজ। এই কষ্টটা হতো না যদি বাচ্চাদের সাইকোলজি এবং প্যারেন্টিং সম্পর্কে সকলে জানতো।
এত সাবধানে মানুষ করার পরেও তাতিনের ভেতরে বিভিন্ন সময়ে নানারকম ভুল জিনিষ দেখা যেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে স্কুলে যেতে শুরু করার পর এগুলো শুরু হয়েছে। এই যেমন আজকে পাশের রুমে লাইট বন্ধ ছিলো। সে বলছে- "এখানে লাইট বন্ধ কেন? দেখনা অন্ধকার!"
আপনার মনে হতে পারে... আরে, কী কিউট! এত ছোট বাচ্চা কী সুন্দর করে বললো!
উহু... কিউট না! এই আচরণটা খারাপ। এর পেছনের যে চিন্তা-ভাবনাটা কাজ করেছে, সেটা খারাপ। 
'এখানে লাইট বন্ধ কেন?' - একটা অভিযোগ। খামোখা অভিযোগ একটা খারাপ জিনিষ। বাচ্চাদেরকে অভিযোগ করা শেখানো উচিত না।
আর 'দেখনা অন্ধকার?!' - এটা আরো বেশী খারাপ আচরণ।  
এসব ক্ষেত্রে করণীয় কী?
করণীয়টা নির্ভর করছে আপনি কিভাবে বাচ্চাকে মানুষ করছেন এবং আপনার বাচ্চার বুদ্ধিমত্তা কতটুকু ভালো, তার উপরে। এই যেমন, তাতিনকে আমার কিছু বলতে হয়নি। আমি শুধুমাত্র ফারাহকে লো ভয়েসে জিজ্ঞেস করলাম- 'তাতিন এসব আচরণ কোথায় শিখেছে?' এটুকু শুনেই তাতিন আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে পাশের রুমে চলে গিয়েছে। এখন আর এটা নিয়ে ওকে কিছু বলতে হবে না। ও বুঝে গিয়েছে যে, এই আচরণটা ঠিক না। ওকে আমরা এভাবেই ট্রেইন করেছি। ও এখন নিজেকে ফিক্স করে ফেলবে। আর যদি পুরোপুরি ফিক্স করতে না পারে, তাহলে একদিন খেলতে খেলতে সুন্দরভাবে ওকে ব্যপারটা বুঝিয়ে বললেই হবে।
আপনার বাচ্চার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন, তার উপরে নির্ভর করছে আপনি তাকে কিভাবে বোঝাবেন। এদেশে অধিকাংশ বাবা-মা-ই মনে করে বাচ্চাদের ধমক ও তথাকথিত "শাসন" এর উপরে রাখতে হবে। এভাবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় বাচ্চা কথা শুনেছে, আসলে শুনে নাই। তার ভেতরে বিদ্রোহ দেখা দিতে থাকে। সে ধীরে ধীরে বেয়াদপ হতে থাকে। প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে সে বেয়াদপ হিসেবে বেড়ে ওঠে।
বাচ্চাদেরকে শেখানো এবং বোঝানোর আর্ট আছে। এই আর্ট রপ্ত করতে হলে বাচ্চাদের সাইকোলজি নিয়ে আপনার পড়াশোনা থাকতে হবে। এবং বাচ্চাকে পর্যবেক্ষন করার সময় বের করতে হবে। সবচাইতে বড় ব্যপার হচ্ছে, বাচ্চাকে প্রচুর কোয়ালিটি টাইম দিতে হবে।                                
                                  #প্যারেন্টিং - ২২
  
ক্রিয়েটিভ ও প্রোডাক্টিভ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মানুষকে একটা পজেটিভ, আনন্দপূর্ন, নির্ভয় পরিবেশে রাখতে হয়। পরিবেশটা একই সাথে কোলাহল ও বিদ্বেষ মুক্ত হতে হবে। আপনার বাচ্চার জন্য এরকম পরিবেশ নিশ্চিত করুন।                                
                                  প্রথমত, অপমানের হাত থেকে বাঁচার জন্য সুইসাইড একটা প্যারেন্টিং সমস্যা। অভিভাবকরা বাচ্চাদের মেন্টালিটি ওরকম করেই গড়ে তুলছে। ছোটবেলা থেকেই একটা বাচ্চাকে 'স্কাই ইজ ফলিং' টাইপ ভয় দেখানো হচ্ছে। 
দ্বিতীয়ত, এটা সমাজের সমস্যা। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশী, কমিউনিটি ও ক্লাব মেটরা এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে যে কিছু মানুষ আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন রাস্তা দেখে না। 
এসব আত্মহত্যা ঠেকানোর জন্য লোকজনকে প্যারেন্টিং শেখানো জরুরী। সাথে ব্যপক সমাজ সংস্কার প্রয়োজন।                                
                                  এক পরিচিতের বাসায় গিয়েছি। দেখলাম একটা ৪/৫ বছরের বাচ্চাকে তার মা শলার ঝাড়ু দিয়ে বাড়ি দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে, জোরে বিছনায় একটা বাড়িও দিলো। বাচ্চাটা ভয়ে কেঁপে উঠলো। ঐ মহিলা যদি জানতো, এটা কতটা ভয়াবহ একটা ব্যপার তাহলে এই কাজ কখনোই করতো না।  বাচ্চাটার চেহারা দেখেই তার অনুভূতি বোঝা যাচ্ছিলো। কিন্তু ভেতরে যে তারচাইতেও ভয়াবহ ব্যপার ঘটছে, সেটা আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে খুব ভালো জানি। ছোটবেলা আমাকে একবার ঝাড়ু দিয়ে ভয়াবহভাবে মারা হয়েছিলো। সেই ট্রমা আমার এখনো কাটে নাই।
 
এদেশের দু'টো জিনিষের জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন। ১) শিক্ষা ব্যবস্থা, ২) প্যারেন্টিং। এই দু'টো ব্যপার ঠিক না করলে একটা সুস্থ জাতি আপনি কোনভাবেই আশা করতে পারেন না।                                
                                  #প্যারেন্টিং - ২২
তাতিয়ানা ইদানিং আইপ্যাড আর মোবাইলের চাইতে তার খেলনাগুলো নিয়ে খেলতে আর পড়ালেখা করতে বেশী পছন্দ করে। অনেকগুলো ব্যপার সবসময় খেয়াল রাখায় এটা ঘটেছে। তার ভেতরে খুব গুরুত্বপূর্ন একটা হচ্ছে কনটেন্ট। তাতিয়ানা মোবাইল অথবা ট্যাবে কী দেখতে পারবে কী পারবে না সেটা খুব সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রন করেছি। তবে এমনভাবে যাতে সে টের না পায়। গত পাঁচ বছরে সে কোন হিন্দী গান, নাচ কিংবা বড়দের জন্য উপযোগী কোনকিছুই দেখার সুযোগ পায়নি। সে যা দেখেছে তার প্রায় শতভাগ জুড়ে ছিলো বিভিন্ন শিক্ষামূলক কনটেন্ট। ভিডিওগুলোতে সে দেখেছে বিদেশী বাচ্চারা কিভাবে বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করে। কিভাবে যোগাযোগ করে। কিভাবে তাদের খেলনাদের সাথে খেলে। কোথাও সে দেখেনি বাচ্চারা মোবাইল কিংবা ট্যাব নিয়ে বসে আছে। কোথাও সে দেখেনি বাচ্চারা বড়দের  উপযোগী কিছু (যেমন- নাচ/গান) করে বাহবা কুড়াচ্ছে। এগুলো তার মনন সম্পূর্ন ভিন্নভাবে গড়ে তুলেছে। আমার বাসায় টিভিও নাই যে সে কখনো বাচ্চাদের জন্য উপযোগী নয় এমন কিছু দেখে ফেলবে। পাঁচ বছর পর এর ফলাফল নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি।
বাচ্চাদের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রন করুন। কী দেখবে কী দেখবে না, গোপনে সেটা আপনি ঠিক করে দিন। এটা গুরুত্বপূর্ন।                                
                                  একসময় আমার ধারণা ছিলো একটা দেশের রাজনীতি ঠিক করলে দেশটা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরে দেখলাাম, মানুষ ঠিক না করে শুধু রাজনীতি  ঠিক করে কোন লাভ নাই। ইন ফ্যাক্ট, মানুষ ঠিক না থাকলে রাজনীতিবিদরাও ঠিক হয় না। কারণ, তারা জনগনেরই  প্রতিনিধিত্ব করে। এই উপলদ্ধি আমার জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমার সমস্ত চিন্তা-ভাবনা, কাজকর্ম, প্রজেক্ট.. সবকিছুরই একটা মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ ঠিক করা। এর জন্য যে কয়েকটা প্রজেক্ট আমি হাতে নিয়েছি তার ভেতরে আছে-
১) বই লেখা (টপিকঃ প্যারেন্টিং, কমনসেন্স ও কার্টেসি, সার্ভাইভাল ও ব্যবহারিক জ্ঞান, হিউম্যান সিভিলাইজেশন ও হিস্টোরী)
২) শিক্ষা ব্যবস্থা ও স্টুডেন্টদের নিয়ে কাজ করার জন্য একটা প্লাটফর্ম। কর্মসংস্থানের ব্যপারেও এই প্লাটফর্ম ম্যাসিভলি হেল্প করবে। এটা আমার সবচাইতে বড় ও দীর্ঘমেয়াদি দু'টো প্রকল্পের একটি। একইসাাথে আমার ক্যারিয়ারেরও অংশ।
৩) গ্রীন ব্লাড প্রকল্প (এটা একটা সামাজিক আন্দোলন। একটা কমিউনিটি দাঁড়াবে। কর্মজীবন থেকে অবসরের পর এটার কার্যক্রম শুরু হবে। এখন প্রস্তুতিপর্ব চলছে..)
এগুলো আমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য... purpose of my life.                                
                                  #প্যারেন্টিং - ২৩
সরাসরি উপদেশের চাইতে ইনডাইরেক্ট উপদেশ বেশী কার্যকরী।
তাতিয়ানা এসে বললো, এলসা তার কথা শুনছে না। সুতরাং এলসাকে এক গাদা উপদেশ দিয়ে দিলাম। তাতিন মনোযোগ দিয়ে শুনলো কী কী বলেছি। তাতিনকে কখনো আমি সরাসরি উপদেশ দেই না। উপদেশ জিনিষটাই আসলে কেমন যেন। তার ভেতরে আমাদের দেশে বড়রা উপদেশকে একটা বিরক্তিকর জিনিষ বানিয়ে ফেলেছে। উপদেশ দেয়ার চাইতে আলোচনার ভঙ্গিতে বুঝিয়ে বলা বেশী ভালো। আর  উপদেশ যদি দিতেই হয়; সরাসরি না দিয়ে ইনডাইরেক্টলি দেয়া ভালো। 
পুনশ্চঃ এই পর্বে বাচ্চাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার বিষয়ে লেখার কথা ছিলো। ঐ পর্বটা একটু সময় নিয়ে লিখতে হবে। আপাতত সময় কম। আগামী পর্বে চেষ্টা করবো।                                
রিটায়ারমেন্টের পর এই ব্যাড প্যারেন্টিং এর বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করবো। যদি বেঁচে থাকি...
                                  #প্যারেন্টিং - ২১
একজন মানুষের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য একদম ছোটবেলা থেকে নির্ভীক পরিবেশ লাগে। সে যেন ভয় পেয়ে চমকে না ওঠে। আমাদের দেশে ব্যপারটা পুরোপুরি উল্টো। এখানে শাসনের নামে বাচ্চাদের উপরে অমানবিক অত্যাচার চলে। এটা প্রথমে শুরু হয় বাবা অথবা মায়ের তরফ থেকে। তারপর আত্মীয় স্বজন হয়ে শিক্ষক পর্যন্ত। বড় হওয়ার পর চলে সামাজিক অত্যাচার। সব মিলিয়ে এদেশটা একজন মানুষের ভালো ও মহৎ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য খুব বেশী অনুপোযোগী। 
ভালো মানুষ তৈরি হওয়ার জন্য এই ভূমি খুব বেশী অনুর্বর। এই অনুর্বরতা আপনি ঠেকিয়ে দিতে পারেন একজন ভালো প্যারেন্ট হয়ে। দুই চারটা ফ্যামিলিও যদি ভালো প্যারেন্ট হয়ে ওঠে তাহলে তাদের বংশধরেরা আরো বেশ কিছু ফ্যামিলি ও অনেক ভালোমানুষ রেখে যেতে পারবে। এভাবেই হয়তো একদিন পরিবর্তন হবে।
এখন কথা হচ্ছে, আপনি কিভাবে ভালো প্যারেন্ট হবেন? আমার লেখা পড়ে? নাহ, তার দরকার নাই। আপনি নিজে বইপত্র কিনে পড়ুন। অনলাইনে সার্চ করে জানুন। হিউম্যান সাইকোলজি বোঝার চেষ্টা করুন। ভালো প্যারেন্ট হওয়ার পথে একটু হলেও এগিয়ে যাবেন।