প্যারেন্টিং বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা ও টিপস
প্যারেন্টিং - ৪৯
আপনার বাচ্চাদের সবসময় আনন্দের ভেতর রাখতে হবে, এরকম ভাববেন না। বোরডম গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখ-কষ্টও।
প্যারেন্টিং - ৪৮ (প্যারেন্টিং মিম)
প্যারেন্টিং - ৪৭
লার্নিং একটি ন্যাচারাল প্রসেস। আপনি যদি জোর করতে যান, তাহলে নেচারাল প্রসেস বিঘ্নিত হবে। ফ্লো এর ভেতরে কোনকিছু শেখানো সবচাইতে সহজ। তাই ফ্লো বুঝতে পারা জরুরী।
প্যারেন্টিং - ৪৬
একজন মানুশ যেহেতু হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি, তাই প্রথম কাজ হচ্ছে তার হার্ডওয়্যার বা শারীরিক সুস্থ্যতা নিশ্চিত করা, সাথে মানসিক বিষয়টার দিকে খেয়াল রাখা। আর এটা শুরু হয় বাচ্চা পেটে আসার পর থেকেই। বাচ্চারা মায়ের পেটে থাকতেই শারীরিক ও মানসিক গঠন শুরু হয়। তাই বাচ্চা নেয়ার আগে সকলের উচিত এ বিষয়ক যথাযথ জ্ঞান অর্জন করে নেয়া, কোর্স করা।
বাচ্চা পেটে আসার পর থেকেই তার শারীরিক ও মানসিক গঠনের ব্যাপারে আপনাকে সতর্ক হতে হবে। যেহেতু বাচ্চা তখন মায়ের পেটে থাকে, তাই এসময় তার ফুড এন্ড নিউট্রিশন মানে হচ্ছে মায়ের ফুড এন্ড নিউট্রিশন। তার মানসিক অবস্থা মায়ের মানসিক অবস্থার সাথে কানেক্টেড, তাই ওসময় তার মায়ের মানসিক অবস্থা ঠিক রাখা ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা মানে বাচ্চার জন্যও সেটা করা।
এটা এত ব্যাপক একটা বিষয় যে, শুধুমাত্র এই মায়ের যত্ন নিয়েই বিশাল আকারের কয়েকটা বই লিখে ফেলা সম্ভব। তাই, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাদাভাবে জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে কোর্স করুন, কনসাল্টেন্সি নিন।
প্যারেন্টিং - ৪৫
হিউম্যানরে আপনি একটা বায়োলজিক্যাল কম্পিউটার ভাবতে পারেন। মানে, কর্মপদ্ধতির দিক থেকে। আসলে কম্পিউার জিনিষটাই আমরা তৈরি করেছি নিজেদের মত করে। তো, কম্পিউটারে যেমন দু'টো অংশ— হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার, মানুশেরও তাই। আমাদের শরীর হচ্ছে হার্ডওয়্যার, চিন্তা-ভাবনা-মনন-জ্ঞান-রে আপনি সফটওয়্যার ভাবতে পারেন।
শুধুমাত্র হার্ডওয়্যার (ব্রেইন, শরীর) ভালো হলেই হয় না, সফটওয়্যারও গুরুত্বপূর্ন। হার্ডওয়্যার+সফটওয়্যার, এই দুটোর উৎকর্ষতাই আমাদের উন্নত করে। এজন্য দেখবেন, আপনার চাইতে ভালো ব্রেইন (হার্ডওয়্যার) নিয়েও একজন রিকশা চালাচ্ছে কিংবা আপনার অধীনে কাজ করছে। কারণ, তার হার্ডওয়্যার ভালো কিন্তু সফটওয়্যারটা দুর্বল বা ভুলভাবে কোড করা হয়েছে।
মজার বিষয় হচ্ছে, এই কোড করার কাজটা মানুশ নিজেই করতে থাকে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সকে কোনকিছু শেখার জন্য যেমন প্রচুর ডাটা দিতে হয় (ডাটাসেট), তেমনি একটা বাচ্চাকেও ডাটা দিতে হয়। বাচ্চারা এই ডাটার একটা বড় অংশ তার চারপাশের থেকে গ্রহণ করে। এজন্য পরিবেশ এত গুরুত্বপূর্ন। সে যা দেখছে এবং যা শুনছে, সেগুলো থেকে ডাটা গ্রহণ করছে, এনালাইসিস করছে, শিখছে। বাচ্চাদের ব্রেইন বড়দের চাইতে প্রায় দ্বিগুন গতিতে কাজ করতে পারে। ফলে, তাদের শেখার গতিও দ্রুততর।
প্যারেন্ট হিসেবে আপনার কাজ হচ্ছে তার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার, দু'টোর উৎকর্ষেই সাহায্য করা। ব্রেইন ও শরীরের সঠিক গঠন নিশ্চিত করতে সুষম খাবার দেয়া, সফটওয়্যার অংশটা ঠিকঠাক ভাবে তৈরি হতে ভূমিকা রাখা, এসব আপনার দায়িত্ব। এই ভূমিকা আপনি কিভাবে সবচাইতে ভালোভাবে নিতে পারবেন, সেটা শেখানোই প্যারেন্টিং বিষয়ক জ্ঞানের উদ্দেশ্য।
প্যারেন্টিং - ৪৪
প্যারেন্টদের জন্য ফুড এন্ড নিউট্রিশনের বেসিক কোর্স করা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। অন্তত, সুষম খাবার সম্পর্কে তাদের জানা উচিত।
বাচ্চাদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গঠনে সুষম খাবার গরুত্বপূর্ন। সুষম খাবারের অভাবে নিউট্রিশন ডেফিসিয়েন্সি দেখা দেয়, যা পরে আর ঠিক করা যায় না। নিউট্রিশন ডেফিসিয়েন্সি নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশু সামাজিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকে সবসময়।
সুষম খাবার যে খুব দামী এমন কিন্তু নয়। বরং সুষম খাবারের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম। শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে লোকজন সুষম খাবার নিতে পারে না।
বাংলাদেশে এক সময় কাউনের চাল চাষ হতো যা শুধুমাত্র গরীবেরা খেত। অথচ, এই শস্য সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত এখন। মলা মাছে এত বেশী পুষ্টি উপাদান আছে যে, প্রতিদিন মাত্র ২/৩টা মলা মাছ খেলেই একটা বাচ্চা অনেক গুরুত্বপূর্ন সব উপাদান পেয়ে যায়। আমাদের খাল-বিল-পুকুরে এই মাছ এমনিতেই হয়। এরকম আরো অনেক খাবার আছে যেগুলোর মূল্য অনেক কম কিন্তু সুষম খাবার নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ঠ।
প্যারেন্টিং - ৪৩
বাচ্চারা যেন কোনভাবেই রাত দশটার পর জেগে না থাকে। রাত দশটার পর জেগে থাকা আমাদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
প্যারেন্টিং - ৪২
বাংলাদেশ এত বেশী দূর্নীতিগ্রস্থ একটা দেশ যে, এদেশে সৎ থাকাটা রীতিমত চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কর্মী হিসেবে যাদের যোগ্যতা অনেক কম, তাদের পক্ষে সৎ থেকে জীবনধারণ করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। আর এই যোগ্যতা কম থাকার জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দায়ী।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা টু মাচ খারাপ হওয়াতে এখানে যোগ্য লোক তৈরি হয় না বললেই চলে। কিন্তু যারা ভালো প্যারেন্ট পেয়েছে তারা এই ভয়াবহ খারাপ শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরেও নিজেদের যোগ্য করে তুলতে পেরেছে। ভালো প্যারেন্টিং পেলে একজন ব্যক্তি এতটাই যোগ্য হয়ে উঠতে পারে যে তার জন্য সৎ থাকাটা তখন সহজতর হয়।
ভালো প্যারেন্টিং আপনার নিজের এবং এই দেশের জন্য এতই গুরুত্বপূর্ন।
প্যারেন্টিং - ৪১
আপনার বাচ্চার জন্য ভয় মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করুন। বাচ্চাদের সামনে নেগেটিভ ও খারাপ খবর ও বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করবেন না। ভয় পেতে পারে এরকম গল্প বলবেন না। ভয় ক্ষতিকর।
প্যারেন্টিং - ৪০
আপনার বাচ্চার স্মার্টফোন এডিকশন দূর করার জন্য এক বছরের জন্য আপনি নিজে স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন। বাসার সকল ট্যাব আর স্মার্টফোনগুলো বিক্রি করে দিন অথবা এমনভাবে ব্যবহার করুন যেন বাচ্চা এক সেকেন্ডের জন্যও সেগুলো দেখতে না পায়। বাসায় কম্পিউটার থাকলে সেটায় যেন বাচ্চার সামনে কেউ ইউটিউব না দেখে বা গেম না খেলে।
ট্রাই করে দেখেন। ফলাফল কী হচ্ছে তার আপডেট জানাতে পারেন কমেন্টে।
টিপসটা খুবই সিম্পল। যদিও পালন করা হয়তো কঠিন হতে পারে আপনার/আপনাদের জন্য। কিন্তু মনে রাখেন, আপনার বাচ্চার ভবিষ্যত নির্ভর করছে এর উপরে। স্মার্টফোন বা ট্যাব এডিকশন খুবই খারাপ ব্যাপার।
পুনশ্চঃ এটা মূলত আগের পর্বগুলোর প্রেক্ষিতে অনেকের করা প্রশ্নের উত্তর পর্ব। এখানেও কমেন্টে বা ইনবক্সে প্রশ্ন রাখতে পারেন। আপনাদের এই প্রশ্নগুলো আসলে আমার প্যারেন্টিং নিয়ে বইটাকে আরো সমৃদ্ধ করছে। তাই অগ্রিম ধন্যবাদ।
পুন:পুনশ্চঃ এটা ফ্রি এডভাইস ছিলো না। এই টিপস কাজে লাগিয়ে যারা এডিকশন দূর করতে পারবেন, তারা আমাকে কফির দাওয়াত দিবেন। :D