প্যারেন্টিং

প্যারেন্টিং বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা ও টিপস

প্যারেন্টিং - ৫৯

ফেসবুক বা টুইটার টাইপ সোশ্যাল মিডিয়া ইয়ং জেনারেশনের জন্য অত ক্ষতিকর আমার কখনোই মনে হয় নাই। কিন্তু গত এক মাস ধরে ফেসবুক রিল দেখে বুঝলাম— এটা শতভাগ নিষিদ্ধ করা উচিত বাচ্চা ও টিনএজারদের জন্য। কেন ও কিভাবে ক্ষতিকর, এই ব্যাখ্যা পরে দেব। ইমিডিয়েটলি আমার সাজেশন হচ্ছে ২০ বছরের নিচের কাউকে এই তিনটা জিনিষের (ফেসবুক রিল, ইউটিউব শর্ট ও টিকটক) ধারেকাছেও যেতে দেয়া উচিত না।

যদি মনে হয় আপনার বাচ্চা লুকিয়ে এগুলো দেখার সম্ভবনা আছে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে স্মার্টফোন না দিয়ে বাটন/ফিচার ফোন দিন। আর কাজ বা অনলাইন ক্লাসের জন্য কম্পিউটার/ল্যাপটপ দিন এবং সেটা তার পার্সোনাল রুমে না দিয়ে লিভিং রুমে রাখুন।

প্যারেন্টিং - ৫৮ (লার্নিং উইথ ফ্লো)

তাতিন তার দুই সহপাঠীর বিষয়ে বলছিলো। ওদের খারাপ আচরণগুলো ওর খারাপ লাগে জানাচ্ছিলো। আর আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, ওরা এরকম কেন?

আমি বললাম— ওরা বোকা, তাই।

কিভাবে?

ওদেরকে কি ক্লাসের কেউ পছন্দ করে?

না।

তাহলে দেখ, ওদের কোন বন্ধু হচ্ছে না। এটা ওদের জন্য লস না? বুদ্ধিমান কেউ তো নিজের লস করবে না এভাবে।
এধরনের অনেক আলাপ হয় আমাদের মাঝে। বিভিন্ন সিচ্যুয়েশনে আপনি যা শেখাবেন, সেটা থেকে বাচ্চারা সবচাইতে বেশী শিখবে। কনটেক্সট ছাড়া সরাসরি উপদেশ থেকে এধরনের শিক্ষা অনেক বেশী কার্যকরী।

প্যারেন্টিং - ৫৭ (প্রথম ১০০০ দিন)

একজন মানুষের জীবনের প্রথম ১০০০ দিন হচ্ছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন। একজন ব্যাক্তি ভবিষ্যতে কতটা ক্যাপাবল হবে, কতটুকু মেধাবী হবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন হবে, জীবনে কতটুকু দূরে যাওয়ার উপযোগী হয়ে গড়ে উঠবে, সেটার অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যায় এসময়। এটাকে আপনি বিল্ডিং এর ফাউন্ডেশন বা পিসি বিল্ডের সাথে তুলনা করতে পারেন।

এই প্রথম হাজার দিনে একটা বাচ্চার শারীরিক (বিশেষ করে ব্রেইন) ও মানসিক গঠন তৈরি হয়। বাচ্চার ভবিষ্যত স্বাস্থ্য কেমন হবে তা নির্ধারিত হয়, ফলে এসময় সঠিক খাবার ও যত্নের গুরুত্ব অপরিসিম।



Poor nutrition in the first 1,000 days can cause irreversible damage to a child’s growing brain, affecting her ability to do well in school and earn a good living—and making it harder for a child and her family to rise out of poverty. It can also set the stage for later obesity, diabetes, and other chronic diseases, leading to a lifetime of health problems.

আর এই হাজার দিনের গননা শুরু হয় কনসিভ করার দিন থেকে বা বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে। এসময় বাচ্চা এবং বাচ্চার মা, দুইজনের সমপরিমান যত্নের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে বাচ্চা যখন গর্ভে থাকে, তখন মায়ের পুষ্টি ও যত্ন মানে বাচ্চার পুষ্টি ও যত্ন। এসময় বাচ্চার মানসিক গঠনও শুরু হয় ফলে মায়ের সাথে করা আচরন বাচ্চার উপরে প্রভাব ফেলে।

এই বিষয়টা এত ব্যাপক যে শুধুমাত্র আমার লেখার উপরে ভরসা না করে নেট ঘাঁটুন, আরো বই পড়ুন ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আমি চেষ্টা করবো সহজ ভাষায় ও অল্প কথায় এ বিষয়টা তুলে ধরতে এবং বিভিন্ন লেখকের বই, লিংক, ভিডিও এবং আরো রিসোর্স সংযুক্ত করতে।

প্যারেন্টিং - ৫৬

বাচ্চাদের প্যারেন্টিং এর তিনটা ধাপ আছে—

১) প্রথম হাজার দিনঃ প্রেগনেন্ট হওয়ার দিন থেকে এই ১ হাজার দিন কাউন্ট শুরু হয়
২) Toddler - হাঁটিহাটি পা পাঃ প্রথম ১ হাজার দিন পার হওয়ার পর থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত
৩) Kid বা শিশুকালঃ ৫ থেকে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত

প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মাঝে আরেকটা ধাপ আছে যেটাকে infant (ছানা) বলে। প্রথম ১ হাজার দিনের ভেতরে এটা কেটে যায়, তাই আলাদা করে ধরা হয়নি এখানে।

আমাদের দেশের স্কুলিং সিস্টেমে এই ধাপগুলো মানা হয় না। হলে ১৩ বছর পর্যন্ত প্রাইমারী স্কুল বা জুনিয়র স্কুল এবং ১৩ এর পর থেকে হাই স্কুল শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু দেশ না মানুক, আপনি-আমি তো মানতে পারি। বাচ্চাদের এডুকেশন থেকে শুরু করে সবকিছু এই তিনটা ধাপ মেনে করা সবচাইতে ভালো। সেভাবেই সব সাজাচ্ছি কিডস প্লাটফর্মে ও আমার প্যারেন্টিং বইয়ে।

দেশের প্রচলিত এডুকেশন সিস্টেমের সাথে এই ধাপগুলোকে কিভাবে এডজাস্ট করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে অনেক। বিশেষ করে আমাদের দেশের অভিভাবকরা যেখানে বাচ্চা সঠিক বেড়ে উঠার চাইতে স্কুলের রেজাল্টকে বেশী গুরুত্ব দেয়, সেখানে এই কাজটা বেশ কঠিনই বলা যায়।

কিন্তু, এরকম সচেতন প্যারেন্টও আছে যাদের কাছে বাচ্চার সঠিক বেড়ে উঠা বেশী গুরুত্বপূর্ন। তাদের উচিত অন্যদেরও সচেতন করা। কারণ, একা ভালো প্যারেন্ট হয়ে লাভ নেই তেমন। বাচ্চাদের উপযোগী ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আপনাকেও ভূমিকা রাখতে হবে।

প্যারেন্টিং - ৫৫
বড়দের সাথে আপনারা ঠিক যেভাবে মনোযোগ ও গুরুত্ব দিয়ে আলাপ করেন ও আড্ডা দেন, বাচ্চাদেরকেও একইরকম গুরুত্ব দিবেন। এটা তাদের আত্ম-বিশ্বাস বাড়াবে এবং চিন্তাশীল হতে সাহায্য করবে।

তবে, বড়দের সাথে যা যা বলা যায়; বাচ্চাদের সাথে তার সব বলা যাবে না। এই যেমন— বাচ্চাদেরকে পৃথিবীর খারাপ ও জটিল বিষয়গুলো বলবেন না। মানুশ সম্পর্কে খারাপ ধারনা দিরেন না। তারা জানতে চাইলেও না।

আজকে বিদ্যুৎ কেন চলে যায় জানতে চাচ্ছিলো তাতিয়ানা।
বললাম— আমরা গরীব দেশ যে, এজন্য।
‘আমরা কেন গরীব’, এটা ছিলো তাতিনের পরের প্রশ্ন।
‘তুমি আরো বড় হলে বুঝতে পারবে’, বললাম আমি।

এরপর ছোটরা কেন জানতে পারবে না, বড় হতে হবে কেন এই টাইপ আরো বহু আলোচনা হলো। তারপর ওর নিজের গল্পে ফেরত গেলাম আমরা।

এখন আমি যদি ওকে বলি যে দূর্নীতিবাজদের কারণে আমরা গরীব, সেটা মানুষ সম্পর্কে ওর ভেতরে একটা নেগেটিভ ইমেজ তৈরি করবে। এসব ধারনা ওর সুন্দর পৃথিবীটা ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিবে যা ক্রিয়েটিভ হওয়ার পথে বাঁধা সৃষ্টি করবে।

১৬ বছরের নিচের যাদের বয়স, তাদের পৃথিবীটা সুন্দর ও স্বপ্নীল রাখা জরুরী।

প্যারেন্টিং - ৫৪

সমালোচনা/গীবত/পরনিন্দা থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখবেন এবং বয়স ১০/১২ হওয়ার পর এসব থেকে যেন তারা দূরে থাকে সেই শিক্ষা দিন।
সমালোচনা/গীবত/পরনিন্দা জিনিষটা মূলত আত্মতুষ্টির জন্য করে লোকে। এটা বিনোদনের উপকরন। অসুস্থ বিনোদন।

এই অসুস্থ বিনোদনে অভ্যস্ত হওয়ার অনেকগুলো খারাপ দিক আছে। এর ভেতরে একটা হচ্ছে— এটা তাদেরকে বন্ধুহীন করে দিবে।

বিশেষ করে ফ্যামিলির কারো ব্যাপারে বাচ্চাদের কখনো উস্কে দিবেন না। ফ্যামিলির এই ব্যাপারটা নিয়ে পরের পর্বে বিস্তারিত বলবো।

প্যারেন্টিং - ৫৩

আমি আর তাতিন আজকে আলাপ শুরু করেছিলাম একটা বই নিয়ে। তাতিন বইটা পড়ে শুনাচ্ছিলো আমাকে। যেসব যায়গা ও বুঝতে পারছিলো না সেগুলো জিজ্ঞেস করছিলো। আমি ওকে এক লাইন ধরিয়ে দিয়ে চিন্তা করার সময় দেই, ও নিজেই বাকীটা বের করে। এটা ওকে চিন্তা করতে শেখায়।

তারপর সেই আলাপ ওর স্কুলের গল্পে পরিনত হলো।

সময় পেলেই আপনার বাচ্চার সাথে গল্প করবেন এবং গল্প করার সময় তাদের কথা বেশী শুনবেন। আপনি তাদেরকে জ্ঞান দেয়ার চাইতে ওদেরকে নিজে চিন্তা করে জ্ঞান প্রডিউস করতে দিবেন। এতে বাচ্চাদের চিন্তা-শক্তি বাড়বে এবং বেশী শিখবে। আপনি নিজেই সব বলতে থাকলে আর ব্যাখ্যা দিতে থাকলে ওরা শিখবে কম মুখস্ত করবে বেশী। আর শেখার আনন্দটা হারিয়ে যাবে।

এবং আলোচনা ওদের মত করে চলতে দিবেন। পড়ালেখা থেকে সেটা স্কুল বা বন্ধুদের গল্পে যেতে থাকলে যেতে দিন। এসব আলাপের সঞ্চালক আপনি হবেন না, আপনার বাচ্চাকে হতে দিন।

প্যারেন্টিং - ৫২

নিজের খারাপ পরিস্থিতির জন্য অন্যদের দোষারোপ করা বা ব্লেইম দেয়া একটা মানসিক সমস্যা। এই সমস্যার শুরু হয় একদম ছোটবেলা থেকে।
অনেক প্যারেন্ট আছে যারা বাচ্চাদের অযথাই বকাঝকা করে, সবকিছু নিয়েই ব্লেইম দিতে থাকে। এতে বাচ্চাটা সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে, কখনো কী দোষ করে ফেললো, আবার কী নিয়ে বকা খাবে। এরকম ভয়ের ভেতরে বাস করায় তার সঠিক মানসিক গঠন ব্যহত হয়। একটা সময় পর এদের কাছে এরকম বকাঝকা করা, ব্লেইম দেয়াটা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিনত হয় ফলে বড় হয়ে নিজেরাও অন্যদের ব্লেইম দিতে শুরু করে। সবকিছুতেই অন্যদের দোষ খুঁজে পায়, নিজের ভুল অন্যদের উপরে চাপানোর চেষ্টা করে এবং নিজের দুরাবস্থার জন্য অন্যদের দায়ী করার চেষ্টা করে।

এরপর এরা যখন প্যারেন্ট হয়, নিজেদের বাচ্চাদের সাথেও একই কাজ করতে থাকে। তাতে এদের বাচ্চারাও বড় হয়ে এরকম হয়। একটা দুষ্ট চক্রে (vicious circle) আটকা পড়ে থাকে এরা। খুব অল্প সংখ্যকই এই চক্র থেকে বের হতে পারে।

এধরনের চক্রে যদি আপনার নিজেকে আবিষ্কার করে থাকেন, তাহলে এটা ভাঙার চেষ্টা করুন। ভালো প্যারেন্ট হওয়ার জন্য এধরনের চক্র থেকে বের হতে পারা জরুরী।

প্যারেন্টিং - ৫১
চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে কার্যকরী কিছু লিখতে চাচ্ছি, তাই এত সময় লাগছে প্যারেন্টিং বইটা লিখতে। তাছাড়া এই টপিকের প্রায় সব গবেষণা ও বই লেখা হয়েছে পশ্চিমাদের প্রেক্ষাপটে। আমাদের সাথে ওদের বাস্তবতার অনেক অমিল আছে। তাই, একই ধরনের প্যারেন্টিং আমাদের এখানে কম ইফেক্টিভ হবে।

প্যারেন্টিং নিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত যে কয়টা বই পড়লাম, সব কয়টাই দেখলাম ইংরেজী বইগুলোর কপি-পেস্ট। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট মিসিং ওখানে। চতুর্থ-শিল্প বিপ্লবের বাস্তবতাও উপেক্ষিত। এরকম কপি-পেস্ট টাইপ কিছু লিখতে চাচ্ছি না। ফলে একটু অপেক্ষা করতে হবে আপনাদের।

প্যারেন্টিং - ৫০

একজন ব্যক্তি কিসে আনন্দ পাচ্ছে, এটা পর্যবেক্ষন করে তার সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়া যায়। আবার একটা বাচ্চার আনন্দের প্রধান উৎসগুলো পর্যবেক্ষন করে তার ভবিষ্যত কেমন হতে যাচ্ছে অনুমান করা যায় অনেকটাই।

আপনার বাচ্চারা কিসে আনন্দ পাচ্ছে সেটা পর্যবেক্ষন করুন। তার আনন্দের উৎসগুলো পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রন করুন।
বাচ্চাদের এন্টারটেইনমেন্ট বা চিত্তবিনোদের উৎসও নিয়ন্ত্রন করুন। 'বাচ্চা তো, কী আর হবে' ভেবে যদি আপনি তাকে ভুল বা খারাপ সোর্স থেকে আনন্দ নিতে দেন, আলটিমেটলি সেটা তার জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলবে।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি