পর্যবেক্ষণ

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ

প্রায় পনের মিনিট ধরে ফেসবুকের হোমপেজ স্ক্রল করে পড়ার মত একটা পোষ্টও পেলাম না। অনেকদিন ধরেই এই অবস্থা।

ফেসবুক মারা যাচ্ছে?

গত ১৫ বছরে মিছিলে গুলি করে মানুষ মারার বিষয়ে আমজনতা ও “বুদ্ধিজীবি” মহলের তেমন কোন আপত্তি যে দেখা যায় নাই, এটা সকল রাজনৈতিক দলের জন্যই বিপদজনক।

বাংলায় অসংখ্য ভুল পরিভাষা/প্রতিশব্দের ভেতরে 'মধ্যবিত্ত' অন্যতম, যেটা আমাদেরকে 'বিত্ত' দিয়ে বড়-ছোট ভাবা শেখায়। এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

যখন মানুশ তার নিজের মূল্য বুঝতে পারে না তখন সে অন্যের কাছ থেকে মূল্য ও স্বীকৃতি খোঁজে।

ভবিষ্যতে চাষের জমি যেমন গোল্ড মাইনের মত মূল্যবান হয়ে উঠবে তেমনি পরিষ্কার পানযোগ্য পানি হবে (বর্তমানের) তেলের খনির চাইতেও গুরুত্বপূর্ন। আর বাংলাদেশ এই দু'টোরই বেস্ট সোর্স। একসময় আমরা পানযোগ্য পরিষ্কার পানি রপ্তানি করে পেট্রোডলারের মতই আয় করতে পারবো।

ভার্সিটিয়ান-থিংকার নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে কতকিছুর সন্ধান যে পেলাম। পৃথিবীজুড়ে কত কী যে হচ্ছে! এগুলোর সাথে যখন আমাদের দেশের অবস্থা তুলনা করি, নিজেদেরকে কয়েক'শ বছর পিছিয়ে পড়া মনে হয়। টাকা/পয়সা/ইনফ্রাস্ট্রাকচার/টেকনোলজির দিক থেকে না, মন-মানসিকতার দিক থেকে।

কয়েকটা বিভাগীয় শহর (বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম) বাদ দিলে, বাকী জেলাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। মফস্বল শহর আর গ্রামের ছেলে-মেয়েরা যে কী নিয়ে ব্যস্ত! গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড/ইউটিউব/টকটক/ফেসবুক, এগুলোই এদের জগতের বেশীরভাগটা দখল করে রেখেছে। দুনিয়া সম্পর্কে এদের কোন ধারণাই নাই। খেয়াল করলে দেখবেন, বেশীরভাগ টিকটকার ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর। সকলেই যে ওরকম; তাও-না। এসব জায়গাতেও এগিয়ে থাকা স্মার্ট ছেলে-মেয়েরা আছে। কিন্তু, তারা সংখ্যায় অনেক কম।

সবচাইতে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এদেরকে নিয়ে ভাবার মত তেমন কেউ নেই এদেশে। এদেশের বুদ্ধিজীবিতা মূলত ঢাকা নির্ভর। ঢাকারেই তারা বাংলাদেশ ভাবে। বরং ঢাকার বাইরের কিছু বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের ইন্টেলেকচ্যুয়ালরা ঢাকার স্বঘোষিত ইন্টেলেকচ্যুয়ালদের থেকে অনেক আপডেটেড ও বাস্তবমুখী।

একটা জাতির মূল উন্নতি হচ্ছে লোকজনের মন-মানসিকতার উন্নতি। এই জায়গাটা নিয়ে আমাদের প্রচুর কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলংকার মত হবে ভেবে আনন্দ পাওয়ার কিছু নেই। একটা বিষয় মাথায় রাখেন। যাদের কারণে দেশের অবস্থা খারাপ, তারা কিন্তু সম্পদ গড়েছে দেশের বাইরে এবং সময়মত পালিয়ে যাবে। বিপদে পড়বে দেশে থাকা সাধারণ পাবলিক।

আপনার যদি সিক্স ফিগারের স্যালারিও থাকে, এত নিশ্চিন্ত হইয়েন না। কোভিড সময়কালে সবচাইতে বেশী জব হারিয়েছে সিক্সফিগারওয়ালারা। আর সাধারণ মানুশের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে যারা আপনাকে সিক্স ফিগারের স্যালারি দিচ্ছে, তাদের ব্যবসাও কমে যাবে এবং আপনি জব হারাবেন। আপনার জন্য আর খারাপ খবর হচ্ছে— যোগ্যতা বেশী থাকার কারণে সাধারণ জবগুলোতে আপনাকে কেউ নিবে না (কারণ, তারা জানে যেকোন সময় আপনি সুইচ করবেন)। ফলে, আপনার বিপদ আরো বড় আকারে আসবে।

আপনি যদি বিসিএস ক্যাডার হয়ে থাকেন, এত নিরাপদ বোধ কইরেন না। সরকার জনগনের ট্যাক্সের টাকায় আপনাকে পোষে। সরকারের আয় না থাকলে আইন পরিবর্তন করে আপনাকে ছাঁটাই করতে সরকারের এক সপ্তাহও লাগবে না। তাছাড়া, জনরোষের ভয় তো আছেই। জনগন রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি আপনাদেরকেও ধরবে (শ্রীলংকায় দেখেন কী হয়েছে)। রাজনৈতিক নেতারা তো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে, আপনি পালাতে পারবেন না।

যারা ব্যবসা-বানিজ্য করে সুখে-শান্তিতে আছেন, আপনাদের ভয় আরো বেশী। এটা মাথায় রাখেন যে জনগনের ক্রয়ক্ষমতা কমা মানে আপনার ব্যবসা কমা। যে লোকটা মাসে ৩০/৪০ হাজার টাকা ইনকাম করে, তার খরচও কম। আপনার খরচ (ওভারহেড কষ্ট) কিন্তু বেশী। সার্ভাইব করা আপনার জন্য বেশী ডিফিকাল্ট হবে। কোভিড-১৯ অলরেডি কিছুটা ডেমো দিয়ে গিয়েছে।

অর্থনীতি হচ্ছে একটা ট্রেনের মতন। গতি পড়ে গেলে বা থেমে গেলে আবার গতিশীল করতে অনেক সময় লাগে। তাই দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে, দূর্নীতি কমাতে, টাকা পাচার রোধ করতে সবাই একসাথে কাজ করেন। এটা সকলের জন্যই ভালো।

২০২১ সালে বিশ্বের বিফ ইনন্ড্রাস্ট্রির সাইজ ছিলো ৪৬৮ বিলিয়ন ডলার যার গ্রোথ রেট প্রতি বছর ৫% এর কাছাকাছি। প্রায় আধা ট্রিলিয়ন ডলারের এই ইন্ড্রাস্ট্রি দাঁড়াতে প্রতি বছর কত কোটি গরু/মহিষ লাগে বলেন তো? আমাদের সিজনাল পশুপ্রেমিকরা কিন্তু এদেরকে কিছু বলার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। কারণ, পাগলেরও চাকরি হারানোর ভয় আছে।

কোরবানীর সময় মেয়ের শশুর বাড়িতে গরু-খাসি পাঠানোর যে রেওয়াজ, এটাও যৌতুক। যারা এধরনের পরোক্ষ যৌতুকরে সামাজিক রীতিতে পরিনত করেছে, তাদের কোরবানী হওয়া তো দূরের কথা, এরা মুসলিম নামেরই কলংক। এরা ছোটলোক।

মানুশ হইতেছে সেই জিনিষ যে নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে ঠকতে চায়। ঠক খেয়ে বিরাট আনন্দ পায়।
— হুমায়ূন আহমেদ

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি