বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ
প্রাইভেসী কনসার্ন দেখিয়ে ইটালি ChatGPT ব্যান করে দিয়েছে। ইটালির দেখাদেখি আইরিশরাও ব্যান করার কথা ভাবছে। ইউরোপিয়ান বাকী দেশগুলো ওদের ডাটা প্রাইভেসি রেগুলেশনে ChatGPT-রে আটকে দিতে পারে চাইলে। দিবে কিনা সেটাই দেখার বিষয় এখন। ঐদিকে চায়না, রাশিয়া, ইরান ও নর্থ কোরিয়াতেও ChatGPT ব্যানড।
প্রাইভেসি কনসার্ন দেখালেও মূলত জব মার্কেটের প্রতি থ্রেট বিবেচনা করে এই ব্যান কার্যকর করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই ChatGPT-র কারণে ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি) লোক জব হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করে রিপোর্ট এসেছিলো।
আমি ভাবছি অন্য একটা ব্যাপার। ধরেন কিছু দেশ ব্যান করলো বাকীরা করলো না। সেক্ষেত্রে যেসব দেশে ব্যান হবে না, এসব দেশের টেক স্টার্টাপগুলো OpenAi এর API ব্যবহার করে যেসব Ai সাপোর্টেড অ্যাপ ও সার্ভিস ডেভেলপ করবে, সেগুলো তো ঠেকাতে পারবে না তারা; বরং টেকনোলজিতে পিছিয়ে পড়বে দিনে দিনে। পুরো পৃথিবীতে একসাথে আটকানো না গেলে এর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব না।
মানব সভ্যতারে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে বাঁচানোর জন্য অন্তত ছয় মাসের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের প্রোগ্রেস বন্ধ রাখার জন্য পৃথিবীর প্রমিনেন্ট টপ টেক ব্যাক্তিত্বরা ইনিশিয়েটিভ নিচ্ছে।
ভেরী ব্যাড মুভ!
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের কারণে আমাদের প্রজন্মের ভেতরে জ্ঞানী ও মূর্খের দুরত্ব খুব দ্রুত বাড়বে, এমনটাই আমার আশঙ্কা। ChatGPT-র কথাই ধরেন। যে ঠিকঠাকমত প্রশ্ন করতে পারে তার কাছে এটা একটা ওয়ান্ডার, যারা প্রশ্ন করতে পারে না তাদের কাছে— Meh!
জ্ঞানের সাথে প্রশ্নের সম্পর্ক গভীর। প্রশ্ন করতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। এটা এভাবেও বলা যায়— যার জ্ঞান যত গভীর সে তত গভীরে যেতে পারে প্রশ্নের ক্ষেত্রে। যারা প্রশ্ন করতে করতে যত গভীরে যেতে পারবে তারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে আরো দ্রুত আরো জ্ঞানী হয়ে উঠবে। যারা পারবে না, তারা আরো দ্রুত পিছিয়ে পড়বে।
আমার আরেকটা অনুমান হচ্ছে— আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের কারণে মানব-সভ্যতা জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। তথ্য জানার ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেলে ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রশ্ন করা শিখবে না। কারণ, তারা সব রেডিমেড উত্তর পাবে, নিজেরা চিন্তা করা শিখবে না। ফলে, প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে গভীরে যেতে পারবে না। এভাবে ধীরে ধীরে জ্ঞানীদের সংখ্যা কমতে কমতে নাই হয়ে যাওয়া আশঙ্কা আছে।
এধরনের বিপদ থেকে বাঁচার জন্য জ্ঞানীদের সংঘ বা ক্লাব তৈরি জরুরী, যার অন্যতম উদ্দেশ্য হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের এই পরোক্ষ বিপদ থেকে কিছু লোকরে হলেও রক্ষা করা।
লেখালেখি ট্রেনের মতন। একবার থামিয়ে দিলে আবার শুরু করা কঠিন, সময় লাগে। শত ব্যস্ততার মাঝেও এজন্য কখনো লেখা বন্ধ রাখি নাই। ফেসবুকে হোক বা নিজের ডায়েরিতে, লিখে গেছি। সেই প্রাইমারি স্কুল থেকেই। কিন্তু; মিটিং এমনই এক বস্তু, আপনি কিছু আর লিখতে পারবেন না। প্রতিদিন ৩/৪টা অনলাইন/অফলাইন মিটিং করতে করতে আমার লেখক স্বত্বা মারা যাচ্ছে।
হ্যাশট্যাগঃ পৃথিবীর সবচাইতে আনপ্রোডাক্টিভ কাজ হচ্ছে মিটিং।
মিডিয়া তো ইলন মাস্করে ধুয়ে দিছিলো ৮ ডলারের টুইটার ব্লু ভেরিফিকেশন টিকের জন্য। অথচ, ইলন টুইটার কেনার অনেক আগে থেকেই টুইটার ব্লু পেইড ছিলো। এখন ফেসবুক নিয়া দেখেন, স্পিকটি নট! যাহোক, ওয়েলকাম টু পেইড সোশ্যাল মিডিয়া এরা।
ইন্টেলেক্ট দিয়া ইমোশন ব্যাখ্যা করা যায় না, ইনটুইশন লাগে। এজন্যই দেখবেন ইমোশনরে ইন্টেলেক্ট দিয়া হ্যান্ডেল করা যায় না। জেনেশুনেই লোকে বিষ করে তাই পান।
স্টিভ জবস এশিয়া ভ্রমণ করে বলেছিলেন— এশিয়ার লোকজন ইন্টেলেক্টের চাইতে ইনটুইশন দিয়া সিদ্ধান্ত বেশী নেয়। ইনটুইশন ইন্টেলেক্ট থেকে পাওয়ারফুল জিনিষ। এজন্য দেখবেন আমাদের এই অঞ্চলে লোকের ইমোশন বেশী এবং এখানকার মুভি সাহিত্য সব আলাদা। পশ্চিমাদের ইনটুইশন দুর্বল। তাই ওদের লাভ স্টোরিগুলোও দেখবেন আমাদের টাচ করতে পারে না ওভাবে (মিডিয়া জম্বিদের বাদে, অরা পানি খেয়েও মাতাল হয়ে যাবে যদি মিডিয়া ঐটারে শরাব বইলা প্রচার করে)। একই কারণে ইউরোপিয়ান দর্শন লইয়া সাহিত্য করা লেখকরা এখানে পাত্তা পায় না।
ইমোশনরে ইন্টেলেক্ট দিয়া বুঝতে গেলে যা হয়, ভ্যালেন্টাইনস ডে হইতেসে তার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ভালোবাসারে এরা বানিজ্যিকরণ করে ফেলছে। ভালোবাসা বস্তুবাদী জিনিষ না। ভালোবাসা বুঝার ক্ষমতা বস্তুবাদীদের নাই, কখনো হবেও না।
আমার ব্রাউজারের একটা ট্যাবে সবসময় ChatGPT ওপেন থাকে এবং সারাদিনই এটা ব্যবহার করা হয় বলতে গেলে। বেশী ব্যবহার করলে এরা ঘন্টা খানেকের জন্য আর ব্যবহার করতে দিতো না, বলতো- আপনি গত এক ঘন্টায় খুব বেশী ব্যবহার করে ফেলছেন। গত দুইদিন ধরে একবারেই ঢুকতে দিচ্ছে না। এবং পাশে পেইড সাবসক্রাইবারদের জন্য লগইন অপশন দেখাচ্ছে। ChatGPT আমার এতই কাজে লাগে যে বছরে ২৪০ ডলার দিয়ে আমি এটা সাবসক্রাইব করার কথা ভাবছি।
"If something is free, ‘you’ are the product" বলে বেড়ানো লোকগুলো কী ভাবছে জানা গেলে ভালো হতো। আপনাদের এইসব কনস্পিরেসি আর ফালতু একটিভিজমের জন্য ফেসবুকের মত ফ্রি প্লাটফর্মগুলোও একদিন বন্ধ হয়ে যাবে এবং কোন কিছু্ই আমরা আর ফ্রি পাবো না। সেইদিনের জন্য রেডি থাইকেন আপনারা।
ভূমিকম্পে সিরিয়া আর তুরস্কে বিশাল বিশাল বিল্ডি যেভাবে ধ্বসে পড়তে দেখলাম, ভয়াবহ! এখন পর্যন্ত দুই হাজার লোকের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। খুবই দুঃখজনক!
Image source: Guardian News
সকল সায়েন্টিফিক ফ্যাক্ট ও ডাটা বলে ঢাকায় যেকোন সময় এধরনের বড় একটা ভূমিকম্প হবে। আরো এক যুগ আগে থেকেই আমরা এই ঝুঁকির ভেতরে আছি এবং একটা বড় ভূমিকম্প না হওয়া পর্যন্ত এই ঝুঁকি কাটবে না। বরং যত দেরিতে হবে টেকটনিক প্লেটের টেনশন তত বাড়বে এবং ভূমিকম্পটা তত মারাত্বক হবে। এরকম বড় মাপের ভূমিকম্পে ঢাকার অর্ধেকের বেশী বিল্ডিং টার্কি ও সিরিয়ার বিল্ডিংগুলোর মত ধ্বসে পড়বে এবং তাতে এক কোটি লোক মারা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কিছু লোক মারা যাবে ইনস্ট্যান্ট, বাকীরা আফটার ইফেক্টে। বিশেষ করে আগুন ও অন্যসব সমস্যার কারণে। এরপর ঢাকারে রিকোভার করা পুরোপুরি অসম্ভব হয়ে যাবে। অন্তত আগামী একশ বছরেও এই শহর রিভাইব করা সম্ভব হবে না। আমরা একটা এটম বম্বের উপরে বাস করছি। কিন্তু, কোথাও কোন প্রস্তুতি বা কিছু নেই।
বাংলা একাডেমীর বইমেলার অবস্থা পয়লা বৈশাখের মত হবে। বইমেলারে আমজনতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটা নির্দিষ্ট ঘরনার ইভেন্টে পরিনত করা হচ্ছে। বইমেলা তার সার্বজনিনতা হারাচ্ছে।