বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ
বাংলাদেশের অধিকাংশ লেখক পাঠকের সাথে চালাকি করার চেষ্টা করে। তারা ইনিয়ে বিনিয়ে তাদের নিজেদের ধ্যান-ধারণা-মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এই চালাকির কারণে পাঠক তাদের পছন্দ করে না। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ ছিলো এইরকম চালাকি চেষ্টা না থাকা। চালাকি কেউই পছন্দ করে না। বিশেষ করে, পাবলিকের নিজস্ব ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে হলে তো একদমই না।
Idiocracy নামে একটা মুভি আছে। ওখানে দেখায় ভবিষ্যতে মানুষ কতটা স্টুপিড হয়ে যেতে পারে। মুভিটা কমেডি ক্যাটাগরির। কিন্তু বাস্তবতা যদি আপনি দেখেন, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ওরকম স্টুপিড হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা একেবারে কম না। বিশেষ করে ঢাকাবাসীদের সেই সম্ভবনা অনেক বেশী। ঢাকার বাতাস বিপদসীমার পাঁচগুন বেশী দূষিত। দেশের প্রথম সারির দু'টো ভার্সিটিই প্রচন্ড দূষিত এলাকায় অবস্থিত, যেখানকার বাতাসে হেভী মেটালের পরিমান অনেক বেশী যা তাদের ব্রেইন ড্যামেজ করে দিচ্ছে।
আমাদের লাইফ স্টাইলের কারণেও আমাদের ব্রেইন ড্যামেজ হয়ে দিনে দিনে স্টুপিড হয়ে যাচ্ছি। জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে মানুষ যেভাবে ব্রেইন ড্যামেজ করছে তার ভেতরে অন্যতাম আটটা কারণ হচ্ছে-
১) অতিরিক্ত স্ট্রেস
২) পরিবেশ দূষণ
৩) সকালে নাস্তা না করা
৪) ঠিকমত না ঘুমানো (বিশেষ করে রাত জাগা)
৫) অতিরিক্ত খাওয়া
৬) ধূমপান / স্মোকিং
৭) পর্যাপ্ত পানি পান না করা
৮) প্রচুর চিনি ও চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া
কয়টা কমন পড়লো আপনার সাথে? ঢাকাবাসী প্রজন্মের ভেতরে প্রথম দুইটা অলমোস্ট সবারই কমন সম্ভবত। আমাদের এক্সট্রিমলি ফালতু এডুকেশন সিস্টেম আর শব্দ ও বায়ূ দূষণের কারণে।
মানুষ সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? এখন পর্যন্ত একজন মানুষের ৮৩০-টা পার্সোনালিটি ট্রেইটের সন্ধান আমি পেয়েছি। তার ভেতরে পজেটিভ ট্রেইট ২৪৪টা, নিউট্রাল ট্রেইট ২৯৪টা এবং নেগেটিভ ট্রেইট ২৯২টা।
এই যেমন পজেটিভ ট্রেইটের ভেতরে আছে—
Active, Adaptable, Adventurous, Alert, Anticipative, Attractive, Balanced, Brilliant, Calm, Caring, Charming, Clean, Confident, Creative, Cultured, Curious ইত্যাদি ইত্যাদি।
নিউট্রাল ট্রেইটগুলো এরকম—
Ambitious, Amusing, Big-thinking, Boyish, Casual, Complex, Cute, Dreamy, Formal, Modern, Moralistic, Mystical, Old-fashioned, Ordinary, Political, Private, Quiet, Religious, Sarcastic, Self-conscious, Sensual, Skeptical, Strict, Stubborn, Stylish, Soft, Tough
এবং নেগেটিভ ট্রেইটগুলো এরকম—
Aimless, Angry, Anxious, Artificial, Bizarre, Brutal, Calculating, Callous, Careless, Childish, Cowardly, Criminal, Critical, Cruel, Destructive, Dirty, Dishonest, Disloyal, Disturbing, Extreme, Foolish, Greedy, Lazy, Messy, Narcissistic, Paranoid, Rigid, Selfish, Shallow, Trendy, Troublesome, Undisciplined
মানুষের এরকম ৮৩০টা ট্রেইট সম্পর্কে অনেক ঘাঁটাঘাটি করেও আমার মনে হয়েছে এর বাইরেও অনেক কিছু আছে। আমরা আসলে মানুষ সম্পর্ক কতটুকু জানি? কতটুকু জানা সম্ভব?
২১০০ সালে পৃথিবীর সবচাইতে বেশী জনসংখ্যার দেশ হিসেবে প্রেডিক্ট করা হচ্ছে ভারতকে। আবার, মুসলিমরা সংখ্যায় সবচাইতে বেশী হবে ধারণা করা হচ্ছে। এসব প্রেডিকশন বাস্তবে ফলুক বা না ফলুক, এগুলোর উপরে ভিত্তি করে পৃথিবীতে অনেক ঘটনা ঘটতেছে। ভারতের মোদী সরকারের কাজকর্মও এসব ঘটনার অংশ।
এবিষয়ে কিছু ইন্টারেস্টিং পর্যবেক্ষন শেয়ার করি-
১) গত বিশ বছর ধরে বিশ্বব্যপী বেশ জোরেশোরে এন্টি মুসলিম ক্যাম্পেইন চলতেছে। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে আমেরিকা, ইউরোপ, ভারত এবং চীনে। ফলে, মুসলিমরা আক্রান্তবোধ করতে শুরু করেছে। এতে তাদের ভেতরে ইউনিটি বাড়তেছে। ব্যপারটা টের পেয়ে পশ্চিম নীতিনির্ধারকরা মুসলিমদের ব্যপারে উদার নীতি অবলম্বনের চেষ্টা শুরু করেছে কিন্তু সুবিধা করতে পারতেছে না। মুসলিম বিদ্বেষের সুযোগে খ্রিস্টান মৌলবাদ ফিরে আসতেছে সেখানে। এটা তাদের জন্য বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতেছে।
২) এন্টি মুসলিম ক্যাম্পেইনে ভারতের অংশগ্রহনও চোখে পড়ার মত। কিন্তু, এটা ভারতের অখন্ডতা নষ্ট করছে। সেই সাথে ভারতে হিন্দু-মুসলিমদের ভেতরে দুরত্ব বাড়াচ্ছে। হিন্দু-মুসলিমদের এই দুরত্ব ভারতের জন্য কী ফল বয়ে আনতে পারে, তা বুঝার জন্য তাদের জনসংখ্যার প্রেডিকশন বুঝা গুরুত্বপূর্ন।
৩) ভারতে বিপুল পরিমান কন্যা সন্তান ভ্রুন হত্যা করা হয়। আর এই কাজটা মূলত করে হিন্দুরা। এর ফলে ওখানে হিন্দু জনসংখ্যার ছেলেঃমেয়ে রেশিও পরিবর্তন হচ্ছে। ভারতে মেয়েদের নিরাপত্তা কমে যাওয়ার পেছনে এর একটা যোগ আমি দেখতে পাই। এই নিরাপত্তাহীনতার কারণে কন্যা শিশু মেরে ফেলার হার আরো বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে জ্যামেতিক হারে বাড়ার সম্ভবনা আছে। ফলে, ভবিষ্যত ভারতীয় হিন্দুরা বিয়ে করার মত মেয়ে পাবে না। ব্যপারটা আরো জটিল আকার ধারণ করেছে জাত-পাতের কারণে। হিন্দুরা চাইলেই যেকোন জাতের মেয়েদের বিয়ে করতে পারে না। ফলে, ভারতের হিন্দু জনগোষ্ঠীর সামনে বড় ধরনের বিপদ অপেক্ষা করতেছে। কী হবে, বলা যায় না কিছু। তবে, ভালো কিছু যে না, সেটা অনুমান করা যায়।
৪) পশ্চিমারা (বিশেষ করে আমেরিকা ও ব্রিটেন) ভারতের অনেক অন্যায় সহ্য করতেছে শুধুমাত্র বিপুল পরিমান ভারতীয় জনসংখ্যার জন্য। প্রেডিকশন অনুযায়ী পৃথিবীর সবচাইতে বেশী জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত। আবার চীন জাপানের মতই বুড়ো-বুড়ির দেশে পরিনত হতে যাচ্ছে। ফলে, ভারতের এই বাজার সবাই দখল করতে চাচ্ছে। চীনও।
৫) পশ্চিমাদের এন্টি মুসলিম ক্যাম্পেইন ব্যাক ফায়ার করার পর ভারতের এন্টি-মুসলিম ক্যাম্পেইন সফল হওয়ার তেমন কোন কারণ নাই। আবার কন্যা শিশু হত্যা ও নারীদের সামগ্রিক অবস্থার (নিরাপত্তা ও সামাজিক অবস্থান) কারণে ওখানে হিন্দু জনসংখ্যাও কমতে শুরু করবে। এর ফলে ভারত পৃথিবীর সবচাইতে জনবহুল দেশ হলেও আলটিমেটলি সেটা হবে বিশ্বের সবচাইতে বড় মুসলিম দেশ। যদি না তার আগেই ভারত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখবেন, সবকিছুর গোড়ায় আছে অর্থনীতি। অর্থনীতির সাথে আবার জনগনের বিশাল যোগ আছে। যারা সংখ্যায় বেশী, তাদের উপরে নির্ভর করে অনেক কিছু। এই দুইটা ব্যপাররে উপরের ফ্যাক্টগুলোর সাথে পারমুটেশন-কম্বিনেশন করে দেখেন, ইন্টারেস্টিং সব ইনসাইট পাবেন।
পুনশ্চঃ এ সংক্রান্ত আগের পোস্টে যে এনালাইসিসটা দেব বলেছিলাম, এটা সেই এনালাইসিস না। এটা যাস্ট ছোট একটা অংশ যাতে রিলেটেড কিছু ব্যপার তুলে ধরলাম। আগের পোস্টের লিংক কমেন্টে।
থিংকিং আউট লাউড
ক) ফেসবুকে সারাদিন বসে থাকা বাংলাদেশী লোকদের দুইটা গ্রুপ দেখা যায়—
১) বয়স্ক, যাদের ক্যারিয়ার অলরেডি স্যাটেলড। অথবা, কবি-সাহিত্যিক বা দার্শনিক টাইপ লোকজন।
২) অল্প-বয়স্ক, যাদের ক্যারিয়ার নিয়া তেমন চিন্তা-ভাবনা নাই।
বয়স কম এবং ক্যারিয়ার ফোকাসড লোকের ভেতরে যারাই এখানে আসছে, তাদের একটা বড় অংশ আসে ভার্সিটির ফেসবুক গ্রুপের একটিভিটস দেখতে। বাকীরা হতাশা কাটাতে কিংবা বিনোদন নিতে আসে।
বয়স কম এবং ক্যারিয়ার ফোকাসড, এধরনের পাবলিকরা ফেসবুকে সারাদিন বসে থাকে না (বা একটু পর পর ফেসবুক চেক করে না)।
খ) একজন মানুষ বাস্তব জীবনে যত বেশী সফল ও পরিচিত, ফেসবুকে সে ততই অসফল (লাইক/কমেন্টের বিচারে) ও অপরিচিত। তবে, কবি-সাহিত্যিক-থিংকার-দার্শনিক ও সেলিব্রেটিদের ব্যপারে এটা উলটা।
গ) ফেসবুকের বেশীরভাগ ভালো লেখকদের কেউ লাইক/কমেন্ট দেয় না। এতে তারা উৎসাহ হারিয়ে লেখা অফ করে দেয় এখানে। ফেসবুকের অডিয়েন্স তাদের উপযোগী না। লেখক-চিন্তকদের জন্য আলাদা প্লাটফর্ম থাকা জরুরী।
ঘ) ফেসবুকে হতাশ পাবলিক বেশী। একারণে এখানে মোটিভেশনাল স্পিচের মার্কেট ভালো। সুডো বিপ্লবও এখানে ভালো জমে।
ঙ) সিরিয়াস নেটওয়ার্কিং এর জন্য ফেসবুক ভুল জায়গা।
চ) রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ফেসবুক বিপদজনক জায়গা। একটিভিস্ট ও ছাত্রনেতাদের ভালো জায়গা।
What.If by Hashem Al-Ghaili একটা পপুলিস্ট পেজ। রিসার্চ ছাড়াই যা ইচ্ছা বলে দেয় অরা। বিশেষ করে সায়েন্টিফিক বিষয়গুলোতে। তবে ওরা জানে, কী বললে অধিকাংশ লোক খাবে। একটা বিদিশি রেডিও মুন্না!
হ্যাপিনেসের সবচাইতে সহজ ও স্বস্তা একটা রাস্তা হইতেছে নেগেটিভিটি। যদিও এটা খুব সামান্যই হ্যাপিনেস দেয়, তবুও নগদ প্রাপ্তির লোভে মানুষ এটা চর্চা করে থাকে। বেশীরভাগ মানুষ একারণেই এত নেতিবাচক হয়, এত পেসিমিস্ট হয়। এই নেতিবাচকতা পরবর্তীতে তার জীবন বিষিয়ে তোলে।
প্রায় কোন কিছুতেই অপটিমিস্টিক না হতে পারার কারণে সে ব্যর্থ হয় আর ব্লেইম করার জন্য কাউকে খুঁজতে থাকে এবং আরো বেশী নেতিবাচক হয়ে ওঠে।
তার দুর্দশার কারণ যে সে নিজে, সেটা কোনদিন ধরতে পারে না।
অহংকার হচ্ছে হীনমন্যতার বাইপ্রোডাক্ট। যে নিজেরে চিনে, নিজের বিশালত্ব জানে, তার হঠাৎ 'মুই কী হনুরে!' মনোভাব আসার চান্স নাই। কারণ, সে আগে থেকেই জানে, সে কী! একটু জনপ্রিয় হয়ে কিংবা ভালো একটা ক্যারিয়ার গড়তে পারার কারণে সে অহংকারী হয়ে ওঠে না। বরং সে ভাবতে থাকে, 'আমি যতটা বড়/যেটুকু ডিজার্ভ করি, ততটা এখনো অর্জন করতে পারিনি।' অথবা, বর্তমানে আমি যেখানে এসেছি আমি এই লেভেলেরই, প্রথম থেকেই। এতদিন প্রমাণ করতে পারিনি, এখন পেরেছি। নতুন করে সে কিছু হয় নাই। সুতরাং অহংকারের কিছু সে খুঁজে পায় না।
অনলাইন ফ্রেন্ডশীপ নিয়ে কথা হচ্ছিলো একজনের সাথে। উনি জানতে চাইলেন,
: অনলাইনে কি মানুষ ফ্রেন্ড হতে পারে?
- পারে। রেয়ারলি!
: রেয়ারলি কেন?
- অনলাইনে মূলত মানুষ কাছাকাছি আসে নিজেদের দুঃখ শেয়ার করে। অনলাইনে ফ্রেন্ড খোঁজে মূলত ব্যক্তিগত জীবনে আনহ্যাপি পাবলিকেরা। ১৮ বছর ধরে অনলাইনে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয়েছে, এধরনের মানুষেরা কখনো বন্ধু হিসেবে ভালো হয় না।
: কেন?
- কেন, তা তো নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে এটুকু বলা যায় যে- একজন মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী হলে সেটার জন্য তার নিজের দায় আছে কমপক্ষে ৫০ ভাগ। তার মানে, সুখী হওয়ার জন্য যে ট্রেইটগুলো মানুষের থাকা দরকার, সেগুলোর ঘাটতি আছে তার ভেতরে। এখন আপনি নিজেও যদি ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী হয়ে অনলাইনে বন্ধু খুঁজতে আসেন, তাহলে দুইজনের ৫০ ভাগ মিলে শত ভাগ অসুখী হওয়ার চান্স অনেক বেশী! এরকম হলে বন্ধুত্ব টেকে না। আফটার অল, আপনি তো সুখী হওয়ার জন্যই বন্ধু খুঁজতেছেন!
প্রথমত, অপমানের হাত থেকে বাঁচার জন্য সুইসাইড একটা প্যারেন্টিং সমস্যা। অভিভাবকরা বাচ্চাদের মেন্টালিটি ওরকম করেই গড়ে তুলছে। ছোটবেলা থেকেই একটা বাচ্চাকে 'স্কাই ইজ ফলিং' টাইপ ভয় দেখানো হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, এটা সমাজের সমস্যা। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশী, কমিউনিটি ও ক্লাব মেটরা এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে যে কিছু মানুষ আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন রাস্তা দেখে না।
এসব আত্মহত্যা ঠেকানোর জন্য লোকজনকে প্যারেন্টিং শেখানো জরুরী। সাথে ব্যপক সমাজ সংস্কার প্রয়োজন।