মুভি সিরিজ

তিনটা টার্কিশ টিভি সিরিজ দেখে ওদের ফ্লিম ইন্ড্রাস্ট্রিরে বলিউড কোয়ালিটি ভাবতে শুরু করেছিলাম। টার্কিশ সিরিজ বা মুভি দেখার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। Mucize The Miracle দেখে মনে হলো- নাহ, আরো কিছু টার্কিশ মুভি দেখা যেতে পারে।

ট্রু-স্টোরি বেসড মুভি। ভালো লাগছে।

আমি ফ্লিম-মেকার হলে একটা টিভি সিরিজ বানাতাম যেটার প্লট হতো এরকম-

পোস্ট এপক্যালিপ্টিক এরা। পৃথিবীর কোন ইলেক্ট্রনিক্স আর কাজ করছে না। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, নগর সভ্যতার পতন ঘটেছে। Revolution টিভি সিরিজটায় যেরকম দেখায় আরকি। কিন্তু, Revolution-এ যা দেখায় সেটা বাস্তব ভিত্তিক না। ভ্যালিড সায়েন্টিফিক ফ্যাক্ট আছে, এরকম ঘটার সম্ভবনা নিয়ে, সেটা দেখাতাম।

তো, যেহেতু যোগাযোগ নাই, নগর সভ্যতা নাই, মানুশ ফিরে গেছে কৃষি সভ্যতায়। কৃষি সভ্যতায় যাওয়াতে পৃথিবীর সবচাইতে সমৃদ্ধ এলাকা হয়ে উঠতে শুরু করেছে উর্বর পলল-ভূমির অঞ্চলগুলো। ফলে, বাংলাদেশ হয়ে গিয়েছে বসবাসের জন্য সবচাইতে উপযোগী ভূমি।

এখন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে মাইগ্রেন্ট বাঙালিরা আছে, তারা বাংলাদেশে ফেরার স্বপ্ন দেখছে। অস্ট্রেলিয়ার, আমেরিকার অনুর্বর ভূমিতে অনেক কষ্ট করে কৃষি কাজ করে আর বাংলাদেশে স্মৃতিচারন করে। দেশে কিভাবে ব্যাক করা যায় সেই পরিকল্পনা করে। এদের ভেতরে একদল সাহসী লোক গাছ কেটে জাহাজ বানিয়ে রওনাও দিয়ে দেয়।

এরকম অনেককিছু নিয়ে অনেক ইন্টারেস্টিং সব ঘটনাবহুল একটা সিরিজ। মেকিং স্টাইলটা হলিউড টাইপ হবে। Revolution, LOST সিরিজগুলোর মত অ্যাকশন ড্রামা টাইপ।

যারা নাটক-সিনেমা-সিরিজ তৈরি করেন, তারা চাইলে এই প্লট-টা ব্যবহার করতে পারেন। আরো ডিটেইলস আইডিয়া ও ফ্যাক্ট লাগলে যোগাযোগ করতে পারেন। এরকম একটা সিরিজ দরকার আসলে।

জাপানি একটা মুভি দেখলাম।
Survival Family (2016)
চমৎকার মুভি। সবার দেখা উচিত টাইপ মুভি।

The Courier দেখতেছিলাম। নাইকার পেছনে ফেউ লাগছে। যেখানেই যায় গোয়েন্দা দপ্তরে রিপোর্ট পাঠায়। এটা বাংলা বা হিন্দী সিনেমা হলে কী হতো ভাবছিলাম।

- স্যার, নাইকা এখন শপিংমলে। এইমাত্র নায়কের সাথে দেখা হইসে।
- ওকে! চোখে চোখে রাখো।
- ঠিকাসে স্যার!

একটু পরেই—
- স্যার! স্যার!! নায়ক নাইকা দুইজনই উধাও...!
- হোয়াট!!!

এমন সময় সুন্দরবনের এজেন্ট কল দিলো—
- স্যার, নায়ক-নাইকা দুইজনরে পাওয়া গেছে। অরা জঙ্গলে নাচানাচি করতেসে!

দ্যা ম্যাট্রিক্স হচ্ছে কম্পিউটার/আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স একদিন পৃথিবী দখল করে নিবে টাইপ হলিউডি প্রোপাগান্ডার একটা ইন্টারেস্টিং সংস্করণ, এর বেশী কিছু না। পৃথিবী দখলের লজিক হিসেবে দেখায় যে- কম্পিউটারের অনেক পাওয়ার দরকার তাই তারা হিউম্যান বডিরে পাওয়ার সেল/ ব্যাটারি হিসেবে ব্যবহার করে। আর মানুশদেরকে যখন এভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তখন তাদেরকে একটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ভেতরে বসবাস করতে দিচ্ছে। VR হেডসেট দিয়ে যেটা আপনি এখনি পারবেন করতে। কিন্তু, VR চোখের ভেতর দিয়ে দৃশ্য গিয়ে ব্রেইনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উপলদ্ধি দেয় আর এটা সরাসরি ব্রেইনে জিনিষটা জেনারেট করে, এই পার্থক্য। এর বাইরে মুভিটায় যেসব থিওরী দেখায়, এগুলো তো মনে হয় কমবেশী সকলেই জানে। মানে, ২০২১ সালের জন্য এগুলো নতুন কিছু না আরকি।

তো, ম্যাট্রিক্স নিয়া অবশ্য আপনি চাইলে অন্যরকম ইন্টারেস্টিং ভাবনাও ভাবতে পারেন। এই যেমন ধরেন- আমরা এই যে পৃথিবীতে আছি, এটা আমাদের ব্রেইনে জেনারেটেড একটা সিমুলেশন মাত্র। আমরা হয়তো আমাদের দেখা মহাবিশ্বের বাইরে কোন একটা জায়গায় যাস্ট শুয়ে আছি, আমাদেরকে এই রিয়েলিটির ভেতরে নিক্ষেপ করা হইছে টেস্ট করার জন্য। পাবজি গেমে যেমন ৫০ জন প্লেয়ার একটা ভার্চুয়াল দুনিয়াতে ঢুকে মারামারি করে। মানে, প্রসেসটা এরকম আরকি। এইভাবে ভাবলে ম্যাট্রিক্স নিয়া অত বিতর্কের কিছু থাকে না আর।

যাহোক, The Matrix Resurrections হলে দেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।



মুভিটা দেখেছি গতকাল রাতে। একবার একা পুরোটা দেখার পর Farah সহ আরেকবার পুরোটা দেখলাম। ভালো মুভি। মুভিটাতে যে ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা বলা হয়েছে সেরকম কিছু হওয়ার সম্ভবনা খুব একটা আছে বলে মনে হয় না, তবে এতে কোন সন্দেহ নাই যে মানুষ শেষ পর্যন্ত আবার কৃষি কাজেই ফিরে যাবে বা যেতে হবে। কৃষি হচ্ছে আমাদের সভ্যতার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন জিনিষ, যদিও কৃষকদেরকে আমরা সবচাইতে কম মূল্যায়ণ করি।

Interstellar মুভিতে যে খাদ্য সংকটের বিপর্যয় দেখানো হয়েছিলো এই বিপর্যয় পুরো পৃথিবীতে কখনো না আসলেও বাংলাদেশ কিন্তু এরকম একটা বিপর্যয়ের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। দেশের প্রতিটা বাজারে গেলে আপনি প্রচুর খাদ্যদ্রব্য দেখতে পাবেন ঠিকই, কিন্তু এগুলোকে আসলে খাবার বলাটা ঠিক হবে না। কৃষি জমি বিষাক্ত হওয়া থেকে শুরু করে প্রসেসিং এর সময়ে মেশানো ভেজালের পরিমান বাড়তে বাড়তে আমাদের দেশের খাদ্যদ্রব্য এখন আর খাওয়ার উপযোগী নেই। ইদানিং প্রায়ই ভাবছি গ্রামের দিকে প্রচুর জমি কিনে একটা খামার বাড়ি তৈরির কথা। এখন পর্যন্ত উচ্চমূল্যে অর্গানিক ফুড পাওয়া যাওয়াতে উচ্চবিত্তরা কিছুটা নিরাপদে আছে, কিন্তু এটা বেশিদিন থাকবে না। Interstellar মুভিটার মত আমাদের দেশে খাওয়ার উপযোগী শস্য ফুরিয়ে আসছে। এখন হয় এই দেশ থেকে পালাতে হবে নয়তো গ্রামের দিকে গিয়ে খামার বাড়ি তৈরি করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিডনি ড্যামেজ আর ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে হবে।

বিপদটা কিন্তু Interstellar মুভির চাইতেও ভয়াবহ।

LOST আমার প্রিয় একটা টিভি সিরিজ। তবে লস্টের চাইতে বেশি ভালো লেগেছে The Walking Dead । এই দুইটা সিরিজেরই মূল বিষয় হচ্ছে সার্ভাইভাল। বিরুপ পরিবেশে টিকে থাকার গল্প। লস্টে দেখানো হয় বিমান দূর্ঘটনার কারণে নির্জন একটা দ্বীপে গিয়ে পড়ে আর Walking Dead-এ Zombie Apocalypse এর কারণে পৃথিবীর সমস্ত টেকনোলজি ধ্বংস। মানুষ দলবদ্ধ ভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে, ছোট ছোট গোত্রের মত তৈরি হচ্ছে। বিরুপ পরিবেশে টিকে থাকার সেকি প্রচেষ্টা...

ইউটিউবে বেশ কিছু ডকুমেন্টরি দেখেছি, পৃথিবী থেকে মানুষ সব হারিয়ে গেলে কি হবে। বা সমস্ত জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে কি হবে বা ইলেক্ট্রিসিটি আর টেকনোলজি হারিয়ে গেলে কি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে। এধরনের বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর গেমও তৈরি হয়েছে, সেগুলো আবার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সত্যিকার মানুষেরা অনলাইনে কানেক্ট করে খেলে, দল গঠন করে টিকে থাকার চেষ্টা করে। টিকে থাকার এই চেষ্টা বা সার্ভাইভাল বিষয়ক একটা সিমুলেশন গেম খেলেছিলাম- Banished, চমৎকার গেম। সভ্যতার মূল জিনিষটা ধরতে পারবেন গেমটা খেললে।

যাহোক, আসল কথায় আসি। ধরুন আজকের টেকনোলজি যদি কোন কারণে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে কি ঘটতে পারে? যেমন আজকে যে ব্লাকআউট হলো, এটা যদি কন্টিনিউ হতো? ধরুন পৃথিবীর কোন বিপর্যয়ের কারণে মাসের পর মাস ইলেকট্রিসিটি থাকলো না। ইলেক্ট্রিসিটি নেই মানে ধীরে ধীরে বাদবাকী সকল টেকনোলজিও অচল। তারপর? আপনি নিজের বাসায় জমিয়ে রাখা পানি ও খাবার দিয়ে হয়তো মাসখানেক চলতে পারলেন। অথবা ধরে নেয়া যাক আপনার বাসায় অনেক ক্যাশ টাকা রাখেন, সেগুলো দিয়ে ছয়মাসের কেনাকাটা করে ফেললেন। ছয়মাস পর? ছয় মাস পর আপনাকে পাঁচটি মৌলিক চাহিদার প্রধানতমটির (খাদ্যের) সন্ধানে ফিরে যেতে হবে গ্রামে। টিকে থাকার জন্য শুরু করতে হবে জমি চাষ করা, এর বিকল্প আর কিছু নেই।

সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই কৃষিকাজ। অথচ কৃষি সম্পর্কেই আমাদের জ্ঞান সবচাইতে কম। আর কৃষকদেরকেই আমরা সবচাইতে বেশি অবজ্ঞা করি। আহা সভ্যতা, আহা সভ্যরা...

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি