শিক্ষাব্যবস্থা

ব্রেইন মূলত একটা হার্ডওয়্যার। সেখানে পারিবারিক শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা হচ্ছে আপনার অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার। এখন সুপার কম্পিউটারে যদি আপনি উইন্ডোজ ৯৫ ইন্সটল করেন, তাহলে এই কম্পিউটার দিয়ে কী হবে? আমাদের সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা তাই করছে। এরা বরং মেধাবীদের ধ্বংস করে যাচ্ছে। দুই/চারজন নিজের উদ্যোগে এখানে স্বশিক্ষিত হয়ে কিংবা দেশের বাইরে গিয়ে ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কিছুটা বাঁচিয়েছে নিজেদের।

আর আমাদের দেশের ভেতরে নটরডেম বাঁচাচ্ছে অল্প কিছু শিক্ষার্থীদের। আপনি দেখবেন ঢাবি ও বুয়েটের অধিকাংশ ভালো ছাত্ররা নটরডেম থেকে আসা। কারণ, ওরা এদেশের আজগুবি শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক কিছুই মানে না। সব কলেজে লটারি দিয়ে ভর্তি হয়, ওখানে লটারি দিয়ে হওয়া যায় না।

প্রথম আলো: তা বাঙালি মুসলমানের মধ্যে মননশীলতা তৈরি হলো না কেন?

বদরুদ্দীন উমর: শরীরে ইনজেকশন দিয়ে তো মননশীলতা তৈরি করা যায় না। রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করেও এটি পাওয়া যাবে না। এর জন্য চর্চা দরকার। আজ বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন, জ্ঞানের চর্চা বলে কিছু নেই। কিন্তু ভারতে মোদি সরকার যতই দুর্বৃত্তায়ন চালাক না কেন, সেখানে প্রগতিশীলেরা, কমিউনিস্টরা ইতিহাসচর্চা করছেন। রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিব, অমিয় কুমার বাগচীর মতো অনেক ইতিহাসবিদ আছেন। আর আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকান, কোনো ইতিহাসবিদ নেই।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী একটা এডুকেশন সিস্টেম তৈরি ও দাঁড় করানো হচ্ছে আমার জীবনের লক্ষ্য। লেভেল বেসড এডুকেশন সিস্টেম এর একটা ধাপ (বিস্তারিত লিংক কমেন্টে)। এর সাথে স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর একটা পদ্ধতি যোগ করার উপায় নিয়ে কাজ করছি। সেই সাথে ইফেক্টিভ এডুকেশন কনটেন্ট নিয়েও কিছু কাজ এগিয়েছে। ফিউচার জব মার্কেট কেমন হবে, সেখানে কী কী স্কিল দরকার হবে, এসবও আমাদের গবেষণার বিষয়।

বর্তমান একাডেমিক সিস্টেমে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় নষ্ট হয়। সময়রে যতটা সম্ভব ইফেক্টিভলি ব্যবহার করতে না পারলে আপনি টিকতে পারবেন না সামনে। অটোমেশন যত বাড়বে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের ব্যবহার যত বাড়বে আপনার জন্য তত কঠিন হয়ে যাবে সবকিছু। ২০৩০ সাল রে একটা ডেডলাইন হিসেবে দেখতেছে সব বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু, কোভিড-১৯ এসে এই ডেডলাইন আরো এগিয়ে নিয়ে আসছে। রিমোট জব নিয়ে এত হৈচৈ অন্তত ২০২১ এ হওয়ার কথা ছিলো না। খারাপ দিন খুব দ্রুত এগিয়ে আসতেছে রে ভাই। তাই, আপনারা এখনি সচেতন হওয়া শুরু করেন। আপনার বাচ্চারে, ভাই-বোনরে সতর্ক করেন। তারা যেন এই সার্টিফিকেট ভিত্তিক শিক্ষ-ব্যবস্থার উপরে পুরোপুরি নির্ভর না করে।

এসব নিয়া তো প্রায় এক যুগ ধরেই বলতেছি। সাম্প্রতিক সময়ে জব-মার্কেটের অবস্থা, দ্রব্য-মূল্য ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি নিয়ে লোকজনের হতাশা দেখে মনে হলো আবারো রিমাইন্ড করি।

বাংলাদেশের লেখকরা বই বিক্রি হয় না বলে হা-হুতাশ করে। কিন্তু তাদেরকে বই বিক্রি বাড়ানোর জন্য কিছু করতে দেখা না সচরাচর; বরং সাধারণের বোধগম্যতার বাইরে লেখালেখি করতে পারারে এদেশে স্টাবলিশ করেছে যা তাদের পাঠক আরো কমিয়ে দিয়েছে। গত ৫০ বছরে সেবা প্রকাশনী ও হুমায়ূন আহমেদ কিছু পাঠক তৈরি করতে পেরেছে। আমাদের 'এলিট' ইন্টেলেকচ্যুয়ালরা আবার সেবা এবং হুমায়ূন, কাউকেই দেখতে পারে না।

একাডেমিক বইয়ের বাইরে এদেশে সবচাইতে বেশী বিক্রি হয় ইংরেজী বই। এই পাঠকদের অধিকাংশই ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্ট ও হাই প্রোফাইল ব্যক্তিরা। ইংলিশ মিডিয়ামের কথা বিশেষ করে উল্লেখ করলাম কারণ, আমাদের এখানে পাঠক তৈরি না হওয়ার জন্য দায়ী আমাদের এডুকেশন সিস্টেম। একটা মুখস্ত-বিদ্যা সিস্টেমের ভেতর দিয়ে যাওয়া এবং ৯টা-৫টা সরকারী চাকুরী করার স্বপ্ন নিয়ে গড়ে ওঠা জনগনকে বই পড়ানো কঠিন। এডুকেশন সিস্টেম বদলাতে পারলে এখানে প্রচুর পাঠক তৈরি হবে।

ইউটিউবের আইডিয়া আসে জাওয়েদ করিম নামের এক বাংলাদেশীর মাথায়। তারপর তিনি আরো দুইজনকে সাথে নিয়ে ইউটিউব প্রতিষ্ঠা করেন। খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খানও বাংলাদেশী। একাডেমিক ক্ষেত্রেও অনেক বড় বড় ফিগার পাবেন বাংলাদেশী। এদের সবার ভেতরে একটা কমন ব্যাপার হচ্ছে, এরা কেউই বাংলাদেশে বড় হয়নি, বাংলাদেশে পড়াশোনা করেনি।

জাতি হিসেবে বাংলাদেশীরা মেধাবী। এটা শুধুমাত্র আমার পর্যবেক্ষন না, অনেক বড় বড় মানুশের পর্যবেক্ষনও। কিন্তু এই মেধাবীরা এদেশে থাকলে কিছু করতে পারে না।

কেন?

আমি এর তিনটা কারণ খুঁজে পেয়েছি।
১) ব্যাড প্যারেন্টিং
২) ব্যাড এডুকেশন সিস্টেম
৩) ব্যাড এনভায়রমেন্ট / বাজে পরিবেশ

ব্যাড প্যারেন্টিং ও ব্যাড এডুকেশন সিস্টেম নিয়ে তো আগে অনেকবার বলেছি। আজকে এই বাজে পরিবেশটা নিয়ে কয়েকটা পয়েন্ট বলি-

  • আপনি দেখবেন, আমাদের এখানে অধিকাংশ পাবলিক এন্টারটেইনমেন্টের পেছনে প্রচুর সময় দেয়। এন্টারটেইনমেন্ট গুরুত্বপূর্ন, কিন্তু এর লিমিট থাকা উচিত।

  • এখানে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চারে নিরুৎসাহীত করা হয়। এদেশের বড় বড় ভার্সিটিগুলোর শিক্ষার্থীরা টিটকারির ভয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বই পড়ার কথা বলতে ভয় পায়। ফেসবুক সেলিব্রিটিরাও দেখবেন অন্যরা কেন চায়ের কাপের সাথে বইয়ের ছবি আপলোড করে, সেটা নিয়ে ট্রল করে। সেসব ট্রলে হাজার হাজার লাইক শেয়ার থাকে।

  • এদেশের ভার্সিটির ক্যাম্পাসগুলোতে পড়ালেখার পরিবেশ খারাপ। এর মাঝেও যারা একটু সিরিয়াসলি পড়তে চায়, বই-টই পড়ে, তাদেরকে সকলে মিলে টিটকারী দেয়।

  • আমাদের এখানে দেখবেন রেজাল্ট নিয়ে ব্যাপক প্রতিযোগীতা। পৃথিবীর আর কোন দেশে এরকম দেখা যায় না।

এরকম আরো অনেক পয়েন্ট আছে। এসব কারণে যারা একটু সিরিয়াস, যারা শিখতে চায়, তারা বলতে গেলে একঘরে হয়ে থাকে। এদের অধিকাংশ পরবর্তীতে দেশের বাইরে গিয়ে বেশ ভালো করে অথবা দেশে একাকিত্বের কারণে মোটিভেশন হারিয়ে ফেলে।

এখন অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা বদলাচ্ছে। ইন্টারনেটের কল্যানে নতুন প্রজন্ম বুঝতে শুরু করেছে- তারা যে পরিবেশে বাস করে এটা বিষাক্ত পরিবেশ, দুনিয়া অনেক বড়। এর থেকে বের হয়ে আসার জন্য তারা নিজেরাই ছোট ছোট কমিউনিটি তৈরি করে নিচ্ছে। এই কমিউনিটিগুলোকে স্পেস দেয়া দরকার। এদেরকে নার্সিং এর জন্য কিছু প্লাটফর্ম তৈরি করা জরুরী।

আপনার ট্যালেন্ট ফেসবুকে সমালোচনায় নষ্ট না করে কিছু টেক্সট লেখেন, যা আমাদের শিক্ষার্থী ও ক্যারিয়ারে থাকা লোকজনের কাজে লাগবে। এই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান দূর্বলতা হচ্ছে একাডেমিক টেক্সটের অভাব।



ইউনেস্কোর এই ম্যাপটা দেখলে বুঝতে পারবেন। চায়না, রাশিয়া, জাপান, ইন্ডিয়া, ইভেন ইতালিতে স্কুল-কলেজ সব খোলা, কিছু জায়গায় পার্শিয়ালি খোলা। কিন্তু খুব কম দেশই আছে যেইখানে পুরাপুরি বন্ধ।

এক বছরের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ সব বন্ধ। এতে কী হচ্ছে? এতে দু'টো শিক্ষাবর্ষে পড়ালেখা হয়নি। শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় গ্যাপ পড়ে গিয়েছে। এরকম গ্যাপ পড়লে আবার পড়ালেখায় ব্যাক করা কতটা কষ্টকর সেটা অনেকেই জানেন আশা করি। এই শিক্ষার্থীদের আর পড়ালেখা হবে?

এর সাথে যোগ হয়েছে অটো-পাশ। যারা বর্তমান ক্লাশের পড়া না পড়েই নতুন ক্লাশে উঠে গেল, তারা আর বুঝতে পারবে না কিছু। ফলে, তাদের বাকী শিক্ষা জীবন হুমকির মুখে পড়ে গেল।

১২-টা ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস হওয়ার পথে আছে। এর কুফল আপনি টের পাবেন ১৫-২০ বছর পরে। এমনি এদেশে যোগ্য লোকের খুব অভাব। এই ঘটনার পর আর লোক পাওয়াই যাবে না। ২০ বছর পর দেখবেন দেশের অধিকাংশ জব করতেছে ভারতীয়রা। আর বাংলাদেশীরা সব তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী, পিওন হয়ে বসে আছে। যে অল্প কিছু মানুশ পারিবারিক সচেতনতার কারণে পড়ালেখা করেছে, এরা সব দেশ ছাড়বে তখন। পরিস্থিতিটা কেমন হবে, কল্পনা করে দেখেন।

এই মূহুর্তে এটা দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত, কিন্তু কোথাও কোন আলাপ নাই।

এডুকেশন সিস্টেম কেমন হওয়া উচিত? (৪)

শিক্ষা পদ্ধতি হওয়া উচিত প্রশ্ন ভিত্তিক। টেক্সটবুকে সাজানো প্রশ্ন না, শিক্ষার্থীদের করা প্রশ্ন। যেকোন একটা বিষয় নিয়ে প্রথমে শিক্ষার্থী নিজে পড়বে এবং পড়তে গিয়ে যেসব প্রশ্ন তার মাথায় আসবে সেগুলো লিখে ফেলবে। প্রশ্ন মানে এরকমও হতে পারে যে- যা সে বুঝতে পারছে না সেগুলো লিখে ফেললো।

শিক্ষক প্রথমে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবেন। সেই আলোচনা থেকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রশ্নগুলো কাটতে শুরু করবে। কাটাকাটি শেষে যেসব প্রশ্ন রয়ে যাবে সেগুলো হবে আলোচনার বিষয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করে (সফটওয়্যার ব্যবহার করলে সহজ) সেগুলোর উত্তর দিতে শুরু করবেন শিক্ষক।

এখানে আপনার মনে হতে পারে, একটা ক্লাশে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকলে তাদের প্রত্যেকের ১০টা করে প্রশ্ন মানে তো ৫০ x ১০ = ৫০০ প্রশ্ন। ৫০০ প্রশ্নের জবাব দেয়া তো সম্ভব না। আসলে ব্যাপারটা এরকম না। দেখা যাবে এই ৫০০ প্রশ্নের অধিকাংশই একই ধরনের প্রশ্ন। দুই/তিনজনের ১৫-২০টা প্রশ্নের সমাধান দেয়ার পর দেখা যাবে ৫০০ প্রশ্নের প্রায় সবগুলোরই জবাব চলে এসেছে। সফটওয়্যার ব্যাবহার করা হলে শিক্ষার্থী ক্লাশ চলাকালীন সময়ে নিজেদের উত্তর পেয়ে যাওয়া প্রম্নগুলো টিক দিয়ে ফেলবে। ফলে শিক্ষক জানতে পারবেন আর কতটি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। যদি প্রশ্নের সংখ্যা খুব বেশী হয় এবং ক্লাশের সময় শেষ হয়ে যায়, তাহলে শিক্ষক সেই প্রশ্নগুলো পরের ক্লাশে জবাব দেয়ার জন্য সংরক্ষন করে রাখবেন।

এই প্রশ্নগুলো শিক্ষকদের ক্লাশ লেকচার তৈরিতে সাহায্য করবে। দেশের সামগ্রীক একাডেমিক কনটেন্ট তৈরি ও পরিমার্জনেও সাহায্য করবে।

একুশ শতকে টিকে থাকতে হলে প্রতিদিন শেখার উপরে থাকতে হবে। Edx ডট .org, Udemy, এধরনের আপডেটেড কনটেন্ট থেকে শিখতে হবে। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি ও ছাপানো টেক্সটবুকের বিদ্যার উপরে নির্ভর করে থাকাটা ভুল হবে, কারণ ওগুলো আপডেটেড না। আর অবশ্যই আপনার একটা কম্পিউটার থাকতে হবে। মোবাইল দিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সম্ভব, শেখা বা গবেষণা সম্ভব না। কম্পিউটার কেনার ক্ষেত্রে হয় ম্যাকবুক কিনুন অথবা ডেস্কটপ। আইবিএম গোত্রের ল্যাপটপগুলোর ক্ষমতা কম ও কম টেকে।

এবং লার্নিং সাইটগুলোতে চোখ রাখুন। গতকালকেও Udemy তাদের প্রায় ১৫০০ ডলারের কোর্স ফ্রি করে দিয়েছিলো (Inspire to Learn গ্রুপে লিংক শেয়ার করেছিলাম)। এরকম অফার এখন প্রায়ই পাবেন এবং লার্নিং প্লাটফর্মের সংখ্যা এখন বাড়তেই থাকবে।

হ্যাপি লার্নিং... গুড লাক।

এডুকেশন সিস্টেম কেমন হওয়া উচিত? (২)


তাতিন আসছে হোম ওয়ার্কে হেল্প নিতে। ঝড় দিয়ে বাক্য বানাতে হবে।
: বাবা, ঝড় দিয়ে কী হবে?
: উমম... ঝড়ের সময়... ঝড়ের সময়...
: বৃষ্টিইইইই হয়য়য়য়য়?, তাতিন মহা উৎসাহে বলে উঠলো।
: রাইট! ঝড়ের সময় বৃষ্টি হয়। ওয়াও!


তাতিন বিজয়ের হাসি নিয়ে হোমওয়ার্কে ব্যাক করলো। আমি দেখেছি, কখনো কাউকে কোন কিছুর সমাধান সরাসরি না দিয়ে ক্লু ধরিয়ে দিয়ে একটু সময় দিলেই সে ওটা নিজেই করতে পারে। জাস্ট তার কনফিডেন্ট বাড়িয়ে দিতে হয়। তাকে বিশ্বাস করাতে হয় যে সে পারবে। মোস্ট কেস, মানুষ পারে। স্টুডেন্ট লাইফে আমি কখনো টিউশনি করি নাই। কিন্তু অনেকেরে দুই/চারদিন ফ্রি পড়িয়েছি। যার ব্যপারে তার প্যারেন্ট দাবী করতো যে, সে কিছুই পারে না, অমনোযোগী... আমার কাছে একদিন পড়লেই দেখা যেত সে সব পারতেছে। অথচ, আমি তারে তেমন কিছু শেখাই নাই.. আমি শুধু তার কনফিডেন্ট বাড়িয়ে দিয়েছি এবং তাকে সময় দিয়েছি।
অনলাইনে একসময় অনেকেরে প্রোগ্রামিং শিখিয়েছি। তাদের বেলায়ও একই ব্যপার। আমি দুই লাইন বলে তাদেরকে বাকী দশ লাইন নিজে থেকে বুঝার সময় দিয়েছি, তারা বুঝে গিয়েছে।


আমার জীবনের বেশীরভাগ জিনিষ বই পড়ে শেখা। বিশেষ করে কম্পিউটার রিলেটড সবকিছু। কিন্তু, কোনদিন কোন ভিডিও টিউটোরিয়াল থেকে আমি কিছু শিখতে পারি নাই। আমার দেখা ৯৯% ভিডিও টিউটোরিয়ালে দেখেছি, প্রচুর বক বক করে শিক্ষক। একদম অযথাই কথা বলে। এরকম কিছু থেকে শেখা বিরক্তিকর (জানি না অন্যদের লাগে কিনা, আমার কাছে বিরক্ত লাগে অনেক)। ফলে, ভিডিও টিউটোরিয়ল থেকে এই জীবনে খুব কমই শিখতে পেরেছি (খান একাডেমি আর edX বাদে)।


বাইরে থেকে তথ্য ব্রেনে ঢোকানোর চাইতে ব্রেইন নিজে চিন্তা করে যে শিক্ষা অর্জন করে, সেটা বেশী কার্যকর। এর জন্য প্রথমত লাগে কনফিডেন্ট, তারপর লাগে চিন্তা করার সময়। চিন্তা করা শেখাতে পারলে যেকোন মানুষের পক্ষেই যেকোন কিছু শেখা ও বুঝা সম্ভব বলে আমার মনে হয়। আমাদের দেশের শিক্ষাদান পদ্ধতিতে এই জিনিষটার অভাব আছে।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি