যাপিত জীবন নিয়ে বিক্ষিপ্ত চিন্তা-ভাবনা ও অভিজ্ঞতা
Rain Rain
Click here to watch the video
সময় একটা কারেন্সী। আমরা প্রতি মাসে মাত্র ৭২০ ঘন্টা পাই খরচ করার জন্য। আমার বর্তমান টাইম প্ল্যানার এটা। কতটা কম সময় যে আমাদের হাতে! নিজের জন্য মাত্র ৩ ঘন্টা সময় বরাদ্দ। এর মাঝেই সব করতে হয়। ফ্যামিলি, বন্ধু-বান্ধব, সোশ্যাল মিডিয়া ও নিজেরে সময় দিতে হয়।
যখন স্কুলে পড়ি, এক বড় ভাই বলছিলেন—ভার্সিটিতে পড়ালেখা করে যতটুকু শেখা যায়, হলে থেকে তারচাইতে বেশী শেখা যায়। ভাবতাম, এটা কিভাবে সম্ভব? যখন থেকে বাসার বাইরে থাকা শুরু করলাম, তখন থেকে উনার এই কথার মর্ম উপলদ্ধি করতে শুরু করলাম।
বাসার বাইরে থাকতে গিয়ে প্রথমেই সমস্যা দেখা দিলো খাবার নিয়ে। রেস্টুরেন্ট/ক্যাফের খাবার সবসময় আমার প্রিয় ছিলো। কিন্তু দিনের পর দিন যে এগুলো খাওয়া যায় না, সেটা আবিষ্কার করতে একমাসও লাগেনি। তখন আমি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকি, একা। রান্নার জন্য বুয়া রাখা শুরু করলাম। বুয়াদের রান্নাও খাওয়া যায় না। বেশ কয়েকজন বুয়া ও দু'জন কাজের মেয়ে চেঞ্জ করেও যখন খাওয়ার বিষয়টা সমাধান করা গেল না তখন ভাবলাম ফ্ল্যাট মেট নেব। রান্না করতে পারে এরকম কাউকে খুঁজতে লাগলাম এবং পেয়েও গেলাম। ভার্সিটি হলে থাকার বাদবাকী জ্ঞানপর্বের শুরু তখন থেকে।
আপনি যে পরিবেশে বড় হয়েছেন ও যে কালচারে অভ্যস্থ, তা থেকে ব্যতিক্রম কালচারের কারো সাথে থাকা ও খাপ খাওয়ানো যে খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা বিষয়, এই জ্ঞানের শুরু তখন থেকে। চ্যালেঞ্জ গ্রহন করবো ঠিক করলাম।
যে ছেলেটাকে ফ্ল্যাট মেট হিসেবে নিলাম, তার সেন্স অব ক্লিনলিনেস ছিলো অকল্পনীয় খারাপ। কোন মানুশের পক্ষে এতটা অগোছালো ও নোংরা কিভাবে থাকা সম্ভব, সেটা নিয়ে আমি আজো ভাবি। যাহোক, উনার রান্না মোটামুটি ভালোই ছিলো কিন্তু আলু দিয়ে কিছু রান্না করলে আধা-সেদ্ধ থেকে যেত আলু। পরে আবিষ্কার করলাম, উনি আলু অর্ধেক সেদ্ধ করে তুলে রাখে এবং পরে তরকারীতে দেয়। আলু অর্ধেক সেদ্ধ করে রেখে দিলে যে বাকী জীবনেও তা আর সেদ্ধ হবে না, এই সত্য উনাকে আমি কখনো বুঝাতে পারি নাই। উনি বলতো- 'তুমি কত বছর ধরে রান্না করো? আমার দশ বছরের অভিজ্ঞতা!'
দশ বছরের অভিজ্ঞ কুকের আধা সেদ্ধ আলু না হয় খাওয়া গেল, কিন্তু সবকিছু ডিপ ফ্রিজে রেখে স্বাদ নষ্ট করার বিষয়টা মানা কষ্টকর ছিলো। উনি রান্না করা খাবার ডিপে রেখে দিতেন, মাসের পর মাস। উনার ধারণা ছিলো ডিপে খাবার কখনো নষ্ট হয় না। খাবার একদমই নষ্ট হবে না, এরকম ফ্রিজ যে শুধুমাত্র ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ইউজের জন্য বানানো হয় এবং কর্মার্শিয়াল মার্কেটে পাওয়া যায় না, এই সত্য উনারে কখনো বুঝাতে পারি নাই। উনার এই ডীপ ফ্রিজ প্রীতির যন্ত্রনা থেকে বাঁচতে মাঝে মাঝে বাইরে খাওয়া শুরু করতে হলো।
প্লাস্টিকের প্রতি ছিলো উনার অগাধ ভালোবাসা। কিছুদিনের ভেতরে প্লাস্টিকের তৈরি জিনিষপত্র দিয়ে উনি কিচেন ভরে ফেললেন। আমি বেশ কয়েকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে—প্লাস্টিক ক্যান্সার সৃষ্টি করে, উনি মানতেন না। উনার দৃষ্টিতে প্লাস্টিক ছিলো বিজ্ঞানের এক মহান আবিষ্কার। উনার এই বিজ্ঞানপ্রীতি থেকে বাঁচতে সবকিছু আলাদা করে কিনতে হলো আমাকে।
এতটুকু পর্যন্ত সব মেনে নেয়ার মত ছিলো। কিন্তু যেদিন আবিষ্কার করলাম, রান্না করার পর উনি হাড়ি পাতিল না ধুয়ে দিনের পর দিন রেখে দেন এবং পরে পানি দিয়ে কোনরকমে একটু ওয়াশ করেই সেটায় খাবার রাখেন, এরপর আর উনার রান্না খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আবার শুরু করলাম বাইরে খাওয়া। মাঝে মাঝে আম্মু বিফ রান্না করে পাঠাতো। বন্ধু-বান্ধবরাও রান্না করে দিয়ে যেত। কিন্তু উনি সেগুলোও নষ্ট করে ফেলতেন পানি মিশিয়ে। আমার প্রিয় গরুর মাংস উনি ডিপে রেখে দিতেন এবং সেখান থেকে বের করে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে গরম করে এর বারোটা বাজাতেন। মাংসে এভাবে পানি মিশিয়ে গরম করা যে উচিত না, দশ বছরের অভিজ্ঞ কুকরে আমি কোনভাবেই বুঝাতে পারিনি।
তাতিনকে যখন স্কুলে ভর্তি করলাম তখন ও বললো— 'টিচার হবো।'
আমি বললাম, আচ্ছা।
তার কিছুদিন পর বলে— 'দোকানদার হবো'।
আমি হেসে বললাম, আচ্ছা!
এরপর আমার কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ে বলে—'লেখক হবো।'
আমি তখন নিজেকে নিয়ে গর্বিত হয়ে গেলাম।
আজকে বলে—'প্রেসিডেন্ট হবো।'
এখন আমি টেনশিতো!
মাঝে মাঝে ভাবি, দুই মাস আগে যদি করোনাতে মরে যেতাম, কী হতো এখন? কতজন আসলেই মিস করতো? সম্ভবত, কেউই না!
বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরেও চাঁদ উঠে।
MacBook Pro M1 এর সেকেন্ড জেনারেশনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আগামী মাসে সম্ভবত আসতে যাচ্ছে। একটা ফাইনাল লিকে যে ডিজাইন দেখলাম, অসাধারণ। আইফোনের মতই চারকোনা টাইপ ডিজাইন করে ফেলছে শুনলাম।
যাহোক, আমার বর্তমান ম্যাকবুক প্রো-টা বেচে দেব। ২০১৮-তে কিনেছিলাম এবং ২০১৯-এ ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হওয়ার ১ সপ্তাহ আগে কিছু সমস্যা দেখা দেয়ায় অ্যাপল স্টোরে পাঠিয়েছিলাম, ওরা নতুন একটা দিয়ে দিয়েছিলো। এর মাঝে আমি আরেকটা মেশিন কালেক্ট করে ফেলি, ফলে নতুন ম্যাকবুকটা খুব বেশী ব্যবহার করা হয়নি। ব্যাটারি সাইকেল কাউন্ট ১৭৬ মাত্র (কমেন্টে স্ক্রিনশট দিয়েছি)।
কেউ কিনতে আগ্রহী হলে ইনবক্সে জানাতে পারেন।
কোভিড হওয়ার পর থেকে কেমন যেন একটা অস্থিরতা কাজ করছে ভেতরে। এধরনের ব্যাপার আমার আগে কখনো ছিলো না। অস্থিরতার কোন কারণ ধরতে পারছি না। ধীরে ধীরে কাটছে যদিও, কিন্তু অনেকটাই রয়ে গেছে এখনো।
১০/১২ কিলোমিটার সাইক্লিং করলে বা প্রচুর হাঁটাহাটি করলে হেল্প হয়। টানা কাজে ডুবে থাকলেও কিছুটা বের হয়ে আসা যায়। আর কারো কি এধরনের কিছু হচ্ছে? এর প্রতিকার জানেন কেউ?
নিজেরে প্রায়ই বলি,
'আমি তো একটি জিনিয়াস!'
তারচাইতে বেশী বলি, 'আমি এত গাধা ক্যান?'
গত বছর করোনার সময়ে এক্সারসাইজ করার জন্য অর্ডার দিয়েছিলাম। ফাইনালি ৭ মাস পর ইভ্যালি আমার সাইকেল দিয়েছে।
থ্যাংকিউ পিএম!