জীবন সহজ করা বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা
সহজ জীবন - ১৪
মানুষ মোটিভেশন হারায় মূলত গোলের অভাবে। আবার গোল কী, তা না জানার কারণে অনেকের জীবনে কোন গোল নাই। টাকা-পয়সা উপার্জন, ভালো ক্যারিয়ার, জনপ্রিয়তা অর্জন, এগুলোর কোনটাই গোল না। এগুলো মাইলস্টোন।
আপনার জীবনে গোল আছে কিনা, এটা কিভাবে বুঝবেন? সহজ একটা উপায় আছে। আপনার বেশীরভাগ কাজের উদ্দেশ্যই যদি হয় অন্যরে কনভিন্স করা, তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার কোন গোল নাই।
সহজ জীবন - ১৩
জগতের বেশীরভাগ মানুষই মনে করে — যখন আমার অনেক টাকা হবে, অনেক ক্ষমতা হবে, অনেক লোক আমার চারপাশে ঘুরঘুর করবে তখন আমি অনেক সুখী হবো। মানসিক শান্তির ব্যপারটা আসলে এরকম না। যখন আপনি বুঝতে পারবেন ঐ লোকগুলো শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থের জন্য আপনার চারপাশি ঘুরছে, তখন সেটা আপনাকে শান্তি দিবে না। আপনার আসলে দরকার নিখাঁদ ভালোবাসা। এরা আপনাকে ভালোবাসে না। এরা আপনার টাকা ও ক্ষমতাকে ভালোবাসে মাত্র।
আপনার যখন কিছুই ছিলো না তখন যে আপনার চারপাশে ঘুরঘুর করতো, সে-ই সত্যিকার অর্থেই আপনাকে ভালোবাসে। আর এই ভালোবাসাই আপনার দরকার।
সহজ জীবন - ১২
পীচফুল লাইফের একটা সহজ উপায় হচ্ছে ব্যক্তিগত শত্রু/অপছন্দের সবাইরে ক্ষমা করে দেয়া। আপনি যদি স্রষ্ট্রায় বিশ্বাস করে থাকেন, তাহলে তো জানেনই যে- এরা আপনার যে ক্ষতি করেছে সেটার বিচার একদিন হবে। আর যদি না করে থাকেন, তাহলে অন্তত নিজের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ক্ষমা করতে পারেন।
সহজ জীবন - ১১
অন্যে আপনার ব্যাপারে কী ভাবে, সেটা তখনি ম্যাটার করে যখন অন্যের এই ভাবনাটা সঠিক বা সঠিকের কাছাকাছি হয়।
মনে করেন আপনার কোটি কোটি টাকা আছে। একজন ভাবলো আপনি ফকির। সে আপনারে ফকির ভাবতেছে দেখে আপনি তখন আর অফেন্ডেড হবেন না বরং মজা পাবেন। কিন্তু আপনি যদি আসলেই ফকির হয়ে থাকেন তখন আপনি রেগে যাবেন। কারণ, আপনার কোটি কোটি টাকা নাই কিন্তু নিজেরে কোটিপতি প্রমাণের জন্য নানা কাহিনী করতেছেন। ঐ লোক আপনারে ফকির বলায় আপনার এই এরেঞ্জমেন্ট হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে বলে আপনি ভাবতেছেন। আপনি বিপন্নবোধ করতেছেন। ফলে, আপনি এতে আপসেট হয়ে যাবেন।
একইভাবে আপনার জ্ঞানের অভাব থাকলে অন্যের বলা মূর্খ গালি শুনে রেগে যাবেন। আপনার সাহিত্য প্রতিভার অভাব থাকলে অন্যের সমালোচনায় মুষড়ে পড়বেন। আপনার বুদ্ধিশুদ্ধির অভাব থাকলে অন্যে বোকা বললে বা ভাবলে মন খারাপ করবেন। এরকম সকল ব্যাপারেই এটা খাটে।
পুনশ্চঃ আপনার কোন কিছুর অভাব থাকার পরেও যদি নিজেকে সেই বিষয়ে ধনী ভাবেন এবং অন্যরে পাত্তা না দেন, সেটা আবার ক্ষতিকর। আপনি কী, আপনার কী আছে এবং সেটার মূল্য কেমন, এই জ্ঞান থাকা জরুরী।
সহজ জীবন - ১০
ক্রিয়েটিভ আর ইনোভেটিভ হওয়ার জন্য-
- নিজের কাজকে ভালোবাসতে হবে।
- প্রতিযোগীতার মনোভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
- হীনমন্যতা মুক্ত হতে হবে (তাহলে অহংকারও কাজ করবে না)।
- হিংসা-বিদ্বেষ আপনার ভেতরে যত কম কাজ করবে, তত ভালো।
- কে আপনাকে নিয়ে কী ভাবছে, এই চিন্তা থেকে মুক্ত হতে হবে।
- অন্যের কোন কাজ কিংবা আচরণ আপনাকে যত কম প্রভাবিত করবে, তত ভালো।
এসব অর্জনের জন্য সবার আগে আপনাকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। আত্মনির্ভরশীল আপনি দুইভাবে হতে পারেন।
১) প্রচুর উপার্জন করে,
২) চাহিদা কমিয়ে দিয়ে।
যেটা আপনার জন্য সুবিধাজনক হয়।
তবে, এধরনের মানুষকে লোকে অসামাজিক বলে। কিন্তু মজার ব্যপার হলো, এধরনের লোকদের সফলতা অর্জনের হার বেশী এবং সফল হওয়ার পর 'অসামাজিক' খেতাব দেয়া সমাজই আবার এদের পেছনে পেছনে ছোটে। তাই, সমাজরে এত পাত্তা দেয়ার কিছু নাই। নিজের কাজ করে যান।
সহজ জীবন - ৯ (মনোযোগ)
মনে করুন, মনোযোগ হচ্ছে একটা বালতি পাানি। আর আপনার জীবনটা হচ্ছে একটা বাগান যেখানে বিভিন্ন বিষয়গুলো বিভিন্ন ধরনের গাছ। যে গাছ যত পানি পাবে সেটা তত বড় হবে, তত বিস্তৃত হবে।
প্রতিদিন আপনাকে এক বালতি পানি দেয়া হয়। এই পানি আপনি কিভাবে বিতরন করছেন, তার উপরে নির্ভর করছে আপনার বাগানটা কেমন হবে।
সহজ জীবন - ৮
যে মানুষগুলোরে বেশীরভাগ মানুষ পছন্দ করে না, এদের সাথেও আমার ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয় এবং টিকে থাকে। বা, আমি টিকিয়ে রাখি। এদের থেকে আমি শিখেছি- অন্যের সাথে কেমন আচরণ করতে হয় এবং কী করা উচিত না। কথা বলার সময় কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। মনোভাব কেমন হলে অন্যরা আপনাকে বিরক্তিকর ভাববে না।
এসব ব্যপার প্রাকটিক্যালি আর কোথায় শিখতে পারতাম?
সহজ জীবন - ৭
সুখী হতে হলে জ্ঞানী হতে হয় অথবা কোন জ্ঞানী লোকের শিষ্য/ফলোয়ার হতে হয়।
কারণ, জ্ঞানী লোকদের লোভ-হিংসা-অহংকার কম থাকে। তারা ভুল বোঝে না, সহজে ক্ষমা করতে পারে। নিজের ভুল সহজে বুঝতে পারে ও ক্ষমা চাইতে পারে। ইগো তাদের ড্রাইভ করে না।
সহজ জীবন - ৬
মানুষের ব্রেইন একটা বিরাট বড় বাগান। নতুন কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন শুরু করলে নতুন একটা গাছ লাগানো হয় সেখানে। তারপর সেই বিষয়ে আপনি যতই জানবেন সেই গাছের ততই ডালপালা আর পাতা গজাতে থাকে। এই বৃক্ষগুলোর আবার যত্ন লাগে। জ্ঞান চর্চা যেটারে বলে। যত্নের অভাবে গাছ শুকিয়ে যায়, মরেও যায়। অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলো এখানে আগাছার মতন।
আপনার বাগানের কয়টা গাছ আছে? কোন গাছটা কত বড়? যত্নের অভাবে কোন গাছটা মারা যাচ্ছে না তো? আগাছা বেড়ে গেলে কিন্তু গাছ মারা যেতে পারে। একদমই গাছ না লাগালে আবার শুকিয়ে মরুভূমিও হয়ে যেতে পারে। বাগানটার যত্ন নিন।
সহজ জীবন - ৫
আপনার নিজের সুখ যদি অন্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকে, তাহলে আপনি কিভাবে সুখী হবেন? পরনীর্ভরশীলতা যত কম থাকে তত ভালো। সুখের বেলায় একেবারেই না হওয়া বেশী ভালো।
একটা ছোট উদাহরণ দেই। আপনার কোন কাজের উদ্দেশ্য যদি থাকে এরকম যে— কাজটা দেখে অন্যেরা খুশী হবে বা এপ্রিশিয়েট করবে এবং তা দেখে আপনি সুখী হবেন, তাহলে সুখী হওয়াটা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। আপনি নিজেকে নিজে যদি এপ্রিশিয়েট করতে শিখে যান এবং সেটা থেকে সুখ তুলে নিতে পারেন, তাহলে সুখী হওয়াটা অনেক সহজ।
সুখী হওয়ার জন্য নিজেকে নিজের স্কেলে মাপতে শিখুন। আর উন্নতির জন্য স্কেলের মাপ বাড়াতে থাকুন।