জীবন সহজ করা বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা
লোকজন দেখলাম কত সু্ন্দর হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছে বাঁশের সাঁকো। আমি পার হতে গেলাম আর কাঁপতে লাগলো সাঁকো। মূলত আমার পা ব্যালেন্স ঠিক রাখতে গিয়ে শরীরের ভরকেন্দ্র ক্রমাগত এডজাস্ট করতে গিয়ে পা দিয়ে নানামুখী প্রেশার দেয়াতে এই অবস্থা।
ওভার থিংকিং ডাজ দ্য সেম থিং টু আস। কোন বিষয়ে যখন আমরা টু-মাচ কনসার্নড হয়ে এডজাস্ট করতে যাই, তখন আমাদের জীবনে চলার পথের একই অবস্থা হয়।
হ্যাপিনেস ব্যাপারটা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মতন।
নিজেকে টিউন করে নিতে হয়।
সহজ জীবন - ৩১
একজন ব্যক্তির সার্ভাইব করার জন্য খুব বেশী কিছু লাগে না। একদম না হইলেই নয় এরকম চাহিদাগুলো হচ্ছে—
১) খাদ্য - সুষম খাবার বা ব্যালেন্স ডায়েট, যা আসলে খুব বেশী না পরিমানে।
২) পোশাক - বেঁচে থাকার জন্য খুব বেশি লাগে না। তবে সামাজিক কারণে এর চাহিদা কমে-বাড়ে।
৩) বাসস্থান - নিরাপদে থাকার ও ঘুমানোর একটা জায়গা।
৪) চিকিৎসা - যা আবার সবসময় লাগে না এবং সুষম খাবার খেলে ও লাইফস্টাইল ভালো হলে প্রয়োজন কমে আসে।
জীবনমান আরো উন্নত করার জন্য—
৫) শিক্ষা
একজন ব্যক্তি মূলত এই ৫টা সোর্স থেকেই তাদের জীবনের আনন্দ খুঁজে নেয়। কিন্তু নিজের চাহিদা খুব বেশী না হওয়ার ফলে সে এখান থেকে খুব বেশী হ্যাপিনেস হার্ভেস্ট করতে পারে না। বিলগেটস বলছিলেন- 'আপনি কোটিপতি হওয়ার পরেও যে বার্গারটা খাবেন সেটা ঐ লাখপতি থাকার সময়কার সমানই টেস্ট বা আনন্দ দিবে।' এখন আপনি দশটা বার্গার খেয়ে দশগুন আনন্দ পাবেন না যেহেতু ব্যক্তির চাহিদা অত বেশী না।
মৌলিক চাহিদা সীমিত হওয়ার কারণে আরো হ্যাপিনেসের জন্য আপনাকে আরো উৎসের সন্ধান করতে হবে। এরকম একটা অসীম উৎস হচ্ছে অন্যের জন্য কিছু করা। যখন আপনি অন্যদের জন্য কিছু করার মাঝে আনন্দ খুঁজে পাবেন— তখন আপনার জীবনে আনন্দের উৎস হবে অসীম।
সহজ জীবন - ৩০ (অজ্ঞতা খারাপ না অত)
কেউ কোন একটা দিকে সেরা হওয়ার মানে হচ্ছে তার অন্য আরো অনেক বিষয়ে কম জানার সম্ভবনা থাকে যেহেতু সব জানার পেছনে সময় ব্যায় করতে পারে না তারা।
তাই আপনার কাছে ইরিলিভেন্ট কোন বিষয়ে অজ্ঞতা খারাপ না অত।
সহজ জীবন - ২৯ (গ্লোবাল ভেরিয়েবল)
বিষয়টা প্রথম নিজের ভেতর থেকে অনুধাবন করি অনলাইনে গেমস খেলতে গিয়ে। ২০০৩/০৪ এর দিকের কথা। তখন স্টুডেন্ট ছিলাম ফলে আনন্দ, রাগ, আবেগ-অনুভূতি একটু বেশীই কাজ করতো। অনলাইন গেমসে কেউ অ্যাটাক দিলে, সিটি ধ্বংস করে দিলে.. কী যে রাগ হতো! তখন মনে হতো ঐ গেমটাই বুঝি সবকিছু। তারপর, সেই গেম কোথায় হারিয়ে গেল! কিন্তু গেমগুলো থেকে হওয়া কিছু বন্ধুর সাথে এখনো যোগাযোগ আছে। এখানে ঐসব গেমসের স্কোর, ক্ষমতা, ট্রফিগুলো ছিলো লোকাল ভ্যারিয়েবল। আর গেমগুলো থেকে পাওয়া বন্ধুরা হচ্ছে গ্লোবাল ভ্যারিয়েবল।
আপনার ছোটবেলার খেলনাগুলো, স্কুলে বিতর্ক প্রতিযোগীতার ফল, ফুটবল-ক্রিকেটের স্কোর, রেজাল্ট ছিলো লোকাল ভ্যারিয়েবল। সেসব দেখেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্কুল থেকে পাওয়া শিক্ষা, বন্ধুত্ব, উপলদ্ধিগুলো রয়ে গিয়েছে।
আগে আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ন ছিলো কিন্তু এখন আর নাই, এরকম সকল ব্যাপারের সাথে রিলেটেড ভ্যারিয়েবলগুলো লোকাল ভ্যারিয়েবল। কিন্তু সেখান থেকে পাওয়া শিক্ষা, উপলব্ধি, বন্ধুরা হচ্ছে গ্লোবাল ভ্যারিয়েবল। জীবনে এরকম অনেক গ্লোবাল ভ্যারিয়েবল আছে। এগুলো ধরতে পারা জরুরী।
লোকাল ভ্যারিয়েবলগুলো ইরিলিভেন্ট হয়ে যায়, গ্লোবাল ভ্যারিয়েবলগুলো থেকে যায়। লোকাল ভ্যারিয়েবলগুলো এমনভাবে ইরিলিভেন্ট হয়ে যায়, হারিয়ে যায়, যেন এদের কোন অস্তিত্বই ছিলো না কোনকালে। আজকে আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ন কোন লোকাল ভ্যারিয়েবলও একদিন ইরিলিভেন্ট হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে।
সহজ জীবন - ২৮
পপুলিস্ট হওয়া স্ট্রেসফুল
পপুলিস্ট হবেন না। পপুলারিটি দিয়ে কিছুই হয় না আনলেস আপনার ক্যারিয়ার বা ব্যবসা ওটার উপরে নির্ভর করে।
নিজের নেগেটিভ ট্রেইটগুলো যদি আইডেন্টিফাই করে মিনিমাইজ করতে পারেন ও যথেষ্ঠ জ্ঞানী হতে পারেন তাহলে পাবলিক কী পছন্দ করে এসব নিয়ে না ভেবে আপনি কোনটা সঠিক ভাবছেন তা বলুন ও করুন। প্রথমে আপনার পরিচিত সার্কেল আপনাকে ছেড়ে চলে গেলেও কিছুদিনের ভেতরে দেখবেন নতুন সার্কেল তৈরি হয়েছে।
ইন দ্য কোর সকলেই আসলে ভালো মানুশ, নানা প্রতিকূলতার কারণে তারা সেই ভালোর চর্চা করতে না পারলেও আপনার ভালোটাকে সমর্থন দিবে। প্রকাশ্যে দেয়াটা রিস্কি হলে মনে মনে দিবে। একদিন পরিবেশ সঠিক হয়ে উঠলে দেখবেন হুট করে তারা সব আপনার সাথে হাঁটতেছে।
সহজ জীবন - ২৭
বি ইওরসেল্ফ হওয়া বা নিজের মত চলা জীবনকে সহজ করে।
আপনি যেমন যদি তেমন যদি চলতে পারেন তাহলে আপনার জীবনের স্ট্রেস অনেকখানিই কমে আসবে। স্ট্রেস খারাপ না, তবে অপ্রয়োজনীয় স্ট্রেস কমানো তো ভালো।
কী ঘটবে যখন আপনি এরকম হবেন?
প্রথম লাভ হচ্ছে আপনাকে মুখোশ পড়ে ঘুরতে হবে না। ডিপ্লোমেটিক হওয়া লাগবে না বেশী। ডিপ্লোম্যাটিক হওয়া জীবনকে কঠিন করে।
দ্বিতীয় লাভ হচ্ছে- আপনার ব্রেইন ফ্রি থাকবে। এক বালতি পানির মতন মনোযোগ-রে তখন আরো ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
তৃতীয় লাভ হচ্ছে ক্রিয়েটিভিটি বাড়বে অনেক। ক্রিয়েটিভ হওয়ার জন্য মুক্ত হতে হয়। নিজের মত চলতে না পারলি মুক্তি আসে না সহজে।
এরকম আরো অনেক লাভ আছে। তবে সমস্যাও আছে। বি ইওরসেল্ফ হওয়ার আগে নিজেকে যতটা সম্ভব ভুল-ত্রুটি মুক্ত করে নিতে হয়, নয়তো বিষয়টা ক্ষতিকর। এবিষয়ে আগের পর্বে (গেট রিয়েল বিফোর বি ইওরসেল্প) আলাপ আছে।
সহজ জীবন - ২৬
গেট রিয়েল বিফোর বি ইওরসেল্প।
সহজ জীবনের জন্য বি ইওরসেল্ফ হওয়াটা সবচাইতে ভালো উপায়, যদি আপনি মানুশ হিসেবে ভালো হয়ে থাকেন। আপনি মানুশ হিসেবে খারাপ হলে বি ইওরসেল্ফ ও অকপট হওয়া আপনার জন্য আরো খারাপ হবে। দেখবেন বন্ধু হারাইতেছেন, সবার সাথে গ্যাঞ্জাম হইতেছে।
একজনরে বলতে শুনলাম— সত্যবাদী হওয়ার পর তার গার্লফ্রেন্ড ব্রেক-আপ করে ফেলছে, বন্ধুরা সরে গেছে।
এর জন্য কি সত্য কথা দায়ী?
নাহ!
সত্য কথা বলা তো ভালো ব্যাপার, কিন্তু একমাত্র ব্যাপার না আরকি। আপনার ভেতরে অনেক সমস্যা থাকলে তখন হুট করে সত্যবাদী হয়ে ওঠা আপনার জন্য সমস্যাজনক হওয়া স্বাভাবিক। সত্যবাদী চোর সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল ও পপুলার হতে পারে, বাস্তব জীবনে হয় না। তাই আগে বাস্তবতা উপলদ্ধি করেন, নিজেরে ঠিক করেন এবং সেই সাথে একটু একটু করে বি ইওরসেল্ফ হন। আত্মউন্নয়ন তো একটা চলমান প্রক্রিয়া।
সহজ জীবন - ২৫
পাবলিক আপনারে নিয়া খুব ভাবতেছে মনে করা ভুল। অধিকাংশ লোকই আপনার দোষ ধরতে চায় ও সমালোচনা করে কারণ এটা ওদের বিনোদন। আপনি না থাকলে অন্য কারো দোষ ধরবে, অন্য কারো সমালোচনা করবে। আপনি এখানে সাবজেক্টও না তাদের কাছে। ফলে, এদেরকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করা সময়ের অপচয় মাত্র।
এদের থেকে প্যারা নেয়াও সময় নষ্ট। আজকে আপনি মারা গেলে কালকে এরা কেউ আপনার কথা মনে রাখবে না। প্রিন্সেস ডায়না যখন মারা গেলেন, পৃথিবীর কয়েক বিলিয়ন লোক শোক প্রকাশ করছে। এরপর কয়জন তারে মনে রাখছে? এভরিওয়ান ইজ রিপ্লেসেবল।
তাই এত প্যারা নেয়ার কিছু নাই। এবিষয়ে রুমির উক্তিটা মাথায় রাখতে পারেন―
“Half of life is lost in charming others.
The other half is lost in going through anxieties caused by others.
Leave this play. You have played enough.”
― Rumi
সহজ জীবন - ২৪
(ক্যারিয়ারে প্রবেশের আগে) স্মার্টফোন জিনিষটা পড়ালেখা, ক্যারিয়ার ও জীবনের জন্য ক্ষতিকর। এডাল্টদের জন্যও এটা ক্ষতিকর যদি কেউ এর সঠিক ব্যবহার না জানে।
আর ভার্সিটিতে উঠার আগে স্টুডেন্টদের স্মার্টফোন দেয়া উচিত না। যোগাযোগের জন্য বাটন ফোন দেয়া যেতে পারে।
অনলাইন ক্লাশের জন্য যে কয়জন আমার কাছে কী ফোন কেনা উচিৎ জানতে চেয়েছে, তাদের সবাইকে বলেছিলাম ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপ কিনতে। একটা মিড রেঞ্জ ফোনের দামে কিন্তু একটা ল্যাপটপ পাওয়া যায়।
পড়ালেখা ও গবেষণার জন্য ল্যাপটপ যেমন সুবিধাজনক তেমনি সারাক্ষন ব্যবহারের জন্য অসুবিধাজনক। আর এজন্যই ল্যাপটপ ভালো।