এআই (AI)

যেসব কোম্পানী পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ডেভেলপ করেছে, IBM তাদের ভেতরে অন্যতম।



IBM এর আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স প্রোডাক্ট হিসেবে IBM Watson নামে পরিচিত যার প্রথম কমার্শিয়াল এপ্লিকেশন লঞ্চ হয় ২০১৩ সালে। তারপর এক বছরেই IBM এর এম্প্লয়ী সংখ্যা এক লাফে ৫০ হাজার+ কমে যায়। হেড কাউন্ট এর এই আচমকা পরিবর্তনের জন্য তারা কোম্পানী রিস্ট্রাকচার ও ক্লাউড কম্পিউটিং-এ শিফটিং এর কারণ দেখালেও হঠাৎ করে এত লোক ছাঁটাই করেও নিজেদের কাজ কিভাবে ম্যানেজ করেছে তার সবচাইতে গ্রহনযোগ্য জবাব হলো IBM Watson.

এত বছর ধরে নিজেদের এত শক্তিশালী AI প্রোডাক্ট থাকার পরেও সাম্প্রতিক AI ডেভেলপমেন্টের প্রেক্ষিতে IBM CEO জানিয়েছে তারা আরো ৩০% কর্মী ছাঁটাই করবে আগামী কয়েক বছরের ভেতরে।

এক লোক ভাবতেছে সে যদি দুইটা মুরগি কিনে আনে আর প্রতিটা মুরগীি ১০টা করে ডিম দেয় তাহলে তার ২২টা মুরগি হবে। ২২টা মুরগি থেকে ২২০টা মুরগি, ২২০টা থেকে ২২০০ মুরগি। এভাবে একদিন তার এক বিলিন মুরগি হবে এবং দশ বিলিয়ন ডিম বাজারে বিক্রি করে ব্রলোক হয়ে যাবে!

তার মাথায় এটা কখনো আসে না যে ৮ বিলিয়ন পৃথিবীতে ১০ বিলিয়ন ডিম কে খাবে?

প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের সময় মানুশ টেকনোলোজিরে ভয় পাইছিলো কিন্তু বাস্তবে বরং জব বেড়ে গেছে, পুরানা টেক্সবুকে এই ইতিহাসের এনালাইসিস পড়ে তারা ভাবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময়েও এভাবে জব বাড়তেই থাকবে। ঐদিকে ডিমান্ড যে বাড়ে না, মার্কেট যে স্যাচুরেটেড হয়ে আছে, এসব তারা বিবেচনা করে না কিংবা জানেই না। এক বিলিয়ন মুরগি দশ বিলিয়ন ডিম দিবে, সেই হিসাব নিয়া তারা বসে আছে।

রিসেশন কেন হয়, শুধুমাত্র এই একটা প্রশ্ন নিয়ে যদি তারা ভাবতো, তাহলে নিজেদের বোকামী ধরতে পারতো।

আগামী পাঁচ বছরে প্রায় দেড় কোটি জব ভ্যানিশ হয়ে যাবে ইকোনমিক উইকনেস ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এডাপশনের কারণে।

— World Economic Forum

প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়া এত আশাবাদী হইয়েন না আপনারা। AI নিজেই এটার মার্কেট খেয়ে দিবে। AutoGPT টাইপ বহু সার্ভিস চলে আসবে।

গবেষকরা একটা ভার্চুয়াল দুনিয়া বানিয়ে সেখানে OpenAi (ChatGPT) পাওয়ারড ২৫টা আর্টিফিশিয়াল ক্যারেক্টার ছেড়ে দিয়েছে এরা কী করে দেখার জন্য।
ক্যারেক্টারগুলো রাতে ঘুমাতে যায়, সকালে উঠে নাস্তা খায়, কফি বানায়, একে অপরের সাথে দেখা হলে কুশল বিনিময় করে, জব করতে অফিসে যায়, ছবি আঁকে, লাঞ্চ-ডিনার করে, পরেরদিনের কাজকর্মের প্ল্যান করে ঘুমাতে যায়।



সিমুলেশনটার একটা রেকর্ডেড সংস্করণের লিংক দিলাম কমেন্টে। এখানে ক্লিক করুন

মানব সভ্যতারে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে বাঁচানোর জন্য অন্তত ছয় মাসের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের প্রোগ্রেস বন্ধ রাখার জন্য পৃথিবীর প্রমিনেন্ট টপ টেক ব্যাক্তিত্বরা ইনিশিয়েটিভ নিচ্ছে।

ChatGPT-4 এর পারফরম্যান্স দেখে
আমি ত-থ-দ-ধ!
সাবস্ক্রিপশন ফি মাসে ১০০ ডলার হলেও অনেক কম।

গত চারমাস ছিলো আমার জীবনের দ্রুততম মাস। দু'টো কারণে— যার একটি হচ্ছে ChatGPT. নিজের ডেইলি প্ল্যানারের একটিভিটিস লগের দিকে তাকিয়ে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই, কী পরিমান সময় আমি এর সাথে পার করেছি! এর কারণে থিংকার ক্লাউড ও টাউন-সেন্টারের রিলিজ ডেট তিনবার পিছিয়েছি। আসলে এমন কিছু কাজ ছিলো যেগুলোর জন্য বিশাল একটা টীম তৈরি করে আমাকে কাজ করতে হতো। ChatGPT আমাকে সেই সাপোর্টটা দিচ্ছে যার ফলে দুই/তিনশ লোকের কাজ আমি একাই করে ফেলতে পারছি (মূলত ডাটা রিলেটেড)।
ChatGPT এখনো বাচ্চা। আগামী সপ্তাহে এর চতুর্থ ভার্সন আসতে যাচ্ছে। GPT 3.5 সংস্করণের সাথে চতুর্থ সংস্করণের ব্যবধান অনেক।

GPT 3.5 -তে ছিলো ১৭৫ বিলিয়ন ML প্যারামিটার, চতুর্থ সংস্করণে যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১০০ ট্রিলিয়ন ML প্যারামিটারে।

এছাড়াও মাল্টিপল মিডিয়া টাইপ নিয়ে কাজ করতে পারবে। মাত্র চার মাসে এতটুকু প্রোগ্রেস, ভয়াবহ!
ChatGPT-র সাথে একটা কথোপকথনে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে নিজেকে নিজে ইমপ্রুভ করতে পারে কিনা। ব্যাটা অস্বীকার করলো। চ্যাটের স্ক্রিনশটগুলো কমেন্টে তুলে রাখছি। চতুর্থ সংস্করণ রিলিজের পর একই আলাপ আবার করে দেখবো, তুলনা করার জন্য।

পঞ্চম সংস্করণে এর প্রোগ্রেস কেমন হতে পারে, তাই ভাবছি!

আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের কারণে আমাদের প্রজন্মের ভেতরে জ্ঞানী ও মূর্খের দুরত্ব খুব দ্রুত বাড়বে, এমনটাই আমার আশঙ্কা। ChatGPT-র কথাই ধরেন। যে ঠিকঠাকমত প্রশ্ন করতে পারে তার কাছে এটা একটা ওয়ান্ডার, যারা প্রশ্ন করতে পারে না তাদের কাছে— Meh!

জ্ঞানের সাথে প্রশ্নের সম্পর্ক গভীর। প্রশ্ন করতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। এটা এভাবেও বলা যায়— যার জ্ঞান যত গভীর সে তত গভীরে যেতে পারে প্রশ্নের ক্ষেত্রে। যারা প্রশ্ন করতে করতে যত গভীরে যেতে পারবে তারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে আরো দ্রুত আরো জ্ঞানী হয়ে উঠবে। যারা পারবে না, তারা আরো দ্রুত পিছিয়ে পড়বে।

আমার আরেকটা অনুমান হচ্ছে— আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের কারণে মানব-সভ্যতা জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। তথ্য জানার ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেলে ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রশ্ন করা শিখবে না। কারণ, তারা সব রেডিমেড উত্তর পাবে, নিজেরা চিন্তা করা শিখবে না। ফলে, প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে গভীরে যেতে পারবে না। এভাবে ধীরে ধীরে জ্ঞানীদের সংখ্যা কমতে কমতে নাই হয়ে যাওয়া আশঙ্কা আছে।

এধরনের বিপদ থেকে বাঁচার জন্য জ্ঞানীদের সংঘ বা ক্লাব তৈরি জরুরী, যার অন্যতম উদ্দেশ্য হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের এই পরোক্ষ বিপদ থেকে কিছু লোকরে হলেও রক্ষা করা।

ChatGPT-র কারণে ট্রেডিশনাল বই জিনিষটা হারিয়ে যাবে বা যাওয়ার উপক্রম হবে। কিভাবে তা ঘটবে বলি—
প্রথমত, ChatGPT ব্যবহার করে যেকোন বিষয়ে বিশাল বই লিখে ফেলা যায় রাতারাতি। অলরেডি আমাজন এটা নিয়ে বিপদে পড়েছে। এই ফেব্রুয়ারীতে এক সপ্তাহে আমাজনে ২০০+ বই সাবমিটেড হয়েছে যা ChatGPT দিয়ে লেখা। আমেরিকার একটা ম্যাগাজিন লোকজনের কাছ থেকে লেখা নেয়া নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে একই কারণে, ChatGPT দিয়ে লেখা ৫০০+ আর্টিকেল সাবমিট হয়েছে এক সপ্তাহের ভেতরে।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থী ও পাঠকরা ChatGPT থেকে এত সহজে তথ্য পাচ্ছে এবং সামনে যখন আপডেটেড তথ্য পাওয়া শুরু করবে (যার একটা নমুনা Bing ইতিমধ্যে তাদের সার্চ ইঞ্জিনে দেখিয়েছে), তখন আপনার লেখা (মোটামুটি ব্যাকডেটেড) বইগুলো কেউ পড়বে না। আগামী বছরের ভেতরে লেখকরা টের পাবে এই বিষয়টা।

তাহলে উপায় কী?

উপায় হচ্ছে বইরে বইয়ের চাইতে বেশী কিছু করা। কয়েক বছর আগে আমি চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের উপযোগী বইয়ের একটা কনসেপ্ট দাঁড় করিয়েছি। আমার প্যারেন্টিং বিষয়ক বইটা এধরনের নতুন প্রজন্মের বইয়ের একটা উদাহরণ হতে যাচ্ছে। এবছরের ভেতরেই পাবলিশ করবো এটা, তারপর বিস্তারিত জানাবো।

তবে, যারা আমার সাথে একইসাথে এধরনের বই পাবলিশ করতে আগ্রহী, তারা একদিন চলে আসেন থিংকারের অফিসে। এবছর আমরা অনেকগুলো বই পাবলিশ করতে পারবো তাহলে।

আমার এই ফ্রেমওয়ার্ক ChatGPT-র সাথে ফাইট করে টিকে থাকার উপযোগী করে তৈরি করা। একইসাথে এটা লেখকদের জন্য একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

পুনশ্চঃ এই বই একইসাথে হার্ডকপি ও সফটকপি হতে পারে। ফলে, হার্ডকপির ক্ষেত্রে আপনার পরিচিত পাবলিশারের সাথেও কাজ করতে পারবেন। তবে, ডিজিটাল কপির কপিরাইট আপনার হাতে রাখতে হবে। যারা থিংকার থেকে ডিজিটাল কপি রিলিজে আগ্রহী, শুধুমাত্র তারা আসবেন।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি