যদিও এই যাত্রা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাওয়ার সম্ভবনা নাই বললেই চলে, তবুও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কখনো না কখনো অবশ্যই লাগবে। যতদিন এই ঝুঁকির ভেতরে আমরা আছি, ততদিন দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকা ভালো। দুর্যোগ মোকাবিলার ভালো উপায় হচ্ছে সবচাইতে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা। সুতরাং ধরে নেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগবে, আজ না হোক কাল। তারপর কী হবে?
পৃথিবী এখন এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে পৃথিবীর বর্তমান সকল টেকনোলজি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা সবচাইতে বেশী। কেউ যুদ্ধ জেতার জন্য পৃথিবী ধ্বংস না করলেও হেরে যাওয়ার মূহুর্তে 'আমিও নাই তুমিও নাই কেমন মজা হবে' টাইপ আনন্দ নেয়ার জন্য এই কাজটা করবে। এটাকে বলে consolation যার ভালো কোন বাংলা প্রতিশব্দ নাই।
তো তারপর কি হবে বলেন তো? জীবিকার তাগিদে পৃথিবীর মানুষকে আবার কৃষিতে ফিরে যেতে হবে। চিকিৎসার জন্য ভেষজে (যদিও এখনি মানুষ ভেষজের পথে রওনা দিয়েছে)।
আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন বাধ্যতামূলক কৃষিবিজ্ঞান ছিলো। এখন আছে কিনা জানি না, তবে থাকা জরুরী। সাথে আউট বই হিসেবে আরো কিছু কৃষি বিষয়ক বই সবার পড়া উচিত, সম্ভব হলে প্রাকটিক্যালি কিছুদিন কৃষি কাজও করা উচিত। আর প্রতিটা ফ্যামিলিতে কমপক্ষে একজনের ভেষজ নিয়ে পড়াশোনা থাকা উচিত, প্রাকটিক্যাল সহ।
এই ব্যপারটা পারিবারিক ঐতিহ্যে পরিনত করুন। আপনার না হোক, পরবর্তী প্রজন্মের অনেক কাজে আসবে।
আরেকটা ব্যপার, এরকম কোন ব্যপার ঘটে গেলে বাংলাদেশের মত পলিবিধৌত ভূমিগুলো হবে স্বর্ণের খনির মত। সুতরাং দেশ থেকে পলায়নরত বন্ধুগন, দেশে কিছু জায়গা জমি কিনে রাইখেন।
মুভিটা দেখেছি গতকাল রাতে। একবার একা পুরোটা দেখার পর Farah সহ আরেকবার পুরোটা দেখলাম। ভালো মুভি। মুভিটাতে যে ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা বলা হয়েছে সেরকম কিছু হওয়ার সম্ভবনা খুব একটা আছে বলে মনে হয় না, তবে এতে কোন সন্দেহ নাই যে মানুষ শেষ পর্যন্ত আবার কৃষি কাজেই ফিরে যাবে বা যেতে হবে। কৃষি হচ্ছে আমাদের সভ্যতার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন জিনিষ, যদিও কৃষকদেরকে আমরা সবচাইতে কম মূল্যায়ণ করি।
Interstellar মুভিতে যে খাদ্য সংকটের বিপর্যয় দেখানো হয়েছিলো এই বিপর্যয় পুরো পৃথিবীতে কখনো না আসলেও বাংলাদেশ কিন্তু এরকম একটা বিপর্যয়ের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। দেশের প্রতিটা বাজারে গেলে আপনি প্রচুর খাদ্যদ্রব্য দেখতে পাবেন ঠিকই, কিন্তু এগুলোকে আসলে খাবার বলাটা ঠিক হবে না। কৃষি জমি বিষাক্ত হওয়া থেকে শুরু করে প্রসেসিং এর সময়ে মেশানো ভেজালের পরিমান বাড়তে বাড়তে আমাদের দেশের খাদ্যদ্রব্য এখন আর খাওয়ার উপযোগী নেই। ইদানিং প্রায়ই ভাবছি গ্রামের দিকে প্রচুর জমি কিনে একটা খামার বাড়ি তৈরির কথা। এখন পর্যন্ত উচ্চমূল্যে অর্গানিক ফুড পাওয়া যাওয়াতে উচ্চবিত্তরা কিছুটা নিরাপদে আছে, কিন্তু এটা বেশিদিন থাকবে না। Interstellar মুভিটার মত আমাদের দেশে খাওয়ার উপযোগী শস্য ফুরিয়ে আসছে। এখন হয় এই দেশ থেকে পালাতে হবে নয়তো গ্রামের দিকে গিয়ে খামার বাড়ি তৈরি করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিডনি ড্যামেজ আর ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে হবে।
বিপদটা কিন্তু Interstellar মুভির চাইতেও ভয়াবহ।
LOST আমার প্রিয় একটা টিভি সিরিজ। তবে লস্টের চাইতে বেশি ভালো লেগেছে The Walking Dead । এই দুইটা সিরিজেরই মূল বিষয় হচ্ছে সার্ভাইভাল। বিরুপ পরিবেশে টিকে থাকার গল্প। লস্টে দেখানো হয় বিমান দূর্ঘটনার কারণে নির্জন একটা দ্বীপে গিয়ে পড়ে আর Walking Dead-এ Zombie Apocalypse এর কারণে পৃথিবীর সমস্ত টেকনোলজি ধ্বংস। মানুষ দলবদ্ধ ভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে, ছোট ছোট গোত্রের মত তৈরি হচ্ছে। বিরুপ পরিবেশে টিকে থাকার সেকি প্রচেষ্টা...
ইউটিউবে বেশ কিছু ডকুমেন্টরি দেখেছি, পৃথিবী থেকে মানুষ সব হারিয়ে গেলে কি হবে। বা সমস্ত জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে কি হবে বা ইলেক্ট্রিসিটি আর টেকনোলজি হারিয়ে গেলে কি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে। এধরনের বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর গেমও তৈরি হয়েছে, সেগুলো আবার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সত্যিকার মানুষেরা অনলাইনে কানেক্ট করে খেলে, দল গঠন করে টিকে থাকার চেষ্টা করে। টিকে থাকার এই চেষ্টা বা সার্ভাইভাল বিষয়ক একটা সিমুলেশন গেম খেলেছিলাম- Banished, চমৎকার গেম। সভ্যতার মূল জিনিষটা ধরতে পারবেন গেমটা খেললে।
যাহোক, আসল কথায় আসি। ধরুন আজকের টেকনোলজি যদি কোন কারণে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে কি ঘটতে পারে? যেমন আজকে যে ব্লাকআউট হলো, এটা যদি কন্টিনিউ হতো? ধরুন পৃথিবীর কোন বিপর্যয়ের কারণে মাসের পর মাস ইলেকট্রিসিটি থাকলো না। ইলেক্ট্রিসিটি নেই মানে ধীরে ধীরে বাদবাকী সকল টেকনোলজিও অচল। তারপর? আপনি নিজের বাসায় জমিয়ে রাখা পানি ও খাবার দিয়ে হয়তো মাসখানেক চলতে পারলেন। অথবা ধরে নেয়া যাক আপনার বাসায় অনেক ক্যাশ টাকা রাখেন, সেগুলো দিয়ে ছয়মাসের কেনাকাটা করে ফেললেন। ছয়মাস পর? ছয় মাস পর আপনাকে পাঁচটি মৌলিক চাহিদার প্রধানতমটির (খাদ্যের) সন্ধানে ফিরে যেতে হবে গ্রামে। টিকে থাকার জন্য শুরু করতে হবে জমি চাষ করা, এর বিকল্প আর কিছু নেই।
সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই কৃষিকাজ। অথচ কৃষি সম্পর্কেই আমাদের জ্ঞান সবচাইতে কম। আর কৃষকদেরকেই আমরা সবচাইতে বেশি অবজ্ঞা করি। আহা সভ্যতা, আহা সভ্যরা...
আইটি ক্যারিয়ারের (বিশেষ করে ডেভেলপারদের বেলা) সবচাইতে আকর্ষনীয় কয়েকটা দিক হইতেসে-
১) অসৎ উপার্জন/ধান্ধাবাজী ছাড়াও প্রয়োজনের অধিক আয় করা সম্ভব, উপার্জনে সৎ পথে থাকা অনেক বেশি সহজ এখানে
২) কাজই বিনোদন, আলাদা বিনোদনের প্রয়োজন হয় না (যদি সত্যিকার অর্থে কেউ আইটি ভালোবাসে)
৩) সৃষ্টির আনন্দ আছে। কবি-সাহিত্যিকরাও সৃষ্টির আনন্দ পায় কিন্তু আইটি সৃষ্টির আনন্দ+টাকা পয়সা দুইটাই পায়, এটা অন্য কোন পেশায় এত সহজে হয় না
আইটিতে না আসলে কৃষক হইতাম, আমার ধারণা কৃষকদেরও এই তিনটা বিষয় আছে, যদি কারো চাহিদা আকাশচুম্বী না হয়...