#প্যারেন্টিং - ২৫
বাংলাদেশে বাচ্চাদের মানুষ করা খুব কঠিন কাজ। আপনি নিজের বাসায় তাদের সব ট্রেইন করবেন কিন্তু স্কুলে গিয়ে অন্যদের কাছ থেকে (অন্য বাচ্চা, এমনকি শিক্ষকদের কাছ থেকেও) খারাপ জিনিষ শিখে আসবে। উত্তরা থাকার সুবাদে পাশের বাসার ভাবি/আন্টি নামক বিভীষিকা থেকে সে বেঁচে আছে। এখানকার পরিবেশও ভালো। কিন্তু আত্মীয় স্বজনদের (বিশেষ করে দুর-সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনদের) ব্যাড ইফেক্ট থেকে রক্ষা করা খুব কঠিন কাজ। এই কষ্টটা হতো না যদি বাচ্চাদের সাইকোলজি এবং প্যারেন্টিং সম্পর্কে সকলে জানতো।
এত সাবধানে মানুষ করার পরেও তাতিনের ভেতরে বিভিন্ন সময়ে নানারকম ভুল জিনিষ দেখা যেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে স্কুলে যেতে শুরু করার পর এগুলো শুরু হয়েছে। এই যেমন আজকে পাশের রুমে লাইট বন্ধ ছিলো। সে বলছে- "এখানে লাইট বন্ধ কেন? দেখনা অন্ধকার!"
আপনার মনে হতে পারে... আরে, কী কিউট! এত ছোট বাচ্চা কী সুন্দর করে বললো!
উহু... কিউট না! এই আচরণটা খারাপ। এর পেছনের যে চিন্তা-ভাবনাটা কাজ করেছে, সেটা খারাপ।
'এখানে লাইট বন্ধ কেন?' - একটা অভিযোগ। খামোখা অভিযোগ একটা খারাপ জিনিষ। বাচ্চাদেরকে অভিযোগ করা শেখানো উচিত না।
আর 'দেখনা অন্ধকার?!' - এটা আরো বেশী খারাপ আচরণ।
এসব ক্ষেত্রে করণীয় কী?
করণীয়টা নির্ভর করছে আপনি কিভাবে বাচ্চাকে মানুষ করছেন এবং আপনার বাচ্চার বুদ্ধিমত্তা কতটুকু ভালো, তার উপরে। এই যেমন, তাতিনকে আমার কিছু বলতে হয়নি। আমি শুধুমাত্র ফারাহকে লো ভয়েসে জিজ্ঞেস করলাম- 'তাতিন এসব আচরণ কোথায় শিখেছে?' এটুকু শুনেই তাতিন আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে পাশের রুমে চলে গিয়েছে। এখন আর এটা নিয়ে ওকে কিছু বলতে হবে না। ও বুঝে গিয়েছে যে, এই আচরণটা ঠিক না। ওকে আমরা এভাবেই ট্রেইন করেছি। ও এখন নিজেকে ফিক্স করে ফেলবে। আর যদি পুরোপুরি ফিক্স করতে না পারে, তাহলে একদিন খেলতে খেলতে সুন্দরভাবে ওকে ব্যপারটা বুঝিয়ে বললেই হবে।
আপনার বাচ্চার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন, তার উপরে নির্ভর করছে আপনি তাকে কিভাবে বোঝাবেন। এদেশে অধিকাংশ বাবা-মা-ই মনে করে বাচ্চাদের ধমক ও তথাকথিত "শাসন" এর উপরে রাখতে হবে। এভাবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় বাচ্চা কথা শুনেছে, আসলে শুনে নাই। তার ভেতরে বিদ্রোহ দেখা দিতে থাকে। সে ধীরে ধীরে বেয়াদপ হতে থাকে। প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে সে বেয়াদপ হিসেবে বেড়ে ওঠে।
বাচ্চাদেরকে শেখানো এবং বোঝানোর আর্ট আছে। এই আর্ট রপ্ত করতে হলে বাচ্চাদের সাইকোলজি নিয়ে আপনার পড়াশোনা থাকতে হবে। এবং বাচ্চাকে পর্যবেক্ষন করার সময় বের করতে হবে। সবচাইতে বড় ব্যপার হচ্ছে, বাচ্চাকে প্রচুর কোয়ালিটি টাইম দিতে হবে।