জীবনের জন্য প্রযুক্তি - ১
ছোটবেলা যখন অনেক বই পড়া শুরু করি, যার বেশীরভাগই উন্নত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে লেখা, তখন খুব আফসোস হতো এরকম একটা গরিব দেশে জন্মানোর জন্য। এই আফসোস বেশীদিন থাকেনি। যতই জানতে শিখেছি, ততই বুঝতে পেরেছি আমরা কতটা ভাগ্যবান প্রযুক্তির প্রাথমিক স্টেজের ভিকটিম না হওয়ার জন্য। ভিকটিম কেন বলছি, সেটা বলি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতা আমাদের জীবনে পজেটিভ বিষয়ের সাথে অনেক নেগেটিভ/ক্ষতিও যোগ করেছে। আজ হতে ৩০-৪০ বছর আগেও মানুশ জানতো না যে প্রসেসড ফুড কতটা ক্ষতিকর। ইউরোপিয়ান ও আমেরিকানরা এর ভিকটিম হয়েছে। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংস্পর্শে আসার ক্ষতি জানার আগেই পশ্চিমাদের কোটি কোটি লোক এর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে প্রযুক্তিগত ক্ষতির ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠার পর ওরা এগুলোর ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝতে পেরে এখন নিজেদের রক্ষার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেক আইন-কানুন তৈরি করেছে, সচেতনতা বাড়িয়েছে। সমস্যা হয়ে গিয়েছে আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর। বিশ্বায়নের ফলে আমাদের কাছেও প্রযুক্তি পৌঁছে গিয়েছে, কিন্তু সচেতনতা সবার কাছে পৌঁছায়নি। আর অল্প লোক সচেতন হয়ে লাভ নেই এক্ষেত্রে, কারণ অধিকাংশ সচেতন না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি উন্নতি হয় না। ফলে, আমরা এখন ভিকটিম হচ্ছি।
আপনি একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, পশ্চিমারা যখন আমাদের থেকে পোষাক আমদানী করে, তখন এতে কেমন ধরনের ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়েছে, কী ধরনের ডাই করা হয়েছে, এসব খেয়াল রাখে। নানা ধরনের ক্যামিক্যাল টেস্ট করা লাগে পোষাক রপ্তানীর জন্য। অনেক ধরনের সার্টিফিকেশন আছে এই কোয়ালিটি রক্ষার জন্য। কারণ, পোষাকে যদি সহ্য মাত্রার চাইতে বেশী ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়, হেভী মেটালের উপস্থিতি থাকে, সেটা ক্যান্সারসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। আমাদের দেশে যেসব পোষাক পাওয়া যায়, সেগুলোর কয়টা সার্টিফিকেট আছে? শুধুমাত্র পোষাকের এই দূষণ আমাদের কত ক্ষতি করে যাচ্ছে, তা জানা জরুরী।
উন্নত বিশ্বে দেখবেন পরিবেশের ক্ষতি হয় এরকম কোন কাজ করতে পারে না ফ্যাক্টরিগুলো। একটা ফ্যাক্টরি থেকে নানা ধরণের দূষণ ছড়ায়। এয়ার পলিউশন তার ভেতরে অন্যতম। এয়ার পলিউশন নিয়ে আমাদের সচেতনতার মাত্রা বুঝা যায় ঢাকার সবচাইতে দূষিত এলাকার বাড়ির দাম ও ভাড়া দেখলে। এয়ার পলিউশন বুঝার একক হচ্ছে AQI (Air Quality Index) যার মান ৫০ এর নিচে থাকলে সেটাকে দূষণমুক্ত পরিবেশ বলা যায়। পৃথিবীর সবচাইতে দূষিত নগরীর তালিকায় আমাদের ঢাকা শহর ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আপনি যদি ভাবেন জনসংখ্যা এর জন্য দায়ী তাহলে ভুল ভাবছেন। যেখানে ফ্রান্সের প্যারিস ও আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটির মত ব্যস্ত নগরীতে AQI ৫০ থেকে ১০০ এর ভেতরে থাকে সেখানে আমাদের ঢাকা সিটিতে AQI ২০০-৫০০ হওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না। ২০০ এর উপরে থাকা মানে Hazardous সিচ্যুয়েশন। আমাদের ঢাকা সিটিতে ভোর বেলাতেই ২০০+ থাকে, দুপুর নাগাদ মাঝে মাঝে সেটা ৫০০ অতিক্রম করে, তখন গ্যাস মাস্ক পড়া জরুরী। ঢাকা শহরে সবার গ্যাস মাস্ক পড়ে ঘুরার কথা। আজ পর্যন্ত একজনকেও দেখেছেন গ্যাস-মাস্ক পড়ে ঘুরতে? কিংবা এই বাতাস দূষণ নিয়ে কোথাও কোন একটিভিটি দেখেছেন? এই যে আমরা ভিকটিম হচ্ছি, এর প্রথম কারণ হচ্ছে গনসচেতনতার অভাব। অধিকাংশ লোক যেদিন এবিষয়ে সচেতন হবে, সেদিন এসব নিয়ন্ত্রনের জন্য চাপ প্রয়োগ করা যাবে।
পানি ও খাবার দূষণ নিয়ে আমাদর অনেকেরই সচেতনতা এখন ভালো। কিন্তু এই সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। অধিকাংশ এখন পর্যন্ত শুধু এটুকু জানে যে- আমাদের খাবারে ভেজাল আছে যা ক্ষতিকর। সেই ক্ষতির মাত্রা ও বিপদ সম্পর্কে সবার পরিষ্কার ধারণা নেই। থাকলে খাবারের ভেজাল বন্ধ করার জন্য সব লোক রাস্তায় নেমে যেত এতদিনে।
পরিবেশ, খাবার, পানি, পোষাক, ইন্টারনেট, ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটসহ সকল সকল বিষয়েই ক্ষতিকর দিক আছে।
এসব ক্ষতি সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে জানতে হবে।
--
পুনশ্চঃ প্রযুক্তি কিভাবে আমাদের জীবনকে আরো সহজ ও সুন্দর করতে পারে এবং প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার কিভাবে আমাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে, এসব নিয়েই আলোচনা করবো এই সিরিজে। এই বিষয়টা নিয়ে অতীতে আরো অনেক পোস্ট দিয়েছি, কিন্তু সেগুলো সব খুঁজে বের করার চাইতে নতুন করেই সিরিজ শুরু করা বেটার মনে হলো।
কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।