আশেপাশে কত মানুশ মরে যাচ্ছে। আগেও যেত। গত দুই বছরে মনে হয় একটু বেশীই যাচ্ছে। অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে বেশী চোখে পড়ছে। ফ্রেন্ডলিস্টের কতজন রিমেম্বারিং হয়ে গেল। মাঝে মাঝে ভাবি, মরে গেলে কী হবে?
আমি যখন অনেক ছোট, স্কুলে পড়ি, তখন প্রিন্সেস ডায়না মারা গেলেন। পেপার-পত্রিকা-টিভিতে সারাদিন-রাত শুধু প্রিন্সেস ডায়না। প্রায় একমাস ধরেই চললো এসব। আমার জানা ইতিহাসে এত বেশী আলোড়ন আর কোন মৃত্যুর মাঝে দেখিনি।
তারপর...
তার পরের বছরে সামান্য দুই/একটা কিছু নিউজ হলো। এর পরের বছর আরো কম। কয়েক বছরের ভেতরে সবাই প্রায় ভুলেই গেল প্রিন্সেস ডায়না বলে যে পৃথিবীতে কেউ ছিলেন। এই ব্যাপারটা স্কুল পড়ুয়া আমার মনে এভাবে দাগ কাটলো যে- মরে গেলে তো সবাই ভুলে যাবে। যে প্রিন্সেস ডায়না মরে যাওয়াতে পুরো পৃথিবী কেঁপে গেল, তাকেই পৃথিবী ভুলে গিয়েছে। অন্য কারো মৃত্যুতে আর কী হবে? প্রিন্সেস ডায়নার মত পুরো পৃথিবী কাঁপিয়ে মরলেও আমাদের সবাই ভুলে যাবে।
এরপর...
এরপর একদিন স্টিভ জবস মারা গেলেন। এত ইনোভেটিভ একটা লোক। আলোড়ন হলো, কিন্তু প্রিন্সেস ডায়নার মত অতটা না। যথারীতি পরের বছর দুই/একটা নিউজ হলো। তারপর কয়েক বছরে আর নিউজও চোখে পড়লো না।
কিন্তু..
কিন্তু তিনি বেঁচে রইলেন অন্যভাবে। স্টিভ জবসের অ্যাপ স্টোরের জন্য অ্যাপ তৈরি করে লাখ লাখ লোক জীবিকা অর্জন করতে লাগলো। গত বছরও অ্যাপল ৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলার দিয়েছে ডেভেলপারদের। ৬০ বিলিয়ন ডলার মানে 'পাঁচ লক্ষ ষোল হাজার' কোটি টাকা।
স্টিভ জবসকে মানুশ ওভাবে স্বরণ না করুক, এত মানুশ যে তার স্থাপন করে যাওয়া প্লাটফর্মের উপর নির্ভর করে জীবিকা অর্জন করতে পারছে, এটা তো বাস্তব। এটা তো বর্তমান। এইদিক থেকে স্টিভ জবস প্রিন্সেস ডায়ানার মত পৃথিবী না কাঁপালেও অমর হয়ে আছেন, বহু লোকের জীবিকার ভেতরে। বহু লোকের একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার মাঝে।
স্টিভ জবস মারা গেলেন ২০১১ সালে। ঐ সময় থেকেই আমার মাথায় এই ভাবনাটা একদম পার্মানেন্ট হয়ে গেল যে- এমন কিছু যদি করে যাওয়া যায় যা বহু লোকের উপকারে আসবে, বহু লোকের জীবিকার উপায় হবে, তারচাইতে ভালো আর কী হতে পারে?
আপনাকে আমাকে লোকে ভুলে যাবে, কিন্তু আমাদের অবদান থেকে যতদিন মানুশের উপকার হতে থাকবে। সেটা বিস্মরণে থেকেও এক প্রকার অমরত্ব লাভ। মানুশের অবদান তাকে বাঁচিয়ে রাখে, আমরা সেটা বুঝতে বা অনুভব করতে না পারলেও।
কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।