প্যারেন্টিং - ৩৩
ভুল প্যারেন্টিং আপনার বাচ্চার ভেতরে প্রতিশোধস্পৃহা তৈরি করে। এই প্রতিশোধস্পৃহা খুব সুদূরপ্রসারী খারাপ প্রভাব বিস্তার করে আপনার বাচ্চার জীবনে। শাসনের নামে বাড়াবাড়ি করার ফলে এটা ঘটে থাকে।
আপনি প্যারেন্টস বলেই নিজের বাচ্চার সাথে যা খুশি তাই ব্যবহার করার শক্তি হয়তো আপনার আছে, কিন্তু এটা মাথায় রাখুন সেও একজন মানুশ। আপনার বাড়াবাড়ি ও অন্যায়ের সরাসরি প্রতিবাদের শক্তি বা সাহস তার ভেতরে হয়তো নেই, কিন্তু মনে মনে সে কিন্তু প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে একটা সময় পর অনেক বাচ্চা গোপনে প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। যেহেতু ছোট মানুশ, জগৎ সংসার সম্পর্কে জানে না তেমন কিছু, তাই তাদের প্রতিশোধগুলো আসলে তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমি অনেক মাদকাসক্তের কথা জানি যারা বাবা-মায়ের উপরে 'প্রতিশোধ' নেয়ার জন্য গোপনে মাদক নিতে শুরু করেছিলো। আমি এরকম অনেক মেয়ের কথা জানি যারা গোপনে উলটা-পালটা কাজ করেছে শুধুমাত্র বাবা-মায়ের উপরে প্রতিশোধ নিতে। একটা সময় পরে এরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে, কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। আর তাদের এই ক্ষতির দায় কিন্তু প্যারেন্টস হিসেবে আপনার।
এই প্রতিশোধস্পৃহা শুধু তার নিজেরই না, অন্যদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে তার লাইফ পার্টনারের উপরে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করে যেটা তার ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সে তার বাচ্চাদের কাছে পার্টনারের নামে বানিয়ে বানিয়ে উলটা-পালটা বলে বাচ্চাদের মনোজাগতিক ক্ষতি করে (এই বিষয়ে প্যারেন্টিং - ৩০ পর্বে সংক্ষেপে কিছু আলাপ আছে, লিংক দিলাম কমেন্টে), যা বাচ্চাটার ভবিষ্যত জীবনে মারাত্বক নেগেটিভ প্রভাব ফেলে।
আপনার উপরে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এদের সবচাইতে বড় যে ক্ষতিটা হয় সেটা হচ্ছে প্রতিশোধস্পৃহায় আসক্ত হওয়া। এটা মাদকাসক্তির চাইতেও খারাপ আসক্তি। এর থেকে সে কখনোই বের হতে পারে না। এমনকি, প্রতিশোধস্পৃহা যে খারাপ, এটা বুঝতে পারলেও এর থেকে বের হতে পারে না। ব্যাপারটা মাদকাসক্তির মত ফাংশান করে ব্রেইনে। মাদকাসক্তরা যেমন ঘুরেফিরে আবার সেই মাদকের কাছেই ফিরে যায়, এরাও এদের প্রতিশোধ নেয়ার পৈশাচিক আনন্দের কাছে ফিরে যায়। এবং এই ভাইরাস তারা অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এভাবে একটা অসুস্থ সমাজ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
আপনার ভুল প্যারেন্টিং শুধুমাত্র আপনার বাচ্চার জীবনই নষ্ট করছে না, একটা সমাজ ধ্বংসেরও কারণ হচ্ছে।