একজন ভালো শিক্ষক

একদিন এক তরুন এসে এক বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করলো, 'আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন?'

বৃদ্ধ চশমা পরিষ্কার করে ভালো করে তাকিয়ে বললেন— 'নাহ! কে তুমি?'

'আমি আপনার একজন ছাত্র', বললো তরুন।

'কী করো তুমি?'

'আমি একজন শিক্ষক হয়েছি।'

'বাহ, আমার মত!', বৃদ্ধ আনন্দিত কণ্ঠে বললেন।

'হ্যাঁ! আসলে আমি শিক্ষক হয়েছি আপনাকে দেখে। আপনি আমাকে আপনার মত শিক্ষক হতে অনুপ্রানিত করেছিলেন।'

বৃদ্ধ শিক্ষক হাসলেন। জানতে চাইলেন কবে এবং কিভাবে তিনি অনুপ্রানিত করেছেন।

তরুন শিক্ষক বলতে শুরু করলো—

একবার ক্লাসে আমার এক বন্ধু একটি চমৎকার ঘড়ি নিয়ে এসেছিলো। ঘড়িটি আমার খুব পছন্দ হয়েছিলো এবং আমার মনে হয়েছিলো যেভাবেই হোক ঘড়িটি আমাকে নিতে হবে। তাই আমি তার ঘড়িটি চুরি করলাম।

কিছুক্ষন পর বন্ধুটি যখন বুঝতে পারলো তার ঘড়িটি চুরি হয়ে গিয়েছে, সে আপনার কাছে বিচার দিলো। তখন আপনি বললেন— 'তোমাদের ভেতরে ঘড়িটি যে-ই নিয়ে থাকো, দয়া করে ফেরত দিয়ে দাও।'

কিন্তু আমি ঘড়িটি ফেরত দিতে লজ্জ্বা পাচ্ছিলাম। আপনি তখন ক্লাসরুমের দরজা বন্ধ করে আমাদের সবাইকে গোল হয়ে দাঁড়াতে বললেন যাতে সবার পকেট চেক করে দেখতে পারেন ঘড়িটি কে নিয়েছে। আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম। কিন্তু আপনি একইসাথে এটাও বললেন যে— 'ঘড়িটি আপনি শুধু তখনি খুঁজে দিবেন যখন সবাই চোখ বন্ধ করে রাখবে।'

আমরা চোখ বন্ধ করলাম। আপনি একে একে পকেট চেক করতে শুরু করে আমার পকেটে ঘড়িটি পেয়েও বাকী সবার পকেট চেক না করা পর্যন্ত থামলেন না। তারপর সবাইকে বললেন আপনি ঘড়িটি পেয়েছেন এবং সবাই এখন চোখ খুলতে পারে।

ঐদিন আপনি কাউকে বলেননি ঘড়িটি কার পকেটে পেয়েছেন। আমি মনে মনে খুবই লজ্জ্বিত ও শঙ্কিত ছিলাম নিজের সম্মান নষ্ট হওয়ার বিষয়ে। আপনি সেটা হতে দেননি। তখন নিজের সাথে আমি এই প্রতিজ্ঞা করলাম যে— জীবনে আর কখনো চুরি করবো না এবং খারাপ কাজ করবো না। আপনি পরেও আমাকে কিছু বলেননি।

ঐদিন আপনাকে দেখে বুঝতে পেরেছি একজন সত্যিকার শিক্ষকের কেমন হওয়া উচিত। আপনি আমাকে কী শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন সেটা আমি অনুধাবন করেছিলাম ও শিক্ষকতার মহত্ব বুঝতে পেরেছিলাম। তাই আমি শিক্ষক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

'আপনার কি সেই দিনের কথা মনে আছে?', তরুন শিক্ষক জানতে চাইলো।

বৃদ্ধ আবার হাসলেন। বললেন- 'হ্যাঁ, মনে আছে সেই দিনের কথা। কিন্তু তোমাকে চিনতে পারিনি কারণ ঐদিন সবার পকেট চেক করা সময় আমিও চোখ বন্ধ করে ছিলাম।'


ডিসক্লেইমার:
অনূদিত ও ইষৎ পরিবর্তিত।
মূল লেখকের নাম পাওয়া যায়নি।


ত্রিভুজ আলম

ত্রিভুজ আলম

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখালেখি

লেখকের আরো লেখা

ত্রিভুজ আলম কমিউনিকেশন স্কিল - ১

কিছু মানুষকে দেখবেন আপনার খুব ভালো লাগে আর কিছু মানুষকে বিরক্তিকর। কিছু মানুষ সহজেই আপনাকে সব বুঝিয়ে দিতে পারে আর কিছু মানুষ সারাদিন কথা বলেও বোঝাতে প...

ত্রিভুজ আলম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল - একটি সফল বানিজ্যিক রহস্য!

মানুষ স্বভাবগত ভাবেই রহস্য প্রিয়। রহস্য প্রিয় মানুষেরা রহস্যের খোঁজে বের হয়ে যুগে যুগে পৃথিবীর জন্য অনেক কিছু করেছেন তাই রহস্যপ্রিয়তাকে মানুষের স্বভাব...

ত্রিভুজ আলম ভাইরাসমুক্ত নিরাপদ কম্পিউটার

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের ভেতরে এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর যিনি কখনো ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের পেছনে অনেক টাক...