মন্দার দিনে টিকে থাকার প্রস্তুতি
বিশ্বব্যাপি যে রিসেশন শুরু হতে যাচ্ছে, আশা করি তা গ্রেট রিসেশনে পরিনত হবে না। তবুও সবচাইতে খারাপটা ধরে নেয়া ভালো। আজকে বিপদের পূর্বাভাস দেয়ার পরিবর্তে এধরনের বিপদে করণীয় কী হতে পারে তা নিয়ে কিছু ভাবনা শেয়ার করবো।
ক) মানসিক প্রস্তুতি
ধরেন আপনি জব হারিয়েছেন এবং পরিস্থিতি ঠিক হতে কমপক্ষে বছর খানেক লাগবে। মানে আগামী এক বছরে আপনার একই ক্যাটাগরির জব পাওয়ার সম্ভবনা কম। সেক্ষেত্রে আপনার অন্তত দুই বছরের প্রস্তুতি নেয়া ভালো।
খ) অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
প্রথমেই একটা বাজেট বানিয়ে ফেলেন। জমানো টাকায় নূন্যতম একটা বাজেট তৈরি করে দেখেন, কত বছর টিকতে পারবেন। যদি তিন বছরের বেশী সার্ভাইব করার বাজেট বানাতে পারেন, তাহলে বাজেট একটু বাড়াতে পারেন। তবে না বাড়ানোই ভালো। তাহলে বাকী টাকাটা আপনার সেভিংসে থেকে মানসিক দিক থেকে শক্ত হতে সাহায্য করবে। আর যদি দুই বছরের বাজেট তৈরির মত ফান্ড না থাকে তাহলে বিকল্প আয়ের উপায় খুঁজতে হবে আপনাকে। সেক্ষেত্রে কমপক্ষে কতদিন টিকতে পারবেন তার হিসাব করে ঐ সময়ের ভেতরে বাকী ফান্ড ম্যানেজের জন্য পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে।
গ) লাইফস্টাইল
এধরনের পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য একটা অপটিমাম লাইফস্টাইল আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। কেমন হতে পারে সেটা? অল্প কথায় পয়েন্ট আকারে দেখানোর চেষ্টা করবো এখানে।
১) বাসস্থানঃ আপনি যদি বিভাগীয় শহরের বাসিন্দা হয়ে থাকেন তাহলে প্রথমেই সেখানে সবচাইতে কম খরচে কিভাবে থাকা সম্ভব, সেটা খুঁজে বের করুন। বড় শহরে থাকার সুবিধা হচ্ছে— পুনরায় কাজ পাওয়া সহজতর হবে। সেটা সম্ভব না হলে ফ্যামিলিকে শহরের বাইরে পাঠিয়ে নিজে থাকার জন্য বাজেট করুন। সেটাও সম্ভব না হলে মফস্বল কোন শহরে থাকার বাজেট বানান। তাও সম্ভব না হলে ফ্যামিলিকে গ্রামে পাঠিয়ে আপনি শহরে থাকার চেষ্টা করুন অন্তত।
২) খাবারঃ সবচাইতে কম খরচে সুষম খাবার পেতে কোন কোন উপাদান আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে তার একটা তালিকা বানান। সুষম খাবার মেনটেইন করতে কিন্তু অত টাকা লাগে না। বরং সুষম খাবারের বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে খাদ্যের পেছনে অপচয় করি আমরা। তাই এই বিষয়ে বই, ইন্টারনেট ও বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিন।
৩) পড়ালেখাঃ বাচ্চাদের পড়ালেখা নিশ্চিত করতে ইন্টারনেটের উপরে বেশী নির্ভর করতে হবে। বিশেষ করে বিভাগীয় শহরের বাইরে যদি দুই বছর থাকতে হয়, সেখানকার স্কুল আপনার বাচ্চাদের বড় শহরে পড়ার অভাব মেটাতে পারবে না। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট আপনার সবচাইতে বড় ভরসার জায়গা হতে পারে।
৪) চিকিৎসাঃ খাদ্যভাস ঠিক করতে পারলে চিকিৎসা বাজেটও কমে আসবে। কোভিড-১৯ এর সময় এই বিষয়ে আপনার ধারণা তৈরি হওয়ার কথা।
৫) এন্টারটেইনমেন্টঃ বিনোদন অনেক প্রয়োজনীয় একটা বিষয়। আপনার যদি বই পড়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে আপনার জন্য বিনোদন অত কস্টলি হবে না। সেই সাথে অনলাইন তো আছেই। বাচ্চাদের এখন থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। তাদের সুস্থ্য বিনোদন নিশ্চিত করবে এটা। আর যেহেতু ঘরে থাকা হবে বেশী, তাই ফ্যামিলিকে টাইম দেয়াও একটা বিনোদনের মাধ্যম হবে। ইনডোর গেমিং আইটেমগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। বিশেষ করে বোর্ড গেম। বাইরে দেশগুলোতে বোর্ড গেম অনেক জনপ্রিয় একটা বিনোদন ও ফ্যামিলি টাইম মাধ্যম।
৬) ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টঃ জব নাই মানে আপনার হাতে প্রচুর সময়। এই সময়টা কাজে লাগান বই-পত্র ও ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন স্কিল গেইন করার ব্যাপারে। এ বিষয়ে ডিটেইল গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করবো পরে। আপাতত নিজে সার্চ করে বুঝার চেষ্টা করুন, কিভাবে কী করতে হবে।
৭) নেটওয়ার্কিং বা যোগাযোগঃ লোকজনের সাথে যোগাযোগ বাড়ান। সময় যেহেতু আছে এটা কঠিন হবে না। সামর্থ্য থাকলে অন্যদের সাহায্য করুন বিভিন্ন ভাবে। অর্থনৈতিক দিক থেকে না হলেও বুদ্ধি-পরামর্শ ও মানসিক সহযোগীতা বাড়ান। এটা আপনাকেও মানসিক দিক থেকে সুস্থ্য ও ভালো থাকতে সাহায্য করবে।
৮) প্রায়োরিটিঃ সবকিছুর ক্ষেত্রেই প্রায়োরিটির তালিকা তৈরি করুন। এক্ষেত্রে টেকনোলজির সাহায্য নিন। ফোন/কম্পিউটারে থাকা ক্যালেন্ডার/টু-ডু লিস্ট, নোট টেকিং ও লাইফ ম্যানেজমেন্ট অ্যাপগুলো ব্যবহার শুরু করুন। এগুলো আপনার জীবন গোছাতে ও দুর্যোগ কাটাতে সাহায্য করবে।
সর্বপরি, হতাশ হওয়া যাবে না। উপরের ছবিতে একটা গাছ দেখতে পাচ্ছে না? এই ছবিটা তুলেছিলাম চলন বিলে বেড়াতে গিয়ে। মাসের পর মাস এরকম প্রতিকূল পরিবেশেও এই গাছ টিকে থাকে। আপনিও পারবেন।