মনোলিপি

অলস বসে থাকলে আমার মাথায় নানা ধরনের গল্প ঘুরতে থাকে। অলস মস্তিস্ক যে শয়তানের কারখানা, এটা আমি তখন পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যাই। তো একদিন এক রেস্টুরেন্টে ঢুকেছি। কেউ অর্ডার নিতে আসে না আমারো তাড়া নেই। শয়তানের কারখানায় নানা ধরনের গল্প তৈরি হতে লাগলো। ঐদিন মজার কিছু গল্প ঘুরছিলো। নিজে গল্প বানাই নিজেই হাসি।

- এক্সকিউজ মী!
রাগী রাগী এক মেয়েকে আমার টেবিলের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় আবিষ্কার করলাম। শয়তানরা সব ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু একটা শয়তান মনে হয় যায় নাই।
- এক্সকিউজড!
- 'মানে?', মেয়েটা আরো রেগে গিয়ে বললো।
- মানে, আপনাকে মাফ করে দেয়া হলো।
- মাফ করে দেয়া হলো মানে?
- এক্সকিউজ মী বললেন না? যান, এক্সকিউজড!
- ফাজলামি করেন? এতক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে মিট মিট হাসছিলেন আর এখন ফাজলামি?

এতক্ষনে আমি বুঝতে পারলাম উনি সামনের টেবিলে বসে ছিলেন। আমার মাথায় মজার মজার গল্পগুলো তৈরি হওয়ার সময় যখন হাসছিলাম তখন সম্ভবত ঐদিকে তাকিয়ে ছিলাম। এরকম ঘটনা আমার জীবনে আরো অনেক আছে। দেখা গেল হয়তো আনমনে বসে চিন্তা করছি, হঠাৎ খেয়াল করলাম যেদিকে তাকিয়ে আছি সেখানে কেউ একজন বসে আছে। সে খুবই অস্বস্তিতে ফিল করতেছে। সবাই তো আর এই মেয়ের মত ক্ষমা চাইতে আসে না! মানে, এক্সকিউজ মী বলে তেড়ে আসে না। যাহোক, এখন এই মেয়েকে কিভাবে শান্ত করি... এদিকে ভয় পেয়ে বাকী শয়তানটাও মনে হয় ভেগেছে।

- স্যরি! আপনি কি ঐ সামনের টেবিলে বসে ছিলেন এতক্ষন?
- মানে? আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে?
- একটু মনে হয় আছে। আপনার কাছে প্যারাসিটামল হবে?

মেয়েটা ফিক করে হেসে ফেললো। লাস্ট কবে কাউকে ফিক করে হাসতে দেখেছি মনে করতে পারছিলাম না। ভালো লাগছিলো দেখতে। আমি এবার সত্যি সত্যি মেয়েটাকে দেখেই হাসলাম। আমার বিখ্যাত বোকা বোকা হাসি। এই বোকা বোকা হাসি ব্যাপারটাও এক মেয়ে আবিষ্কার করেছিলো। সে বলেছিলো- আপনি হাসলে অনেক সুন্দর লাগে। কেমন বোকা বোকা হাসি! বোকা বোকা হাসি সম্ভবত মেয়েদের প্রিয় জিনিষ।

- শুনেন, একদমই বানিয়ে বলছি না। আসলেই মাথা ব্যথা করছে। আর মাথা ব্যথা তো একটা সমস্যাই! তাই না?
- হ্যাঁ, সমস্যাই তো! আপনার আসলেই মাথায় সমস্যা আছে।
বলেই মেয়েটা আবার হাসতে লাগলো। এই হাসি দেখে মাথায় সমস্যা থাকা সংক্রান্ত একটা ঘটনা মনে পড়লো। আমার বড় বোন গিয়েছে চোখের ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার জানতে চাইলো- 'মামনি, তোমার কী সমস্যা?' আপু বললো- 'আমার মাথায় সমস্যা!'
- আচ্ছা শুনেন, মাথা ব্যথা করলেই প্যারাসিটামল খেতে হয় না।
- আপনি কি ডাক্তার?
- ডাক্তার না, তবে কয়েক বছরের ভেতরে ডাক্তার হয়ে যাবো। আপনার এখন দরকার আদা চা।
- এখানে আদা চা কোথায় পাবো?
- দাঁড়ান, ব্যবস্থা করছি।

বলেই সে মামা-কে ডেকে আদা চা দিতে বললো। মামার ভাবভঙ্গি দেখে বুঝলাম মেয়েটা এখানে প্রায়ই আসে। আজ হতে কয়েক যুগ পরে যারা এই লেখা পড়বেন তারা হয়তো এই মামা রহস্য ধরতে পারবেন না। আমরা যখন ভার্সিটিতে উঠি তখন এই মামা ডাক প্রচলন হয়। চাওয়ালা মামা, রিকশাওয়ালা মামা, দোকানদার মামা, ফ্লেক্সিওয়ালা মামা। আমাদের মামার কোন অভাব ছিলো না। মামা মামা করতে করতে আমার এক বন্ধু তার বাপরেও মামা ডেকে ফেলেছিলো একবার।

- আপনি এখানে স্থানীয়?
- নাহ, এখানে মেডিক্যালে পড়ি।
- আপনি তো দেখি সত্যি সত্যি ডাক্তার!
- মিথ্যা হবে কেন? সবাই কি আপনার মত মিথ্যা বলে নাকি?
- আমি কিন্তু মিথ্যা বলিনি। আমি আসলেই আপনাকে খেয়াল করিনি।
- হয়েছে! এখন চুপ করে চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন। আদা চা আসলে চা খাবেন, মাথার সমস্যা সেরে যাবে।

ফেসবুকহীন যুগে এভাবে আমি একটা ভালো বন্ধু পেয়েছিলাম। এরপর কেন যেন একদিন হারিয়ে গেল। বেশ কয়েক বছর পর ফেসবুকে আমাকে খুঁজে বের করে ম্যাসেজ দিলো।

- কেমন আছিস?
- ভালো। তুই এখনো বেঁচে আছিস দেখে আরো ভালো লাগতেসে। ভাবলাম মরে টরে গেছিস। কুলখানির দাওয়াতটাও দিতে ভুলে গেছিস!
- মরি নাই।
- তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
- তুই এখনো আগের মতই আছিস। একটুও বদলাস নাই। বয়সও বাড়ে নাই!
- বয়স জিনিষটা আসলে কখনো বাড়ে না, কমে। তোদের মেডিক্যালের ভাষায় এক্সপায়ার ডেট এগিয়ে আসে। মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে যাই আমরা।
- হইছে! এতবছর পর তোর লেকচার শুনতে আসি নাই। তোকে একটা প্রশ্ন করার জন্য ম্যাসেজ করেছি।
- করে ফেল।
- অনেস্টলি বলবি।
- আমি কবে মিথ্যা বললাম?
- ফাজলামি না। তুই এখনো আগের মত রয়ে গেলেও আমি যথেষ্ঠ ম্যাচিউরড। আচ্ছা বল তো, আমাকে তুই কখনো পছন্দ করিস নাই?
- তোকে তো আমি এখনো পছন্দ করি। তুই নিজেই তো ডুব দিলি।
- ডুব দেয়ার পর একবারো খোঁজ নিয়েছিস?

আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কী বলবো। কিছু কিছু ব্যাপার আমি আসলেই বুঝতে পারি না। হয়তো আমার মাথায় আসলেই সমস্যা আছে! কে জানে!

ত্রিভুজ আলম
১৩ জানুয়ারী, ২০২১
উত্তরা, ঢাকা।


ত্রিভুজ আলম

ত্রিভুজ আলম

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখালেখি

লেখকের আরো লেখা

ত্রিভুজ আলম কমিউনিকেশন স্কিল - ১

কিছু মানুষকে দেখবেন আপনার খুব ভালো লাগে আর কিছু মানুষকে বিরক্তিকর। কিছু মানুষ সহজেই আপনাকে সব বুঝিয়ে দিতে পারে আর কিছু মানুষ সারাদিন কথা বলেও বোঝাতে প...

ত্রিভুজ আলম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল - একটি সফল বানিজ্যিক রহস্য!

মানুষ স্বভাবগত ভাবেই রহস্য প্রিয়। রহস্য প্রিয় মানুষেরা রহস্যের খোঁজে বের হয়ে যুগে যুগে পৃথিবীর জন্য অনেক কিছু করেছেন তাই রহস্যপ্রিয়তাকে মানুষের স্বভাব...

ত্রিভুজ আলম ভাইরাসমুক্ত নিরাপদ কম্পিউটার

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের ভেতরে এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর যিনি কখনো ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের পেছনে অনেক টাক...