পৃথিবীর বর্তমান সভ্যতার যে রূপ আপনি দেখতে পাচ্ছেন, এটা সম্ভব হয়েছে মানুষের অজানাকে জানার আগ্রহ ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার জন্য। পৃথিবীর জানা ইতিহাসে এরকম হাজারো আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের কথা আমরা জানতে পারি যা বদলে দিয়েছিলো মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি এবং সর্বপরি উপহার দিয়েছে আধুনিক সভ্যতা। মানুষের এই আবিষ্কার ও উদ্ধাবন নিয়ে আপনি যতই জানবেন ততই অবাক হবেন। আমাদের বর্তমান সভ্যতার পেছনের গল্পগুলো জানা নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক ও কৌতুহল উদ্দীপক ব্যাপার। তাছাড়া ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অতীতের অর্জনগুলোকে জানতে হয়। এই সিরিজে মানব সভ্যতার গুরুত্বপূর্ন কিছু আবিষ্কার ও উদ্ভাবন নিয়ে জানানোর চেষ্টা করবো। এছাড়াও জানা ইতিহাস থেকে এসব অর্জনের পথে বিভিন্নজনের অবদান নিয়েও আলোচনা করা হবে। এই জানার পথে আপনাদেরকে স্বাগতম।
অনিয়ন্ত্রিত আগুন এক বিভীষিকার নাম। সেটা আজকের দিনেও যেমন, তখনো। এই আগুনকে বশ করা ছিলো মানব সভ্যতার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ঘটনার একটি। ১৪ লক্ষ বছর আগে মানুষ যা শিখতে পেরেছে বলে ধারণা করা হয়। বজ্রপাত বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে হওয়া দাবানলের সাথে মানুষের পরিচয় একদম পৃথিবীতে বসবাসের শুরু থেকেই। সেই আগুনকেই একদিন মানুষ নিজেদের ইচ্ছেমত তৈরি এবং নিয়ন্ত্রন করতে শিখে ফেলে। এই আবিষ্কার মানব সভ্যতার অগ্রগতিকে অনেক দ্রুততর করেছে। প্রাথমিক যুগে চকমকি পাথর ঠুকে বা দু'টো কাঠের ডাল ব্যবহার করে আগুন তৈরি করা হতো বলে ধারণা করা হয়।
জীবন যাপনের জন্য মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি হচ্ছে বাসস্থান বা আশ্রয়স্থল (shelter)। বিভিন্ন হিংস্র জন্তু থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে মানুষকে এই আশ্রয় খুঁজে নিতে হয়েছে। ধারণা করা হয় পৃথিবীতে মানুষের প্রথম দিন থেকেই সে কোন না কোনভাবে এই আশ্রয়স্থল খুঁজে নিয়েছে। এই যেমন প্রাকৃতিক গুহা, ঘন ঝোপ বা বড় গাছের কোটর ইত্যাদি। কিন্তু একটা সময় মানুষ নিজেই নিজের আশ্রয়স্থল তৈরি করতে শিখেছে। সর্বপ্রথম কবে মানুষ এই আশ্রয়স্থল নির্মাণ করেছে তা সম্পর্কে পরিষ্কার কোন ধারণা করা না গেলেও চার লক্ষ বছর আগে মানব নির্মিত আশ্রয়স্থলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ফ্রান্সের টেরা অ্যামাটা (Terra Amata) আর্কিওলজিক্যাল সাইটে এরকম কিছু বাসস্থানের নমুনা রয়েছে যেগুলোর নির্মান সময় খৃষ্টপূর্ব ৪,০০,০০০ বলে ধারণা করা হয়। এই আবাসস্থল তৈরি করাকে কৃষি কাজের চাইতেও গুরুত্বপূর্ন বলে ফিলিপ জনসন নামের এক আর্কিটেক্ট মতামত দিয়েছিলেন।
গাছের কোটর বা পাথরের গুহায় যখন মানুষ বাস করতো তখন তাদের একটা মৌলিক সমস্যা ছিলো বেঁচে থাকার উপকরণ সংগ্রহ করা। কারণ, এসব প্রাকৃতিক শেলটার সব জায়গায় মিলতো না। কিন্তু যখন মানুষ নিজেই বাসস্থান তৈরি শিখে গেল, তখন সে পানি ও খাবারের উৎসের কাছাকাছি আবাসস্থল তৈরি শুরু করতে পেরেছে যা সভ্যতাকে আরো দ্রুত এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।
পোশাক তৈরি করতে শেখাটা মানব সভ্যতাকে আরো অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো সন্দেহ নেই। বিরুপ প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য, বিশেষ করে বৃষ্টি, ঠান্ডা ও বিভিন্ন পোকামাকড়ের দংশন থেকে বাঁচার জন্য পোশাক জরুরী ছিলো। খৃস্টপূর্ব চার লক্ষ বছর আগে মানুষ এই পোশাক তৈরি ও পরিধান করতে শুরু করে বলে ধারণা করা হয়। যদিও এই সময়টা নির্ধারণ করা খুব কঠিন তবুও গবেষকরা প্রতিনিয়ত এর প্রমাণ খুঁজে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত খৃষ্টপূর্ব ৩০ হাজার বছর আগের হাড়ের তৈরি শেলাই করার সূচ (Sewing needle) পাওয়া গিয়েছে। প্রাথমিক দিকে পোষাক তৈরিতে গাছের পাতা, ছাল-বাকল ও পশুর চামড়া ব্যবহার করা হতো বলে ধারণা করা হয়। গত কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে এই পোষাকের বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে যা এখনো চলমান। বিশেষ করে গত কয়েক শতকে পোশাক নানারকম বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে এগিয়েছে। পোষাক আবিষ্কার মানব সভ্যতার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে সন্দেহ নেই। কারণ, পোষাক না থাকলে মানুষের পক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান অনুসন্ধান (Explore) করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াতো। পোষাক নিয়ে এখনো মানুষের গবেষণার শেষ নেই। আধুনিক বিশ্বে পোষাক তার জরুরী প্রয়োজনকে ছাড়িয়েছে ফ্যাশনের অংশ হয়ি দাঁড়িয়েছে। পোষাক শিল্প এখন বিশ্বের অন্যতম বড় ও সমৃদ্ধ শিল্প হিসেবে পরিগনিত।
বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষকে খাবার সংগ্রহ করতে হতো। প্রাথমিক দিকে মানুষ হয়তো গাছের ফলমূল, বীজ ও পাতা/লতা দিয়ে জীবন ধারণ করতো। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে বনের পশু শিকার করা শুরু করেছে। প্রায় চার লক্ষ বছর আগে মানুষের তৈরি বর্শা ও বল্লম প্রকৃতির অস্ত্রের সন্ধান পেয়ে গবেষকরা তেমনটাই ভাবছেন। এগুলো ছিলো বর্শা ও বল্লম প্রকৃতির অস্ত্র যা ধারালো পাথর ও কাঠ/গাছের ডাল দিয়ে তৈরি।
প্রাচীন হোমিনিড শিকারীরা চকমকি পাথরের তৈরি ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে গাছের ডালের মাথা চোখা করে নিতো এবং পশুর ছাল কেটে শক্ত দড়ি বানিয়ে ধারালো ফলা যুক্ত করতো কাঠের মাথায়। একইধরনের পদ্ধতি জার্মানীর ব্রিমেন অঞ্চলের কাছাকাছি বসবাস করা মানুষেরা ব্যবহার করতো বলে প্রমাণ মিলেছে। একটি ম্যমথের কংকালের ভেতরে এরকম একটি বর্শার সন্ধান গবেষকরা পেয়েছেন। সাহারার শিকারীদের একই ধরনের বর্শা ব্যবহারের প্রমাণ মেলে। পরবর্তীতে এসব বর্শার মাথায় পাথরের পরিবর্তে ধাতব ফলা ব্যবহার শুরু হয় যা কয়েকশত বছর পূর্বেও ব্যবহারের নজীর রয়েছে।
লেখার আকৃতি ছোট রাখার জন্য খুব অল্প কথায় বর্ণনা করা হলো যা হয়তো আপনাদের পিপাসা মেটাতে পারেনি। এই সিরিজের উদ্দেশ্য হচ্ছে আবিষ্কার ও উদ্ভাবনগুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া যাতে আপনারা নিজেরা আরো বিস্তারিত খুঁজে নিতে পারেন। পরবর্তীতে প্রতিটি আবিষ্কার নিয়ে বড় আকারের লেখা নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হবে গ্লিএরা। সেই পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকুন এবং জ্ঞান অন্বেষন চলতে থাকুক।
কিছু মানুষকে দেখবেন আপনার খুব ভালো লাগে আর কিছু মানুষকে বিরক্তিকর। কিছু মানুষ সহজেই আপনাকে সব বুঝিয়ে দিতে পারে আর কিছু মানুষ সারাদিন কথা বলেও বোঝাতে প...
মানুষ স্বভাবগত ভাবেই রহস্য প্রিয়। রহস্য প্রিয় মানুষেরা রহস্যের খোঁজে বের হয়ে যুগে যুগে পৃথিবীর জন্য অনেক কিছু করেছেন তাই রহস্যপ্রিয়তাকে মানুষের স্বভাব...
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের ভেতরে এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর যিনি কখনো ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের পেছনে অনেক টাক...