এডুকেশন সিস্টেম কেমন হওয়া উচিত? (দ্বিতীয় পর্ব)
একটা নতুন এডুকেশন সিস্টেম চালু করার পথে প্রধানতম বাঁধাগুলোর ভেতরে তিনটা হচ্ছে—
ক) সিস্টেম রান করার উপযোগী ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করা
খ) ঐ সিস্টেমের জন্য উপযোগী শিক্ষক প্রশিক্ষন দেয়া
গ) মূল্যায়ণ পদ্ধতির পরিবর্তন
অতীতে এই তিনটি বিষয়ই ব্যয়বহুল ও সময়-সাপেক্ষ ছিলো। তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতি ও এর যথাযথ ব্যবহার করা গেলে খরচ এবং সময়, দু'টোই বাঁচানো সম্ভব। আগের পর্বে বর্ণিত লেভেল বেসড এডুকেশন সিস্টেমের ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন হতে পারে সংক্ষেপে বলি—
ক. ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করা
১) প্রচলিত শ্রেণী কক্ষের পাশাপাশি এখানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হবে। তবে, এটা হবে নিয়ন্ত্রিত। কোভিডকালীন সময়ে যেভাবে বাচ্চাদের হাতে আনরেস্ট্রিকটেড স্মার্টফোন তুলে দেয়া হয়েছে, তা করা যাবে না।
ট্যাব বা ল্যাপটপ/ডেস্কটপে রেস্ট্রিকটেড প্রোফাইল তৈরি করে বাচ্চাদের উপযোগী করতে হবে প্রথমে। আর এবিষয়ে গাইডলাইন ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদান করা হবে শিক্ষা পোর্টাল থেকে।
২) শিক্ষা পোর্টাল হচ্ছে একটা অনলাইন প্লাটফর্ম যেখানে সমস্ত অভিভাবকদের একাউন্ট থাকবে। অভিভাবকরা তাদের একাউন্টের অধীনে বাচ্চাদের একাউন্টগুলো তৈরি করবেন এবং একটা নির্দিষ্ট বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত নিয়ন্ত্রন করবেন। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর শিক্ষার্থীদের সরাসরি একসেস দেয়া হবে।
৩) শিক্ষা পোর্টালে শিক্ষার্থীদের সমস্ত একাডেমিক কনটেন্ট ও একটিভিটির হিস্টোরী থাকবে। একইসাথে শিক্ষা পোর্টালে থাকা সমস্ত এডুকেশনাল কনটেন্ট একসেসের ব্যবস্থা এবং সেগুলোর কোনটি কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে, সেই স্ট্যাটস।
৪) শিক্ষা পোর্টালে একাডেমিক কনটেন্টের পাশাপাশি মেন্টর/শিক্ষকরা থাকবেন। যেহেতু অনলাইন বেসড, তাই পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে থাকা একজন ভালো শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ ও হেল্প নেয়া যাবে।
খ. শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে
১) প্রতিটা লেভেলের উপযোগী কনটেন্টের হার্ডকপির পাশাপাশি সফট কপি থাকবে যা শিক্ষা পোর্টালে এভেইলেবল করা হবে। শিক্ষকদের জন্য এখানে আলাদা একসেস থাকবে যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কনটেন্টের পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য তৈরি কনটেন্টগুলো থাকবে যা তাদের প্রশিক্ষনে ব্যবহার করা হবে।
২) নতুন সিস্টেমের প্রতিটা লেভেলের ক্লাশ কিভাবে নিতে হবে সেসবের উপরে কনটেন্ট (গাইড/ভিডিও/থ্রিডি ম্যাটেরিয়াল ইত্যাদি) প্লাটফর্মে রাখার পর শিক্ষকরা যেকোন সময় এই প্লাটফর্মে সাজানো কোর্সগুলো করতে পারবে। পাশাপাশি কিছু লাইভ ক্লাশ থাকবে। আর থাকবে নানা ধরনের এক্সাম। এসব এক্সামে পাশ করা, ভালো স্কোর পাওয়ার উপরে শিক্ষকদের কোয়ালিটি নির্ভর করবে। ফলে কেউ একবার এক্সাম দিয়ে ভালো স্কোর করতে না পারলে প্রশিক্ষন চালিয়ে যাবে, আবার এক্সাম দিবে। GRE স্কোর বাড়াতে স্টুডেন্টরা যেভাবে কয়েকবার ট্রাই করে, এরকম। শিক্ষকদের জন্য এসব কোর্স ও এক্সাম সারাজীবন উন্মুক্ত থাকবে, আর কিছু পলিসি সেট করা থাকবে যাতে কেউ সিস্টেমরে অ্যাবিউস করে ফেইক স্কোর তুলতে না পারে।
২) শিক্ষক প্রশিক্ষনের এই বিষয়টা লাইফটাইম ধরে চলতে থাকবে, কারণ নতুন নতুন এডুকেশনাল কনটেন্ট আসতে থাকবে এবং শিক্ষকদের সেগুলোর সাথে পরিচিত হতে হবে।
গ) মূল্যায়ণ পদ্ধতি
১) এখানে তিন ধরনের এক্সাম থাকবে। হাতে-কলমে লিখিত এক্সাম, ডিজিটাল টেক্সটে লিখিত এক্সাম, ও ভাইভা। ভাইভাগুলো সরাসরি কিংবা অনলাইন কনফারেন্স, উভয় মাধ্যমেই হতে পারে।
২) প্রতিটা টপিক শেষে সেই টপিকের উপরে একটা ডিজিটাল এক্সাম হবে যেখানে কম্পিউটারে প্রশ্ন আসবে, কীবোর্ডে টাইপ করে শিক্ষার্থী উত্তর দিবেন। এগুলো ওপেনবুক এক্সাম। এসব এক্সামের মূল্যায়ণ হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করে, ফলে শিক্ষকদের উপরে অতিরক্ত চাপ পড়বে না। AI ব্যবহার করায় প্রতিদিন/প্রতি ঘন্টায় লাখ-লাখ কিংবা কোটিবার এক্সাম সম্পন্ন করা সম্ভব।
৩) চ্যাটজিপিটি টাইপ AI-গুলোর কারণে ডিজিটাল এক্সামের চিট করার সম্ভবনা থেকে যায়। এই চিট ধরার জন্য নানা ধরনের সিস্টেম নিয়ে বিশ্বব্যাপি কাজ চলছে। আমি নিজেও একটা এলগরিদম ডেভেলপ করেছি যেটা শতভাগ সফলতার সাথে চিটিং ধরতে পারে। প্যাটেন্ট করার পর এবিষয়ে ডিটেইল শেয়ার করতে পারবো। মূল বিষয় হচ্ছে, কপি-পেস্ট করে শিক্ষার্থীরা যাতে পার না পায়, সেই ব্যবস্থা করা সম্ভব।
৪) শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের স্কোর ও অন্যসব একটিভিটি মনিটর করতে থাকা AI যখন মনে করবে কোন একজন শিক্ষার্থী তার বর্তমান লেভেল থেকে পরের লেভেলে যাওয়ার উপযোগী হয়েছে, তখন সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে নোটিফাই করা হবে। শিক্ষক তখন আরো কয়েক ধরনের কয়েকটা এক্সাম ও ভাইবা নিয়ে নিশ্চিত হয়ে প্রমোশন দিয়ে দিবে।
এই লেখায় অনেককিছু সংক্ষেপে লেখা হয়েছে, লেখা ছোট রাখার জন্য অনেককিছু বলা হয়নি।