এডুকেশন সিস্টেম কেমন হওয়া উচিত? (প্রথম পর্ব)
ক্লাশ-১ ২ ৩ ... ১০ ... ভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার, সেমিস্টার ১ ২ ৩... এসব কম কার্যকরী সিস্টেম। বিশেষ করে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে এসব আর চলবে না। নতুন একাডেমিক সিস্টেম দাঁড় করাতে হবে আমাদের। আমি একটা সিস্টেম নিয়ে দীর্ঘদিন ভাবছি। এর আগে বেশ কয়েকবার ফেসবুকে আর ব্লগে শেয়ার করেছিলাম, আমার পুরানো পাঠকরা হয়তো মনে করতে পারবেন। আবার বলি—
বর্তমান একাডেমিক সিস্টেমে একটা ক্লাশে সব সাবজেক্ট থাকে। সেই সাবজেক্ট ভালোভাবে বুঝার আগেই অনেক শিক্ষার্থী পরের ক্লাশে উঠে যায়। ফলে, তারা পরের ক্লাশের আরো কঠিন পড়া বুঝতে পারে না, পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এছাড়াও প্রচলিত পরিক্ষা পদ্ধতি অনেক দূর্বল। এতে যথাযথ মূল্যায়ণ সম্ভব না। আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে- শিক্ষার্থী কোন দিকে পটেনশিয়াল, সেটা সহজে ধরা যায় না। ফলে সময় নষ্ট হয়। এরকম অনেক সমস্যা আছে। তাই, এই শ্রেণী সিস্টেম এবং এক্সাম সিস্টেম তুলে দিতে হবে। এবং প্রতিটা বিষয়ের উপরে আলাদা করে লেভেল ডিজাইন করতে হবে। বিষয়টা এরকম হবে:
ক) বাংলা-১, বাংলা-২, বাংলা-৩ .... বাংলা-১০০
খ) ইংরেজী-১, ইংরেজী-২, ইংরেজী-৩ ... ইংরেজী-১০০
গ) জেনারেল ম্যাথ-১, জেনারেল ম্যাথ-২, জেনারেল ম্যাথ-৩ ... জেনারেল ম্যাথ-১০০
ঘ) হায়ার ম্যাথ-১, হায়ার ম্যাথ-২, হায়ার ম্যাথ-৩ .. হায়ার ম্যাথ-১০০
গ) পদার্থ বিজ্ঞান-১, পদার্থ বিজ্ঞান-২, পদার্থ বিজ্ঞান-৩ ... পদার্থ বিজ্ঞান-১০০
ঘ) রসায়ন-১, রসায়ন-২, রসায়ন-৩ ... রসায়ন-১০০
ঙ) জীববিজ্ঞান-১, জীববিজ্ঞান-২, জীববিজ্ঞান-৩ ... জীববিজ্ঞান-১০০
চ) একাউন্টিং-১, একাউন্টিং-২, একাউন্টিং-৩ ... একাউন্টিং-১০০
ছ) ভূগোল-১, ভূগোল-২, ভূগোল-৩ ... ভূগোল-১০০
জ) জ্যামিতি-১, জ্যামিতি-২, জ্যামিতি-৩ ... জ্যামিতি-১০০
ঝ) কমনসেন্স এন্ড এথিকস-১, কমনসেন্স এন্ড এথিকস-২, কমনসেন্স এন্ড এথিকস-৩ ... কমনসেন্স এন্ড এথিকস-১০০ (ইয়েস, এরকম একটা সাবজেক্ট খুব দরকার)
তো, সব সাবজেক্টরেই এরকম লেভেল ডিজাইন করা হবে। একটা বাচ্চা প্রথমে কমিউনিকেশন স্কিল গোত্রের সাবজেক্ট দিয়ে শুরু করবে। এই যেমন- বাংলা-১ ও ইংরেজী-১। দেখা গেল এক মাসের মাথায় বাচ্চাটা বাংলা-১ শেষ করে ফেলেছে, তখন তাকে বাংলা-২-তে প্রমোশন দেয়া হবে। ইংরেজী-১ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইংরেজী-২-তে সে যেতে পারবে না। প্রতিটা লেভেলের যে দায়িত্বে যে শিক্ষক থাকবেন, তিনি ঠিক করবেন বাচ্চাটা ঐ লেভেল শেষ করেছে কিনা। মিডটার্ম বা ফাইনাল টাইপ কোন এক্সাম না। শিক্ষক প্রতিটা বাচ্চাকে আলাদাভাবে মূল্যায়ণ করে প্রমোশন দিবেন। ম্যাথ-১ থেকে যে প্রমোশন পেল না সে ম্যাথ-২-তে যেতে পারলো না.. ফলে না বুঝে আগানোর যে সমস্যা, সেটা কেটে গেল।
এভাবে দেখা যাবে, একজন শিক্ষার্থী হয়তো জীববিজ্ঞানের লেভেল ১০ এ চলে গিয়েছে কিন্তু ম্যাথের লেভেল ৫ও পার হতে পারে নাই। সমস্যা নাই, সে জীববিজ্ঞানে আগাতে থাকুক।
পড়ালেখা নিয়ে তখন কেউ জিজ্ঞেস করবে না যে- তুমি কোন ক্লাশে পড়ো? বরং.. তোমার কী অবস্থা? উত্তর হতে পারে- 'আমি বাংলা-১৮, ইংরেজী-২২, জেনারেল ম্যাথ-৯, পদার্থ বিজ্ঞান-৩, রসায়ন-১৫ ও জীববিজ্ঞান-২৬ এ আছি.. বা এরকম। তাতে বুঝা যাবে, এই শিক্ষার্থী কোন দিকে শাইন করতে যাচ্ছে। কেউ রসায়ন আর জীববিজ্ঞানে মজা পাচ্ছে? আচ্ছা.. সে মেডিক্যালের দিকে এগিয়ে যাক। ইঞ্জিনিয়ারিং এর দিকের সাবজেক্টগুলো বাদ দিয়ে রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে বেশী সময় দিক। ফলে, সময় বাঁচবে এবং শিক্ষার এফিশিয়েন্সি বাড়বে। দ্রুত একজন শিক্ষার্থী তার পছন্দের কিংবা তার জন্য সুবিধাজনক দিকে পড়ালেখা শেষ করে ফেলতে পারবে।
যেকোন বয়সের যেকেউ যেকোন সাবজেক্টের লেভেল-১ থেকে শুরু করতে পারবে। এই যেমন একজন হয়তো রসায়ন, জীববিজ্ঞানে ভালো করে মেডিক্যাল ট্রাকে চলে গিয়ে ভালো ডাক্তারও হয়ে গেল। তার হঠাৎ ইচ্ছে হলো ব্যবসা বুঝবে। তাহলে একাউন্টিং-১ লেভেলে ভর্তি হয়ে যাবে। ব্যবসা বুঝার জন্য যেসব সাবজেক্ট দরকার হয়, সেগুলোর লেভেল-১ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে আগালো। কোন সমস্যা নাই! সকল লেভেল সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
এই শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়ালেখার সাথে বাস্তব জীবনের যোগ থাকবে, যাতে শিক্ষার্থী বুঝতে পারে কেন সে একাউন্টিং পড়ছে.. এটা কী কাজে লাগবে, কিভাবে লাগবে.. ইত্যাদি। এই সংযোগ তৈরি করার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা হতে পারে।