পথের গল্প (১)
দুইদিন ধরে ইপ্রাম'স ল (Yhprum's law) কাজ করতেছে (মার্ফি'স ল এর অপজিট)। এমনকি উবার পর্যন্ত কল করার পাঁচ/সাত মিনিটের ভেতরে হাজির (যেটা এখন রেয়ার ঘটনা)। রাইডার দেখি কিউট এক পিচ্চি ছেলে। ভাবলাম বয়স হয়তো ১৫/১৬ হবে, পরে জানলাম ২৭। আমার সাথে কিছু প্যাকেট ছিলো। এই ছেলে হাসি হাসি মুখে নেমে এসে নিজেই সব তুলে দিলো।
গাড়িতে উঠে সাধারণত কথা বলি না, নিজের চিন্তায় ডুব দেই বা বই পড়ি। এই পিচ্চিরে দেখে কৌতুহল জাগলো। জিজ্ঞেস করলাম- পড়ালেখা করো না? আমি সাধারণত সবাইকে 'আপনি' সম্বোধন করি; সে যেই হোক না কেন। এই ছেলেরে কেন তুমি করে বলা শুরু করেছি জানি না।
কথার ফাঁকে জানতে পারলাম প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত উবার ড্রাইভ করে। গাড়ির মালিকরে ৫৫% দিয়ে দেয়ার পর তার হাতে মাসে ৩০-৩২ হাজারের মত থাকে। ড্রাইভারের জব পেলে করবে কিনা জিজ্ঞেস করার পর এই তথ্য জানা গেল। ছেলেটার বক্তব্য হচ্ছে- জব করলে তো এত টাকা পাবে না। আবার উবারে যে স্বাধীনতা ভোগ করে সেটাও পাবে না। এবার সরাসরিই জিজ্ঞেস করলাম- ৬৪ জেলায় ঘুরে বেড়ানোর একটা ট্যুরে যেতে আগ্রহী কিনা। উবারে যত আয় করে, ততই দেব বললাম। আবার এত রাফ জার্নিও না। কোন একটা জেলায় ঢুকে যাওয়ার পর তো তেমন ড্রাইভ করতে হবে না আর। আগ্রহ দেখালেও কিছুটা দ্বিধাও দেখতে পেলাম।
দ্বিধার কারণটা একটু পরেই ধরা গেল। এই ছেলে ঢাকায় থাকে শুধুমাত্র উবার চালানোর জন্য। ফ্যামিলি থাকে ঝিনাইদহ। ঐদিকে ওয়ানওয়ে ট্রিপ পেলে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ফ্যামিলির সাথে কাটিয়ে আসে দুইদিন। ৬৪ জেলায় ঘুরতে বের হলে সেই সুযোগ মিলবে না ভাবছিলো হয়তো।
৬৪ জেলা ট্যুর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে টাউন-সেন্টারের আলাপ হলো। আন্তঃজেলা রাইডারদের জন্য টাউন-সেন্টারে কী সুবিধা আছে তার হালকা একটু ধারণা দিয়ে ওর মতামত জানতে চাইলাম। জিজ্ঞেস করলাম— 'তোমাদের জন্য আর কী করতে পারি আমরা?' জবাবে চমৎকার কিছু ইনসাইট পেলাম। হাজার হাজার ডাটা এনালাইসিস করে এবং থিওরী কপচিয়ে এধরনের ইনসাইট পাওয়া যায় না।
গন্তব্যে পৌঁছে গাড়ি থেকে আমার প্যাকেটগুলো সব লিফট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেল। বললাম— আবার দেখা হবে সুমন!