লাইট পলিউশন বা আলো দূষণ

বিজলি বাতির আবিষ্কার নিঃসন্দেহে বর্তমান সভ্যতার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। আলো তো আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই কৃত্তিম আলো এক প্রকার দূষণ সৃষ্টি করে আমাদের জন্য যেটাকে Light pollution বলা হয়। 'Light pollution is the presence of unwanted, inappropriate, or excessive artificial lighting', লাইট পলিউশন বুঝার জন্য উইকিতে দেয়া এই এক লাইনের সংজ্ঞাই যথেষ্ঠ।

লাইট পলিউশন আমাদের জীবন-যাপনে কিভাবে প্রভাব ফেলছে তা বুঝার জন্য আলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিলে ভালো। একদম সহজ ভাষায় যদি বলি—আলো হচ্ছে ঢেউয়ের মতন। মনে করেন একটা পুকুরে নানা সাইজের ঢেউ আছে। এক ইঞ্চি সাইজ ঢেউ থেকে শুরু করে এক কিলোমিটার উঁচু ঢেউ। কিন্তু আপনি পুকুরে নামলে শুধুমাত্র দেড় ফুট থেকে তিন ফুট পর্যন্ত ঢেউগুলো অনুভব করতে পারেন, বাকীগুলোর অস্তিত্বই দেখতে পান না। পানির ঢেউয়ের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব না হলেও আলোর ক্ষেত্রে এটা ঘটে। নানা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (wavelength) আলো আছে যার ভেতরে খুব সামান্যই আমরা দেখতে পাই। আপনার রিমোট কন্ট্রলোর ইনফ্রারেড লাইট (IR) আপনি খালি চোখে দেখতে পাবেন না কিন্তু মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে দেখলে দেখতে পাবেন। একইভাবে আলট্রা-ভায়োলেট আলোও আপনি দেখতে পাবেন না। এর মাঝামাঝি ওয়েভলেনথ এর আলো শুধু আমরা দেখতে পাই (ছবিতে দ্রষ্টব্য)।


আলো কিভাবে আমাদের ক্ষতি করে?

আলট্রা ভায়োলেট আলো যে ক্যান্সার সৃষ্টি করে, সেটা তো কমবেশী সবাই জানেন। আলট্রা ভায়োলেট আলোর ঠিক আগের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো হচ্ছে নীল আলো বা ব্লু-লাইট (blue light)। এই blue light আলট্রা ভায়োলেট লাইটের মত ক্যান্সার সৃষ্টি না করলেও আমাদের বায়োলজিক্যাল ক্লক বা Circadian Rhythms এর ক্ষতি করে। আমাদের শরীরে মেলাটনিন (melatonin) নামে একটা হরমোন আছে যেটা ঘুম আসার জন্য জরুরী। রাতের বেলায় যখন আপনি কৃত্তিম আলোর মাঝে থাকেন; যা blue light নির্গত করে, সেটা আপনার ঘুমের সংকেতবাহী হরমোন 'মেলাটনিন' নিঃসরণে বাঁধা সৃষ্টি করে। অন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোও তা করে, তবে blue light একটু বেশী করে। এজন্য দেখবেন দামী মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটার মনিটরে blue light প্রটেকশন মুড থাকে।

আপনি যখন রাতের বেলা কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করেন, কিংবা উজ্জ্বল আলোতে থাকেন, blue light তখন আপনার ঘুম আসার পথে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং আপনার বায়োলজিক্যাল ক্লক ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে দিতে থাকে যা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে। এছাড়াও টানা এসব আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে সেটা আমাদের রেটিনার ক্ষতি করে।

করণীয় কী?

একটানা কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার না করে ২০-২৫ মিনিট পর পর একটু বিরতি নিন, জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকান বা অন্যকিছু করুন।

আপনার কম্পিউটার মনিটর আর মোবাইলে যদি অপশন থাকে, তাহলে ঘুমানোর অন্তত তিন ঘন্টা আগে blue light প্রটেকশন অন করে দিন। সবচাইতে ভালো হচ্ছে ঘুমানোর তিন ঘন্টা আগে থেকেই এসব ডিভাইস বন্ধ করে দেয়া। এমনকি রুমের উজ্জ্বল আলোর বাতিগুলোও বন্ধ করে তুলনামূলক কম উজ্জ্বল আলো জ্বেলে নেয়া ভালো। তবে, এই কম উজ্জ্বল আলোতে পড়া বা কোন সুক্ষ কাজ করা আবার চোখের জন্য ক্ষতিকর।
ঘুমানোর সময় রুম গাঢ় অন্ধকার করে নিতে পারলে ভালো, অথবা হালকা গ্রীন বা রেড লাইট ব্যবহার করতে পারেন।

আবার সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই সম্ভব হলে সূর্য্যের আলোতে থাকুন কিছুক্ষন। অন্তত জানালা খুলে বাইরের উজ্জ্বল আলোর দিকে তাকিয়ে থাকুন কিছুটা। এটা আপনার Circadian Rhythms রিসেট করে রাতে সঠিক সময়ে ঘুম আসতে সাহায্য করবে।

আলোদূষণ কিভাবে আমাদের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত করছে তা নিচের ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবেন।


লাইট পলিউশন আরো নানা ভাবে আমাদের জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করছে। ইন্টারনেট থেকে এসম্পর্কে আরো জেনে নিতে পারেন।


ত্রিভুজ আলম

ত্রিভুজ আলম

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখালেখি

লেখকের আরো লেখা

ত্রিভুজ আলম কমিউনিকেশন স্কিল - ১

কিছু মানুষকে দেখবেন আপনার খুব ভালো লাগে আর কিছু মানুষকে বিরক্তিকর। কিছু মানুষ সহজেই আপনাকে সব বুঝিয়ে দিতে পারে আর কিছু মানুষ সারাদিন কথা বলেও বোঝাতে প...

ত্রিভুজ আলম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল - একটি সফল বানিজ্যিক রহস্য!

মানুষ স্বভাবগত ভাবেই রহস্য প্রিয়। রহস্য প্রিয় মানুষেরা রহস্যের খোঁজে বের হয়ে যুগে যুগে পৃথিবীর জন্য অনেক কিছু করেছেন তাই রহস্যপ্রিয়তাকে মানুষের স্বভাব...

ত্রিভুজ আলম ভাইরাসমুক্ত নিরাপদ কম্পিউটার

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের ভেতরে এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর যিনি কখনো ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের পেছনে অনেক টাক...