ভালো নেটওয়ার্কিং করার জন্য যে কয়টা negative trait দূর করতে হয়, তার ভেতরে সবার উপরে থাকবে 'হিংসা'। লোকজনের সাথে শক্তিশালী কানেকশন তৈরিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এটা। আপনার ভেতরে হিংসা থাকার পরেও নেটওয়ার্কিং করতে পারবেন, কিন্তু সেগুলো হবে পুরোপুরি কমার্শিয়াল নেটওয়ার্ক। বেনিফিট ছাড়া কেউ আপনার কথা ভাববে না তখন। গভীর কানেকশন তৈরি হবে না।
আমরা নিজের বিশালত্ব উপলদ্ধি করতে পারি না বলেই হিংসা করি।
হিংসা করার মাধ্যমে লোকজন নিজেকে ছোট প্রমানীত করে। হিংসা করার কারণে যখন কেউ কারো পেছনে লাগে কিংবা অন্যদের কাছে তাকে ছোট করার চেষ্টা করে, তখন বুদ্ধিমান লোকেরা তাদের এই হিংসা ধরতে পারে। এটা লোকদের কাছে তাদেরকে আরো ছোট করে দেয়। কারণ, কেউ কখনো নিজের চাইতে ছোট কারো প্রতি হিংসা অনুভব করে না। আপনাকে যে হিংসা করছে, সে নিজেকে আপনার চাইতে ছোট ভাবে বলেই করছে।
অথচ, এই বড় ছোট হওয়ার ব্যাপারটা এরকম লিনিয়ার না। এগুলো মাল্টিডাইমেনশনাল ব্যাপার। কোন একটা ডাইমেনশনে একজনের স্কোর আরেকজন থেকে বেশী হতে পারে, কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। যে ডাইমেনশনে কেউ আপনার থেকে বড়, সেই ডাইমেনশনে আপনিও বড় হবেন যদি তার সাথে চলেন।
হিংসা মূলত তৈরি হয় জ্ঞানের অভাব থেকে।
মানে, তারা বুঝতে পারে না বলেই হিংসা করে। কারণ, যাকে যে কারণে আপনি হিংসা করছেন; তার সেই কারণটা আপনাকেও সমৃদ্ধ করার কথা। কোন একটা বিষয়ে আপনার স্কোর পাঁচ এবং আপনার বন্ধু বা পরিচিতজনের স্কোর যদি দশ হয়, সেটাতে মন খারাপের কিছু নেই। কারণ, অন্য আরেকটা বিষয়ে ঐ লোকের স্কোর পাঁচ আপনার দশ।
আবার, যে বিষয়ে আপনার স্কোর কম, সেটায় বন্ধুর স্কোরও আপনার সাথে যোগ হয়, প্যাসিভলি। এতে আপনার সার্বিক স্কোর বাড়ে।
আপনার সাথে কানেক্টেড কারো উন্নতি হলে সেটা প্যাসিভলি আপনার প্রোফাইলও বড় করে। যে বিষয়ে অন্যজন বড় হচ্ছে, সেই বিষয়ে আপনি বড় না হলেও। সবাইকে সব বিষয়ে বড় হতে হবে, এমনতো না। এমনকি দুইজনের বিষয়/ক্যারিয়ার একই লাইনে হলেও এটা আপনার জন্য ভালো। কারণ, তখন বড়জন আপনার উপরে উঠার পথ দেখাতে পারবে। এটা তাকেও সমৃদ্ধ করে, যা অনেকেই বুঝতে পারে না বলে হেল্প করতে চায় না।
আমি আজকে যেটুকু বড় হয়েছি, তাতে আমার বন্ধুদের অবদান আছে অনেক।
আমরা স্কুল লাইফ থেকে যে কয়টা বন্ধু সবচাইতে ক্লোজ, সেই সার্কেলের আমি বাদে বাকী সবগুলো দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছে, PhD করেছে এবং Google, IBM, Intel ও Ericsson-এ জব করে। আমি যখন Intel-এর মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার করি, তখন এটার ডিজাইন যারা করেছে তাদের ভেতরে আমার এক ক্লোজ বন্ধু আছে ভাবলে তো ভালো লাগে। গুগলের সেবাগুলো ব্যবহার করার সময় আমার আরেক ক্লোজ ফ্রেন্ড এর ইঞ্জিনিয়ারিং সাইডে কাজ করছে ভেবে আনন্দিত হই, প্রাউড ফিল করি। ওরা আমাকে অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে হেল্পও করে যা বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে বসে আমার পক্ষে পাওয়া সম্ভব ছিলো না।
আমি ছোটবেলা থেকেই প্রোগ্রামিং শুরু করেছি। ওরা আমার তৈরি ছোট ছোট সফটওয়্যারগুলো দেখে আনন্দিত হতো, প্রাউড ফিল করতো। আমরা সবসময় একে অন্যের সমৃদ্ধিতে আনন্দিত হয়েছি, প্রাউড ফিল করেছি।
ওরা আজকে যেখানে পৌঁছে গেছে, সেখানে আমাকেও নিয়ে যাওয়ার একটা আন্তরিক প্রচেষ্টাও সবসময় করে গিয়েছে। শিক্ষাজীবনে অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে ওদের সাথে বাইরে নিয়ে যেতে, সব বন্ধু একসাথে PhD করে বড় কোথাও জয়েন করতে বা বড় কিছু করতে। আমাদের ভেতরে হিংসা কাজ করেনি কখনো। ওরা এত বড় হয়েছে ওদের ভেতরে হিংসা নেই বলেই। বড় মানুশদের ভেতরে হিংসা কাজ করে না; কিংবা হিংসা কাজ করে না বলেই তারা বড় হয়।
হিংসা দুরত্ব বাড়ায়।
যাদের ভেতরে হিংসা আছে আপনি চাইলেও তাদেরকে আপন ভাবতে পারবেন না। এটা অন্যদের কাছে আপনার বেলায়ও সত্যি। আর হিংসা লুকিয়ে রাখা যায় না। কেউ সচেতনভাবে সেটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও কখনো না কখনো তার হিংসা বের হয়ে আসবেই।
যখন থেকে আপনি হিংসা মুক্ত হতে পারবেন তখন থেকেই সত্যিকার অর্থে আপনার নেটওয়ার্ক তৈরি হতে শুরু করবে। এবং সে নেটওয়ার্ক দীর্ঘস্থায়ী হবে।